Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তোপের মুখে জিএম কাদের ও রাঙ্গাঁ


২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:১৪

কাদের ও রাঙ্গাঁ

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তোপের মুখে পড়েছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ।

বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাপার বনানী কার্যালয়ে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন আসন থেকে আসা প্রার্থী ও দলটির নীতি-নির্ধারকরা অংশ নেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দুই মাস পর এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ১৭২ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৫৮ জন। সভা থেকে বের হয়ে উপস্থিত প্রার্থীরাও এ স্বল্পসংখ্যক উপস্থিতিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকেলে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে সভা চললেও তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জেলা থেকে আগত বিভিন্ন প্রার্থীরা। যারা মতবিনিময় সভায় অংশ নেন তারাও সভায় উপস্থিত পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁর প্রতি বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তারা বলেন, নির্বাচনের সময় কেন্দ্র থেকে কোনো খোঁজ-খবর নেওয়া হয়নি। এমনকি দলটির নেতৃত্বে থাকা নেতারা পার্টির প্রার্থীদের ফোন রিসিভ করারও প্রয়োজন মনে করেননি। কিছু কিছু বক্তা মহাজোটে কম আসন পাওয়ার জন্য দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁকে দায়ী করেন।

পঞ্চগড়-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী আবু সালেহ তার বক্তব্যে বলেন, বিগত নির্বাচনে দলের শীর্ষনেতারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন, তাদের এ দায়িত্বহীনতার জন্য আমি ব্যথিত। এমনাবস্থায় হয়ত আমি এ পার্টি আর করব না। তিনি জাপার বর্তমান নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

বিজ্ঞাপন

মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জহিরুল আলম রুবেল বলেন, প্রতিটি নির্বাচনের সময়ই নেতৃত্ব নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়। স্বার্থান্বেষী মহলরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এসব ষড়যন্ত্রের কারণেই তৃণমূল ধ্বংস হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামীতে ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি করাও কঠিন হবে।

হবিগঞ্জ জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক শংকর পাল পার্টির মহাসচিব রাঙ্গাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘মহাজোটে আমাদের ৪৫টি আসন দেওয়ার কথা ছিলেন। কিন্তু আপনি মহাসচিব হওয়ার পর এ আসন ২৫টিতে নেমে এসেছে।’

এ সময় রাঙ্গাঁ তার বক্তব্যের উত্তরে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমি মহাসচিব হওয়ার আগেই তা ঠিক করা হয়েছে।’

টাঙ্গাইল মির্জাপুর থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, মনোনয়ন ও পদ বাণিজ্যে আমরা আজ দিশেহারা। সামাজিক মর্যাদা ও দলে কোনো রকমের অবদান না থাকলেও টাকার বিনিময়ে নমিনেশন ও বড় বড় পদ দেওয়া হয়। এ ধারা থেকে বের হওয়ার নিশ্চয়তা না পেলে আমরা রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াব।

সাতক্ষীরা থেকে আবু মতলুব লিয়ন উপস্থিত প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা কোমর সোজা করে দাঁড়ান। ভয় পেলে চলবে না। সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।’

তখন জিএম কাদের তাকে বলেন, ‘তুমি তোমার কথা বলো।’

জবাবে লিয়ন বলেন, ‘আমার কথা যদি পছন্দ না হয় তাহলে বলেন পার্টি ছেড়ে চলে যাই।’

জাপার যুগ্ম-মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু বলেন, ‘আমাদেরকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে আবার প্রত্যাহার করানো হলো। নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে ফরম বিক্রয় ও পার্টির চাঁদা বাবদ ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা আয় হয়েছে। সেখান থেকেও আমরা যারা পার্টির ত্যাগী নেতারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি তাদের কিছু কিছু করে টাকা দিতে পারত।

বিজ্ঞাপন

রাজু বলেন, ‘যেখানে এরশাদ সাহেব অসুস্থ, সেখানে কোনো প্রয়োজনে দলের মাঝে বড় বড় প্রমোশন দেওয়া হচ্ছে। দলের মাঝে কোনো শৃঙ্খলা না থাকার কারণেই এগুলো হচ্ছে বলে মনে করি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ৫ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কাজী মামুন বলেন, ‘যা হওয়ার হয়েছে। এখন দলকে উজ্জীবিত করার প্রশ্নে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদসহ বিভিন্ন স্থানে পার্টির ত্যাগী নেতাদের কীভাবে মূল্যায়িত করা যায় সে বিষয়ে নীতিনির্ধারবদের ভূমিকা নিতে হবে।’

সভার শেষ পর্যায়ে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘সকলের মাঝেই কিছু রাগ-ক্ষোভ থাকতেই পারে। আগামীতে সবাইকে নিয়ে দল গুছিয়ে পার্টিকে ক্ষমতায় নিতে কাঁধে কাধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।’

সভায় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁসহ আরও বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এ টি ইউ তাজ রহমান, মেজর অব. খালেদ আখতার, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, রেজাউল ইসলাম ভূইয়া প্রমুখ।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে

জাতীয় পার্টি জাপা জিএম কাদের রাঙ্গাঁ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর