মুক্তিযোদ্ধাদের ভিটায় ঘর করে দেবে সরকার: পরিকল্পনামন্ত্রী
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৫:০৩
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প থেকে সরে এল সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের দাবীর প্রেক্ষিতেই এ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
মন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের দাবী ছিল ফ্ল্যাট না দিয়ে নিজস্ব ভিটায় একই টাকা খরচ করে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার। সেজন্য এখন নতুন করে ঘর নির্মাণ প্রকল্প নেয়া হবে। যাদের ভিটা নেই তাদের পাশ্ববর্তী খাস জমিতে ঘর করে দেয়া হবে।’
বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে একনেক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এর আগে সকালে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
মন্ত্রী জানান, এখন থেকে যেসব সেতু বা অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে সেগুলো স্থানীয় কোনো মুক্তিযোদ্ধা বা পন্ডিত ব্যক্তির নামে তাদের নামকরণ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তা না হলে নদীর নামে নামকরণ করতে হবে।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে একাধিক প্রকল্প ওভারলেপিং না করতে উচ্চক্ষমতার একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের জনবলের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা পুন:নির্ধারণ এবং প্রকল্পের সংযুক্ত জনবলের বিশেষ ভাতা প্রদানের বিষয়ে একটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হলেও সেজন্য আলাদা কোনো ব্যয় বাড়ছে না। এতে প্রকল্প খরচ ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকাই থাকছে। অর্থাৎ রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যারা কাজ করেছেন তাদের বর্তমান বেতনের অর্ধেক ভাতা হিসাবে বাড়তি পাবে। তবে, বেতন বাড়লেও ভাতা না বাড়ার বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপন করা হয় এর অনুমোদন বাতিল করার জন্য। কেননা ২ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা খরচের এ প্রকল্পটি বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নতুন প্রকল্প নেয়া হবে। ফলে এ দুটি প্রকল্পের খরচ মোট প্রকল্প খরচের সঙ্গে যোগ করা হয়নি।
একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন স্থাপন প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৩ হাজার ৩২২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ, খরচ হবে ৮৪৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়কে পায়রা নদীর উপর পায়রা সেতু (লেবুখালী সেতু) নির্মাণ, খরচ ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ফেনী-নোয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের ২ লেন অংশে (মহিপাল হতে চৌমুহনী পূর্ব বাজার পর্যন্ত)-৪ লেনে উন্নীতকরণ, খরচ হবে ৭৪৭ কোটি টাকা। মোংলা বন্দরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি/সরঞ্জাম সংগ্রহ,খরচ হবে ৪৩৫ কোটি টাকা। ঢাকা শহরে ডাক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, খরচ ৩৭৬ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা/জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিস্কাষন উন্নয়ন, খরচ হবে ১ হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। কুড়িগ্রামের চিলমারী ও উলিপুর উপজেলায় ব্রক্ষ্মপুত্র নদের ডানতীরে ভাঙ্গনরোধ, খরচ ৩০২ কোটি টাকা। সোনাগাজী ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল সংযোগ সড়কে ফেনী নদীর উপর সেতু নির্মাণ, খরচ ৬৬২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ, খরচ ২৬৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সক্ষমতা বৃদ্ধি, খরচ ১ হাজার ৫৩৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা এবং গোপালগঞ্জ এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের তৃতীয় শাখা কারখানা স্থাপন প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৭৯৯ কোটি টাকা।
বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্প। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হবে ১২ হাজার ৪৫৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৯ হাজার ৪৮১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১৫৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২ হাজার ৮২৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা খরচ করা হবে।
সারাবাংলা/জেজে/জেএএম