Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গরিবের দুম্বার মাংস হিমাগারে; কেঁচো খুঁড়তে সাপ


২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:১০

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা : র‌্যাবের কাছে তথ্য ছিল তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় বেশ কয়েকটি হিমাগারে অনেক দিন ধরে মাংস মজুদ রাখা হয়েছে, সেগুলো পচে গন্ধ বের হয়েছে। এরপরেও সেগুলো ফেলে না দিয়ে দিব্যি বিক্রি করে যাচ্ছে। আর রাজধানীর নামীদামি যতো ব্রান্ডের সুপার শপ ও ফার্স্ট ফুডের দোকান রয়েছে তারাই মূলত এসব পচা মাংস ও অন্যান্য দ্রব্যাদি ক্রয় করছে। সিদ্ধান্ত মতে সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত অভিযান চালায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত। নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।

বিজ্ঞাপন

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সারাবাংলাকে বলেন, অভিযান শুরুর সময় মনে হয়েছিল পচা মাংস আর কতটুকু মজুদ রাখতে পারে। কিন্তু হিমাগারগুলোতে প্রবেশের পর চোখ উল্টে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হলো। পচা মাংসের গন্ধে সেখানেই থাকাই মুশকিল হয়ে গেলো। থরে থরে সাজানো মাংস আর মাংস। মনে হচ্ছিল, সারাদেশের মাংস মনে হয় এসব কারখানা থেকে সরবরাহ করা হয়। পরিমাণ এতোটাই বেশি ছিল। মহিষের মাংস, দুম্বার মাংস, খাসির মাংস, গরুর মাংস সবই ছিল পচা অবস্থায়। সেখানে যে রক্তগুলো রয়েছে সেগুলোও দুর্গন্ধে ভরা।

তিনি বলেন, এতো দুম্বার মাংস কোথা থেকে এসেছে তা জানা যায়নি। একই সাথে সামুদ্রিক ও দেশি অনেক প্রকার মাছ পাওয়া যায়। যেগুলোর প্যাকেটের গায়ে কোনো তারিখ নেই। মজুদের তারিখ অথবা মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ কোনটাই নেই। পাওয়া যায় এক বছর আগের সবজিও। সব মিলিয়ে ৫০০ মণ দুম্বা, ৩০০ মণ মহিষের মাংস, ১২০০ মণ পচা খেজুর ও ১০০ মণ কিসমিস জব্দ করা হয়। পঁচা মাংস ও দ্রব্যাদি রাখার অভিযোগে ১৭ টি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ১৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে। হিমাগারগুলোকে আপাতত সিলগালা করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অভিযানে সহযোগিতায় থাকা র‌্যাব-২ এর অপারেশনাল কমান্ডার এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, রাজধানীর নামিদামী সুপার শপ আগোরা, স্বপ্ন, মিনা বাজারসহ বেশ কয়েকটি সুপার শপে এসব হিমাগার থেকে মাছ ও মাংস পৌঁছানো হয়ে থাকে। এছাড়া রাজধানীর অন্তত ৩০০টির মতো ছোট বড় ফার্স্ট ফুডের দোকানে এখান থেকে মাংস ও মাছ সরবরাহ করা হয়। যারা এসব হিমাগার থেকে মাংস মাছ কেনে তাদের অন্তত ২৭০ টি দোকানের নামে করা মেমো পাওয়া গেছে। এসব পচা মাংস দিয়েই চাপ, কাবাবসহ বিভিন্ন খাদ্য তৈরি হয়ে থাকে।

এখান থেকে কেনার কারণ কি জানতে চাইলে র‌্যাবের পুলিশ সুপার বলেন, বাজারে তাজা মাংস কিনতে লাগবে ৫০০ টাকা। এখানে কিনলে মাত্র ৩০০ টাকায় কিনতে পারছে। সামুদ্রিক মাছ যেখানে ৪০০ টাকা কেজি লাগে সেখানে মাত্র ২০০ টাকায় কিনতে পারছে। ফার্স্টফুডের দোকানগুলো অল্পতেই বেশি লাভ করতে পারছে। আবার হিমাগারগুলো কমে দিতে পারছে, তার কারণ বেশির ভাগই তো চুরি করা মাংস। দুম্বার মাংস কিনেছে হয়তো অল্প দামের কোনো কর্মকর্তার কাছে। আবার মহিষের মাংস বিচ্ছিন্নভাবে কম দামে সংগ্রহ করেছে। এমনও হতে পারে তারা মরা গরু মহিষের মাংস সংগ্রহ করেছে। যদিও বিষয়টি তদন্ত চলছে।

৫০০ মণ দুম্বার মাংস কোথা থেকে এসেছে জানতে চাইলে র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম এর উৎস জানাতে পারেননি।

তবে র‌্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, দুম্বার মাংসগুলো কোরবানির ঈদের পর সৌদি থেকে আসা। সেগুলো গরীব মানুষের জন্য বিলি করা মাংস ছিল। কিন্তু সেখানে (হিমাগারে) কিভাবে এলো এসব মাংস তা ভাবিয়ে তুলছে র‌্যাবের গোয়েন্দাদের। কোথা থেকে কিভাবে হিমাগারে গরীব মানুষের জন্য বিলি করা দুম্বার মাংস হিমাগারে গেছে, তা বের করার জন্য র‌্যাব কাজ করছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তেজগাঁওয়ে অভিযান চালানো শিকাজু ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, দেশি সুপার এগ্রো লিমিটেড, ফার্ম অ্যান্ড ফার্মা হিমাগার এবং সেন্টমার্টিন ফিশারিজে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রায় এক ঘণ্টা পর শিকাজু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সামনে কথা হয় ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করা সাইফুল ইসলামের সাথে।

সাইফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, মাংসগুলো অনেক দিন আগের। পরিমিত হারে বিক্রি না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে এসব মাংস পড়ে ছিল। কয়েকদিন আগে দাম কমানোর ফলে কয়েক কোটি টাকার মাংস বিক্রি হয়েছে। এরপরেও শত শত মণ মাংস পড়েছিল। গন্ধ বের হওয়ায় নিজেদের মধ্যেও কেউ মাংসে হাত দিতো না। আমরা নিজেরাও রাজধানীর অনেক দোকানে মাংস দিয়ে এসেছি। ভালো মাংসের সাথে খারাপ মাংস মিশিয়ে কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে অনুষ্ঠানে চালানো হতো। যারা বাবুর্চির কাছে কন্ট্রাকে খাওয়া চুক্তি করে তাদের বেলায় এসব পচা মাংস বেশি যেতো বলেও জানান সাইফুল ইসলাম।

আগোরার শান্তিনগর শাখার সহকারী ম্যানেজার মাহফুজ শান্ত সারাবাংলাকে বলেন, আমরা নিজেরা কোনো পণ্য ক্রয় করি না। আবার কোনো পণ্য নিজেরা সুপার শপে নিয়ে আসি না। কেন্দ্রীয়ভাবে পিকাপ ভ্যানে করে সুপার শপে পণ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তাই কোনটি পচা বা কোনটি ভালো তারা বুঝতে পারেন না।

কথা হয় বেইলী রোডের নবাবী ভোজের ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোনো হিমাগার থেকে মাছ মাংস আমরা ক্রয় করি না। বাজার থেকে তাজা মাছ মাংস সংগ্রহ করা হয়। দিনে যা লাগে তাই কেনা হয়। বাড়তি কোনো কিছু ক্রয় করা হয় না। হিমাগারের পচা মাংস কোথায় যায় তা জানেন না তিনি।

সারাবাংলায় পড়ুন : ১৫শ’ মণ পচা মাছ-মাংস জব্দ, ২০ লাখ টাকা জরিমানা

সারাবাংলা/ইউজে/এসএন

অভিযান মাংস হিমাগারে র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালত

বিজ্ঞাপন

বিদেশ বিভুঁই। ছবিনামা-১
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর