Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বসন্তে বৃষ্টি, ক্ষতির মুখে রবিশস্য – ধানে আশীর্বাদ


২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৬:৫১

।। এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: টানা দু’দিনের বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন রবিশস্য চাষীরা। বসন্তের এই বৃষ্টিতে রবি শস্যের মধ্যে আলু, মিষ্টি আলু, শাক-সবজি, মুগ, খেসারি, মসুর, মাসকলাই, মটর, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ধনিয়া ও কালোজিরা উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এরই মধ্যে ক্ষতির মুখোমুখি আলু চাষীরা। বৃষ্টির কারণে আলু উত্তোলনে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। আরও দু’দিন এই বৃষ্টি থাকলে নিচু জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। ফলে মাঠেই নষ্ট হতে পারে এই মৌসুমের আলু। তবে অসময়ের বৃষ্টি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে ধান চাষীদের জন্য। বোরো মৌসুমের মাঝামাঝিতে এই বৃষ্টি ধান উৎপাদনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মীর নুরুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি। দেশের কোনো অঞ্চল থেকে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য আসেনি।’

প্রতিষ্ঠানটির সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক আলহাজ্ব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে বৃষ্টিতে কোনো ধরনের ক্ষতি হবে না। যেহেতু ভারি বৃষ্টি হয়নি, আগামী দু’দিন একই রকম বৃষ্টি হলেও ক্ষতির শঙ্কা নেই।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৃষি সম্প্রসারণের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘রবি মৌসুমে যেসব ফসল তোলা শুরু হয়েছে, বৃষ্টির কারণে ওই সব ফসলের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। কারণ ফসলের কাটার সময় শুষ্ক আবহাওয়া প্রয়োজন হয়। এই সেই আবহওয়া নেই।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই বৃষ্টি কৃষকের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। চলতি মৌসুমে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। ধান চাষের ক্ষেত্রে প্রচুর পানি দরকার। আর বোরো আবাদের ক্ষেত্রে সেচ ব্যবস্থাই প্রধান সমস্যা। ফলে এ সময় বৃষ্টির কারণে ধান চাষীরা উপকৃত হবে।’

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আরও দু’দিন ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর রাত থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। আবহাওয়ার এই বৈরী আচরণ থাকবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই সময়ে কাল বৈশাখী ঝড়, বৃষ্টি ও শিলা বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সারাদেশে বইতে পারে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া।

আবহাওয়া অধিদফতরের মহাপরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ সারবাংলাকে বলেন, ১ মার্চ থেকে রোদের মুখ দেখা যাবে। ২ ও ৩ মার্চও রোদ থাকবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, রবি শস্যের মধ্যে এখন আলু, মিষ্টি আলু, শাক-সবজি, মুগ, খেসারি, মসুর, মাসকলাই, মটর, অড়হর, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ধনিয়া ও কালোজিরার তোলার সময়। এসব ফসল এখন চূড়ান্ত ফলন পর্যায়ে। কোনো কোনো শস্যের শতকরা ৬০ ভাগের বেশি ঘরে তুলে ফেলেছেন চাষীরা।

চলতি মৌসুমে ৪ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৯৯ লাখ ৯৬ হাজার মে. টন। আলুর চাষ হয়েছে ৪ লাখ ৬৯ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ১ লাখ ৮৬ হাজার হেক্টর জমির আলু মাঠ থেকে তোলা শেষ হয়েছে। ৪০ শতাংশ জমির আলু উত্তোলন শেষ হলেও বাকি রয়েছে অর্ধেকের বেশি। মাঠে থেকে যাওয়া আলুর ক্ষতির শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।

এদিকে, চারা পেঁয়াজের কর্তন শেষ হয়েছে শতকরা ২০ ভাগ। ৬৮ ভাগ জমি থেকে কন্দ পেঁয়াজ তোলা হয়েছে। ফলে পেঁয়াজের উৎপাদনেও কিছুটা বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। সরিষা চাষীদের রয়েছে শেষ সময়ের ব্যস্ততা। তবে এখনো মাঠে রয়েছে শতকরা ৪০ ভাগ সরিষা। ৩ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর জমি থেকে ৪ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হয়েছে। রবি শস্যের মধ্যে এখনো কর্তন শুরু হয়নি গম, ভুট্টা, মটর, চীনা বাদাম, তিল, সয়াবিন ও সূর্যমুখী। এসব ফসলও বৃষ্টিতে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

হাওর অঞ্চলের ৭ জেলার ৪ লাখ ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ ভাগ বেশি জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। সারাদেশে ৪৮ লাখ ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবাদ হয়েছে ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ১ কোটি ৯৬ লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন বোরো চাষীদের ঘরে ওঠার কথা।

এই প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, হাওরের ৭ জেলায় কেবল মুটিং শুরু হয়েছে। আরও অন্তত দেড় মাস পরে কাটা শুরু হবে। দেশের বাকি জেলাগুলোতে বোরো ধান কেবল পোক্ত হতে শুরু করেছে। আবাদের ক্ষেত্রে কোনো কোনো অঞ্চলে প্রচুর পানির দরকার ছিল। ফলে ফাগুনের এই বৃষ্টি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে বোরো চাষীদের জন্য।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার কৃষক হিমেল কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘বুধবার আলু উত্তোলনের কথা ছিল। কিন্তু দু’দিনের বৃষ্টিতে আলু ক্ষেতে পানি ভেজে গেছে (জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে)। ক্ষতি বলতে আরও দুই-তিন দিন যদি বৃষ্টি থাকে তাহলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে। ক্ষেতেই অনেক আলু পচে যেতে পারে। তবে ধান চাষের জন্য এই বৃষ্টি ভালো।’
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মো. মোস্তাফা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ধানের অবস্থা মোটামুটি ভালোই। বৃষ্টি হওয়ায় আর একটু ভালো হয়েছে।’

মানিকগঞ্জ থেকে সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট রিপন আনসারী জানিয়েছেন, বৃষ্টির কারণে এখনো মাঠে থাকা আলুর তেমন ক্ষতি হয়নি। ভালো ফলনের আশায় আছেন কৃষকরা।

ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের আব্দুল করিম এ বছর ৫০ বিঘা জমিতে গোল আলুর আবাদ করেছেন। তিনি জানান, তার ক্ষেতে এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছে। এখনো ক্ষেত থেকে আলু তোলা হয়নি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তোলা হবে। দুই-এক দিনের বৃষ্টিতে আলুর তেমন ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা নেই। তবে যদি টানা বৃষ্টি হতে থাকে তাহলে ক্ষতি হবে।

একই গ্রামের মোন্নাফ মিয়া প্রায় ৬ বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। তার ক্ষেতের আলুতে পচন ধরেনি বলে জানান মোন্নাফ। তবে বৃষ্টিতে আলু গাছের গোড়া নরম হয়ে গেছে। বৃষ্টি আরও দীর্ঘায়িত হলে আলু পচে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

সারাবাংলা/এটি/এসএন

বৃষ্টি রবিশস্য


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর