প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা সাড়ে ৪ বছর পিছিয়ে: বিশ্বব্যাংক
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৭:৩৯
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: প্রাথমিক শিক্ষা জীবনের ১১ বছরের মধ্যে সাড়ে চার বছর পিছিয়ে থাকছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। গুণগত শিক্ষা ব্যবস্থা ও মানসম্মত স্কুলের অভাবেই মুলত তারা পিছিয়ে রয়েছে। অথচ দেশে প্রাথমিকে যে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে তা সাড়ে ছয় বছরেই অর্জন করা সম্ভব।
বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংকের ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৮: লার্নিং টু রিয়ালাইজ এডুকেশনস প্রমিস’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের যা শেখানো হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়। মানসম্মত স্কুলের অভাবে তা হচ্ছে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী কোন রকম অংকে পাস করতে পারে।
বাকি ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই পাঠ্যবইয়ের গণিত বোঝে না। আর তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা পড়তে পারে। বাকি ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা বই পড়তে পারে না।
অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হেলসি রগার্স ও প্রতিষ্ঠানটির এডুকেশন গ্লোবাল প্রাকটিস বিভাগের প্রাকটিস ম্যানেজার ক্রিস্টিয়ান এডো।
প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে তারা জানান, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুর সুস্থ বিকাশ বিষয়ক কারিকুলামের অভাব রয়েছে। শিক্ষকদের পাঠ দানের পদ্ধতিও নিম্নমানের। অদক্ষ স্কুল ব্যবস্থাপনা ও তাতে দারিদ্রের ছাপও শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে জানান তারা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনভিজ্ঞ প্রশিক্ষক, শিক্ষা উপকরণ ও স্কুল ম্যানেজমেন্টই প্রাথমিক শিক্ষায় বর্তমানে প্রধান বাধা। স্কুলে শিক্ষকদের উপস্থিতি সম্পর্কে সরকারকে নজর দিতে হবে। শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। দেশের শ্রম শক্তিকে আরও উন্নত করতে হবে। বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে উচ্চশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ দিতে এবং উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হবে।
সমস্যা সমাধানে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে তিনটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেসব সুপারিশের মধ্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শিক্ষার মান মূল্যায়ন করতে হবে। এছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষকদের মান বাড়াতে হবে। প্রাক-প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও শিক্ষার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের অ্যাক্টিং কান্ট্রি ডিরেক্টর রবার্ট জে সাম বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে সরকারি বিনিয়োগ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম এবং মালেশিয়ার অর্ধেক। এটি সামগ্রিক খরচ না হলেও ওই অর্থ কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তা ভাবতে হবে। শিক্ষা খাতের বাজেটের পুরো অর্থ কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষায় সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে। বর্তমানে শিক্ষা খাতে বাজেটের ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা জিডিপির ২ শতাংশ।
তিনি বলেন, গত এক বছরে ২ লাখ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সরকার এখন মানসম্মত শিক্ষার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের জন্য সরকারি বিদ্যালয়গুলো আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। মেধাবীরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার উন্নয়নে সরকারসহ সকলের সচেতনতা ও দায়িত্ব রয়েছে। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে বর্তমান সরকার তা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, দা লিগো ফাউন্ডেশনের সহ সভাপতি সারাহ বুচি, বিশ্বব্যাংকের এডুকেশন গ্লোবাল প্যাকটিসের সিনিয়র ডিরেক্টর জাইমা সাভিদ্রা।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমএইচ/জেডএফ