ইউনিকোডে বাংলা ভাষার জাতীয় স্ট্যান্ডার্ড মানবে আইক্যান
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৮:৩১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ইউনিকোডে বাংলা ভাষার জাতীয় স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক ডোমেইন ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইক্যান-এর পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি বাংলা ডোমেইন নাম ও ইউনিকোডের যুক্তাক্ষর লিখতে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে সংস্থাটি।
বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) স্পেনের বার্সেলোনায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে আইক্যানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক থেকেই মন্ত্রীকে এসব কথা জানায় আইক্যান। এ উদ্যোগের ফলে ইন্টারনেট ডোমেইনে যে সংকট ছিল তা দূর হবে।
বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে মন্ত্রী আইক্যান কর্তৃপক্ষের কাছে ইউনিকোডে বাংলা ভাষা লিখতে যেসব সমস্যা হয়, সেগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভাষার জন্য আমরা বুকের রক্ত দিয়েছি। বাংলা ভাষার চর্চা ও বিকাশেও বাংলাদেশের অবদানই সবচেয়ে বেশি। দুঃখজনক হলেও সত্য, ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম বাংলা লিপি উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতামতকে অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে অক্ষর ব্যবহারে আমরা সমস্যার মুখে পড়ছি। অনেক ক্ষেত্রেই বাংলা ভাষাকে দেবনাগরীর মতো করে লেখা হয়েছে। কিন্তু বাংলা যে স্বতন্ত্র ভাষা এবং তার লিপির ব্যবহারও যে স্বতন্ত্র, সেটি মনে রাখতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, সরকার বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত ব্যবহারকে যুগোপযোগী ও সহজসাধ্য করতে বেশকিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার উন্নয়নে সরকার ১৬০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বাংলা ভাষা চর্চা ও গবেষণা, বাংলা ভাষার উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নেওয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে এর প্রয়োগ করা আলাদা কোনো এজেন্ডা নয়, এর সঙ্গে আমাদের আত্মার সম্পর্ক।
বাংলা ভাষাকে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলা ভাষায় যখন ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম হয়, তখন বাংলাদেশ থেকে কোনো মতামত না নেওয়ায় বাংলা ইউনিকোডে ত্রুটি রয়ে গেছে। বাংলা ভাষায় অস্তিত্ব নেই— এমন অনেক বর্ণ ইউনিকোডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
বৈঠকে আইক্যান প্রেসিডেন্ট ও সিইও গোরান মারবাই আইক্যান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। আইক্যান চিফ টেকনিক্যাল অফিসার ডেভিড কনার্ডসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, থাইল্যান্ডে ১৯৮৭ সালের অনুষ্ঠিত কনসোর্টিয়ামের সভায় মোস্তাফা জব্বার বাংলা ভাষার বিদ্যমান বর্ণগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে ত্রুটি দূর করার দাবি জানান। কিন্তু এখনও বিদ্যমান এ সমস্যার সমাধান হয়নি।
মন্ত্রী জানান, আমাদের দুই-তিনটি ইস্যু ছিল, যে জায়গাগুলোতে ইউনিকোডের সঙ্গে আমাদের সমস্যা। ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। আমরা এই কনসোর্টিয়ামে ঢুকেছি ২০১০ সালে। এই ২৩ বছরে বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধিত্ব আইক্যানে ছিল না। ফলে বাংলার যেসব ইস্যু ছিল, তা সিরিয়াসলি আন-অ্যাড্রেসড ছিল।
তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী বলেন, ড়, ঢ়, য় ও ৎ বর্ণগুলো বাংলায় আছে। কিন্তু হিন্দিতে নেই। যেহেতু আমরা ছিলাম না, সে কারণে অন্য দেশের মতামত অনুসারে স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করা হয়েছে। ভারতের দেবনাগরীতে নোকতা বলে একটা জিনিস আছে, এই নোকতা তাদের নানা কাজে লাগে, শব্দের নিচে ব্যবহৃত হয়। আমার সেই বিদ্যাসাগরের আমল নোকতার যুগ থেকে বেরিয়ে এসেছি।
মন্ত্রী আরও বলেন, দেবনাগরী যেহেতু ফলো করা হয়েছে তাই আমাদের দাঁড়ি, ডাবল দাঁড়ি তাতে রয়ে গেছে। আর আমাদের ড়, ঢ়, য় লিখতে ওরা নোকতা ব্যবহার করে। আমাদের যে স্বর চিহ্নগুলো, এগুলোকে আমরা ‘কার’ চিহ্ন বলি, ওরা বলে মাত্রা। তিনি বলেন, আমরা কিন্তু আমাদের স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করে ফেলেছি। কিন্তু ইউনিকোডে বাংলার এই সমস্যার কারণে আমরা যখন ডটবাংলায় বাংলা ডোমেইনে লিখতে যাচ্ছি, তখন বাংলার ড়, ঢ়, য় এর প্রতিটি ক্যারেক্টারের জন্য দু’টি করে কোড দিতে হয়— ড-এর সঙ্গে নোকতা, কিংবা ঢ-এর সঙ্গে নোকতা— এমন। এতে সার্চ ইঞ্জিনেও বাংলায় তথ্য খুঁজতে ঝামেলা হয়।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
আইক্যান ইউনিকোডে বাংলা টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী ডাক মোস্তাফা জব্বার