অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সেই জাকির হোসেনের দুর্নীতির চিত্র
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২২:১০
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
রংপুর: রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাকির হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে।
আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েই প্রকাশ্যে বক্তৃতায় অর্থের বিনিময়ে একটি শিক্ষা প্রতিষ্টানে নিয়োগের প্রস্তাব দেন তিনি। বক্তৃতার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হলে তীব্র সমালোচনার ঝড়া ওঠে। জাকির হোসেন সম্পর্কে মিঠাপুকুর উপজেলায় অনুসন্ধান করে জানা গেছে, এর আগেও তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ছিল।
জানা যায়, এর আগে একবার উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে উপজেলার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টাকার বিনিময়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, জামায়াতের নেতা ও আত্মীয়-স্বজনকে নিয়োগ দেন তিনি। এছাড়া স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার গভর্নিংবডিসহ বিভিন্ন পদেও তিনি আত্মীয়দের স্বজনপ্রীতি ওঅর্থের বিনিময়ে পদ বণ্টন করেন।
জানা যায়, জাকির হোসেন ২০০৯ সালে জামায়াতপ্রার্থী আব্দুল মান্নানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে প্রথমবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই জড়িয়ে পড়েন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দুর্নীতিতে। বেপরোয়া দুর্নীতির কারণে উপজেলাজুড়ে তীব্র সমালোচিত হন তিনি। এরপর ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে অন্য জামায়াত প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন।
জাকির হোসেন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে জানা যায়, উপজেলা চেয়ারম্যান থাকার সময় তিনি ১১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলেন। এছাড়া ২০টিরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সদস্য ছিলেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদ কাজে লাগিয়ে তিনি একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি নিয়োগে দুর্নীতি করেন। জানা যায়, উপজেলার ১৪ নং দুর্গাপু্র ইউনিয়নের বাসিন্দা তার আপন ভাগ্নে জামায়াত নেতা কামরুল হাসানকে জীবনপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সভাপতি হিসাবে নিয়োগ দেন। একই ইউনিয়নের তার ভাই জাহিদ হাসানকে শঠিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নিয়োগ দেন। উপজেলার ৮ চেংমারী ইউনিয়নে ডাবরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেন তার বড় বোনকে। ১১ নং বড়বালা ইউনিয়নের গুটীবাড়ী মাদ্রাসায় জামায়াতের রোকন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহির হত্যার অন্যতম আসামিকে সুপার পদে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেন।
এছাড়া শিক্ষক নিয়োগেও ব্যাপক নিয়োগ বাণিজ্যের চিত্র উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। উপজেলার ১৫ নং বড় হজতপুর ইউনিয়নের সেরুডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজে টাকার বিনিময়ে জামায়াত-বিএনপির কর্মীকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেন তিনি। ১৩ নং শাল্টি গোপালপুর ইউনিয়নের হামিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৫ টি পদেও ব্যাপক নিয়োগ বাণিজ্য করেন জাকির হোসেন। ১৪ নং দুর্গাপু্র ইউনিয়নের শঠিবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে ১০টির বেশি নিয়োগ দেন বলে উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। এছাড়া, ১০ নং বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের সন্তোষপুর মাদ্রাসায় জামায়াতের ৫ জন সমর্থককে টাকার বিনিময়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজে নৈশ্য প্রহরী, দফতরী পদে জনপ্রতি কমপক্ষে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন জাকির হোসেন। এছাড়া মিঠাপুকুর উপজেলায় ২০১৪ সালের জামায়াত-বিএনপি’র জামায়াত বিএনপির আসামিদেরও তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
সারাবাংলা/আইই