গাছে গাছে মুকুল, আশা বাড়ছে আমচাষিদের
১ মার্চ ২০১৯ ০৮:১১
।। সুমন মুহাম্মদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
রাজশাহী : নির্ধারিত সময়ের আগে থেকেই রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় আম গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ডিসেম্বরের শেষের দিক থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দেশীয় জাতের আম গাছে মুকুল আসতে শুরু করে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
যে সব গাছে গতবছর তেমনভাবে আমের মুকুল আসেনি, সেই সমস্ত গাছে এবার আমের মুকুল এসেছে বলে জানিয়েছেন ফল গবেষণা কেন্দ্র। বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা না থাকলেও এবার আমের অফ ইয়ার বলে জানাচ্ছেন বাগান মালিকরা ও চাষিরা।
এ কারণে এবার কোনো গাছে মুকুলে ছেঁয়ে গেছে, আবার কোনো গাছে কম ও কোনো গাছে একেবারই নেই। এখন মুকুল থেকে গুটি বের হওয়ার সময়। এরইমধ্যে অনেক গাছেই গুটি আসতেও শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনেরও আশা করছেন আমচাষি ও কৃষি বিভাগ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে যে শিলাবৃষ্টি হয়েছে এতে তাতে অনেক গাছের মুকুল ঝরে পড়েছে। এরপরও প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে এবং সময়মতো পরিচর্যা করা গেলে চলতি মৌসুমে আমের ফলন ভালো হবে। এ আশায় বুক বেঁধেছেন চাষিরা। মনোযোগ দিয়েছেন বাগান পরিচর্যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় সাড়ে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। এবার আমগাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। এখন পর্যন্ত আমের ফলন বেশি হওয়ার আশা দেখছে। রাজশাহী অঞ্চলে ৩৫ থেকে ৪০ জাতের আম চাষ হয়ে থাকে। আর সারা বাংলাদেশে রয়েছে ২’শ ৫০ জাতের আম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফজলী, গোপাল ভোগ, মোহন ভোগ, ন্যাংড়া, ক্ষীরসাপাত, হিমসাগর, কৃষাণ ভোগ, মল্লিকা, লক্ষণা, আম্রপলি, দুধসর, দুধকলম, বৃন্দাবনী, আরজান, রাণী পসন, মিশ্রীদানা, সিঁন্দুরী, আশ্বিনা সেই সঙ্গে নানা প্রকার গুটি আম।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের সূত্র জানায়, ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় অবধি বারোমাসি বা লোকাল জাতের আম গাছে মুকুল আসা শুরু হয়। তবে এবার জানুয়ারির শুরুতেই মুকুল আসা শুরু হয়। ফেব্রুয়ারি মাসেই মূলত আম গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে।
মহানগরীর কোট এলাকার আমচাষি আবুল হোসেন জানান, তার ১০টি গাছের একটি আম বাগান রয়েছে। অধিকাংশ গাছেই মুকুল দেখা দিয়েছে। ডিসেম্বরের শেষদিক থেকেই মুকুল আসা শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য মুকুলের মাথাগুলোকে পোকা মাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য স্প্রে করা হচ্ছে। পুরনো জাতের পাঁচটি গাছেই মুকুল ধরেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তিনি।
পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকার আমচাষি ইয়াকুব আলী জানান, এ বছরের আবহাওয়া আমের জন্য অনুকূল রয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর টানা শীত ও কুয়াশা ছিল না বললেই চলে। হঠাৎ শিলাবৃষ্টি হলেও বর্তমানে যেগুলো আছে এর সঠিক পরিচর্যা ও আর আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ফলনের আশা করছেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, ‘এ বছর আম গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। প্রায় ৭৫ শতাংশ আম গাছে মুকুল এসেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সেগুলিতে মোটরদানার মতো আমের গুটি চলে আসবে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে বাগান মালিক ও চাষিরা এবার লাভবান হবেন।’
তিনি জানান, শুধু রাজশাহীতেই নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ এবং নাটোরেও প্রচুর আম উৎপাদন হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে রয়েছে প্রচুর আমের বাগান। লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই আম বাগানের সংখ্যাও বাড়ছে। তবে গড়ে ওঠা নতুন আম বাগানগুলোর প্রায়ই বনেদি জাতের। বিশেষ করে নিয়মিত জাত ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসাপাত ও আশ্বিনা জাতেরই গাছ বেশি লাগানো হচ্ছে।
রাজশাহী ফল-গবেণষা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আলীম উদ্দিন জানান, আগাম যে সকল গাছে মুকুল এসেছে তা সাধারণত বারী-১১ জাতের। বেশ কয়েক বছর থেকে লক্ষ করছি দেশের অনেক জায়গায় মাঝে মাঝে কিছু গাছে মুকুল আগে আসছে। এটা বিভিন্ন পদ্বতির মাধ্যমে সম্ভাব হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে বা জানুয়ারি মাসের দিকে যেসব গাছে মুকুল এসেছে সে আম গুলো খেতে সুস্বাদু মিষ্টি হয়।
তিনি জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার গাছে খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। তবে ছত্রাকজনিত রোগেও আমের মুকুল-গুটি আক্রান্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে ম্যানকোজেট গ্রুপের ছত্রাকনাশক দুই গ্রাম অথবা ইমাডোক্লোরিড গ্রুপের দানাদার প্রতি লিটার পানিতে দশমিক দুই গ্রাম, তরল দশমিক ২৫ মিলিলিটার ও সাইপারম্যাক্সিন গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আবার মুকুল গুটিতে রূপান্তর হলে একই মাত্রায় দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে। এছাড়া পাউডার মিলডিউ নামের এক প্রকার ছত্রাকজনিত রোগেও আমের ফলনের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কখনও গাছে এ রোগের আক্রমণ দেখা দিলে অবশ্যই সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রতিলিটার পানিতে দুই গ্রাম হারে মিশিয়ে সাত থেকে ১০ দিন পর পর দুইবার স্প্রে করতে হবে বলে জানান এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
সারাবাংলা/একে