পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপে বই-খাতা খুঁজছে রিফাত
১ মার্চ ২০১৯ ০২:৪৫
।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ‘রাতে আগুন লাগার পর বাবা-মার সাথে ঘর থেকে তাড়াতাড়ি বের হওয়ার সময় তিনটা বই আর দুইটা খাতা নিয়া বের হইছিলাম। কিন্তু সকালে বাকি বইখাতা নিতে আইসা দেখি সবগুলা পুইড়া গেছে। একটা পাইছি চারপাশ পোড়া। বাকিগুলা এক্কেরে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
কথাগুলো বলছিল রাজধানীর ভাসানটেকের আবুলের বস্তির শিশু শিক্ষার্থী মো. রিফাত (৭)। বস্তিতে ব্র্যাক পরিচালিত প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থী সে।
বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে বস্তিতে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সমস্ত ঘর। ওই আগুনে পুড়েছে রিফাতের পড়ার টেবিল, বই খাতা আর বসবাসের ঘরটি। শুধু তাই নয়, আগুনের শিখায় রিফাতদের স্কুলটিও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ঐদিন রাত দশটার দিকে পড়া শেষে রিফাত ও তার ভাই সমির (৫) ঘুমিয়ে পড়েছিল। অপর ঘরে তার বাবা-মাও ঘুমচ্ছিল। গভীর রাতে হঠাৎ আগুন লাগার চিৎকারে তাদের ঘুম ভাঙে। ততক্ষণে তার বাবা-মা তাদেরকে টেনে নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় সে কয়েকটা বই খাতা হাতের মুঠোয় নিয়ে বাবা-মার সাথে দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
বস্তির অদূরে মাঠে দাঁড়িয়ে আগুনের লেলিহান শিখায় চোখের সামনে সে দেখতে থাকে তার প্রিয় পড়ার টেবিল, বই খাতা সব কিভাবে পুড়ে যাচ্ছে। রাতভর চোখের সামনেই সে দেখতে থাকে শুধু বইখাতা আর পড়ার টেবিল নয় নিষ্ঠুর আগুন কিভাবে নিজেদের থাকার ঘরটিও পুড়ে ছাই করে দিয়েছে।
সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বাসিন্দারা তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র খুঁজতে থাকে। আর রিফাত খুঁজছিল তার প্রিয় বইগুলো। যে বইয়ের লাল-কালো অক্ষরগুলোতে সে শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। স্বপ্ন দেখেছিল শিক্ষিত হয়ে বাবা-মার মুখে হাসি ফুটাবে। আর এমন স্বপ্ন শুধু রিফাতই নয়- তোফায়েল, শান্তসহ অনেক শিশুই স্বপ্ন দেখছিল উচ্চ শিক্ষিত হবে তারা। বস্তির শিশুদের স্বশিক্ষিত করতেই মূলত সেখানে গড়ে তোলা হয়েছিল প্রাক-প্রাথমিক স্কুল।
রিফাত এ প্রতিবেদককে জানায়, তাদের বস্তিতে একটি স্কুল আছে। সেখানে সে নিয়মিত পড়াশুনা করতো। কিছুদিন আগে স্কুল থেকে তাকে নতুন বই খাতা দিয়েছিল। সেসব বইখাতা সে নিজেই সারাক্ষণ পড়ার চেষ্টা করতো। কিন্তু আগুনের কারণে প্রিয় বইখাতা হারিয়ে ভীষণ মন খারাপ তার। পুড়ে যাওয়া তার বসবাসের ঘরটি যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার প্রিয় বইখাতাগুলো। তাই বেঁচে যাওয়া বইগুলো সযত্নে বুকের ভাঁজে রেখে বাকি বইয়ের আশায় পুড়ে যাওয়া ঘরটির সামনে এসে সাঁয় দাঁড়িয়ে আছে সে। আর অপলক দৃষ্টিতে কি যেন ভাবছে।
রিফাতের বাবা মোসলেহ উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, স্কুলের স্যারেরা কই তো ছেলে নাকি খুব মেধাবী। তার যেন পড়া বন্ধ না করি। আমিও রিকশা চালায় দু-পয়সা যা পায় তা দিয়ে চেষ্টা করছিলাম ছেলেটারে পড়াশুনা করামু। উচ্চ শিক্ষিত করমু। কিন্তু আমগো ইচ্ছা পূরণ হয় কদ্দুর (কতটুকু)। তাতো দেখলেন। এখন হয়তো গ্রামে চইলা যামু, আর না হয় অন্য কোথাও ঠায় নিমু। কিন্তু সেখানে হয়তো এতো সহজে স্কুল পামু না। তারপরও দেখি আল্লাহ যদি সহায় হয়..!
বস্তিতে আগুনের ঘটনা সরেজমিনে দেখতে আসলেন ঢাকা -১৭ আসনের সংসদ সদস্য ফারুক খানের ভাই আকরাম খান।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমার ভাই অন্যকাজে ব্যস্ত থাকায় তার পক্ষে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসছি। কিন্তু এসে যা দেখলাম তা অত্যন্ত দুঃখজনক। হৃদয় বিদারক। এদের তো এখন অন্য কোথাও জায়গা নাই ঠায় নেয়ার। তাই তাদের জন্য যতটুকু করা যায়, থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা সব করার চেষ্টা করবো আমরা। এরাই তো আমাদের শক্তি। আমার ভাইকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছে।
সারাবাংলা/এসএইচ/এনএইচ