Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অভিজিৎ হত্যার চার বছর, শুরু হচ্ছে বিচার


২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৮:১১

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: মুক্তমনা ব্লগার ও বিজ্ঞান মনস্ক লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার চার বছর আজ মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি)। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার চার্জশিট অনুমোদনের জন্য গত ১৮ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই আদালতে দাখিল করা হবে। এরপরই বিচার কাজ শুরু হবে।

পরিবারের প্রত্যাশা , দেরিতে হলেও বিচার পাবেন এই হত্যাকাণ্ডের।  আর পুলিশ বলছে, মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়ে গেলে বিচারকাজ শেষ হতে আর বেশি সময় লাগবে না।

সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) কাউন্টার টেরোজিম ইউনিটের উপ-কমিশনার মুহিবুল ইসলাম বলেন, ‘অভিজিৎ রায়কে হত্যার পেছনে আনসার আল ইসলামের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়।  এ ধরনের হত্যার চার্জশিট দিতে একটু বেশি সময় লাগে।  এই মামলার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।  দীর্ঘ তদন্তের পর ১২ জনের জড়িত থাকার পাওয়া গেলেও সঠিক নাম ঠিকানার অভাবে মাত্র ৬ জনের নামে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ’

একজন বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে উল্লেখ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাকি ৫ জনের নাম-ঠিকানা না মেলায় আপাতত চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যদি কখনো তাদের নাম ঠিকানা পাওয়া যায়, তবে পরে অন্তুর্ভুক্ত করা হবে।’

আরও পড়ুন: শিগগিরই অভিজিৎ হত্যা মামলার চার্জশিট

চার্জশিট দেওয়ার পর বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার বলেও মন্তব্য করেন মুহিবুল ইসলাম।  তিনি বলেন, ‘এখন চার্জ গঠন হবে। এরপর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে। আগেই আসামিদের অনেকেই ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।  সেগুলো বিবেচনায় এনে খুব বেশি সময় লাগবে না। ’

জানতে চাইলে অভিজিতের ছোট ভাই অনুজিৎ রায় বলেন, ‘আমরা তো হত্যাকারীদের বিচারের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। চার্জশিট হবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান ছিলাম।  এখন দেখলাম চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।  চার্জশিট দেওয়ায় মনে হচ্ছে, আগে হোক আর পরে হোক বিচার একদিন পাবোই। ’

বিজ্ঞাপন

অনুজিৎ রায় বলেন, ‘চারটি বছর ভাইকে হারানোর পর পুরো পরিবার আতঙ্কে কাটাতে হয়েছে। চলাফেরা সীমিত ছিল সবার। এরপরও জীবনের প্রয়োজনে সবকিছু করতে হয়েছে।’

যেভাবে হত্যাকাণ্ড
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসির সামনে জঙ্গিরা কুপিয়ে হত্যা করে লেখক অভিজিৎ রায়কে।  অভিজিৎকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকেও এলোপাথাড়ি কোপায় জঙ্গিরা।

হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিজিৎ রায়কে হত্যার জন্য জঙ্গিরা একটি কিলিং স্কোয়াড গঠন করে।  তথ্য অনুযায়ী হত্যার দুই মাস আগে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ইনটেলিজেন্স ও কিলার গ্রুপ এলিফ্যান্ট রোডে একটি বাসা ভাড়া করে মারকাস বা অপারেশন হাউস হিসেবে।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সেখান থেকেই মূলত জঙ্গিরা  অভিজিৎকে রেকি করা শুরু করে। এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় প্রথম জাগৃতি প্রকাশনীতে অভিজিৎকে দেখে। সেখান থেকে  অভিজিৎ ধানমন্ডির একটি কফি হাউজে যান। পেছন পেছন জঙ্গিরাও যায়। ওইদিনও তারা অভিজিৎকে কিছু করেনি।’

আরও পড়ুন: ৪৫ বারও দাখিল হলো না ব্লগার অভিজিৎ হত্যার মামলায় প্রতিবেদন

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে ২৩, ২৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি  অভিজিৎকে রেকি করে জঙ্গিরা। এরপর ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।  ঘটনার সময় মুকুল রানা কিলার গ্রুপে ছিল।  আশেপাশে ছিল মেজর জিয়া, সায়মন।  কিলার ও ইনটেলিজেন্স দুই গ্রুপেই ছিল সোহেল রানা ও আরাফাত।

উল্লেখ্য, অভিজিৎ রায় ও রাফিদা আহমেদ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। অভিজিৎ ছিলেন ‘মুক্তমনা’ ব্লগের সম্পাদক ও লেখক। ২০০৭ সালে ‘কুসংস্কার ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে’কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জাহানারা ইমাম পদক পান তিনি। অভিজিৎ  বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায়ের বড়ছেলে।  রাফিদা আহমেদ লেখালেখি করেন বন্যা আহমেদ নামে।

বিজ্ঞাপন

অভিজিৎ রায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পাস করার পর সেখানে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন।  হত্যাকাণ্ডের আট বছর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান।  সেখানে একটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার প্রকৌশলী তিনি।  ২০০৮ সালে তিনি রাফিদা আহমেদ বন্যাকে বিয়ে করেন।  ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্ত্রীকে নিয়ে দেশে আসেন অভিজিৎ।

সারাবাংলা/ইউজে/এমএনএইচ

অভিজিৎ রায় আইন-বিচার

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সিটিকে রুখে দিল নিউক্যাসেল
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৮

সম্পর্কিত খবর