ওয়াঘা-আতারি সীমান্তে ভারতীয় পাইলট: যেকোনো সময় হস্তান্তর
১ মার্চ ২০১৯ ১৮:১৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: পাকিস্তানে ধরা পড়া বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে ভারতের কাছে ফিরিয়ে দিতে পাঞ্জাবের ওয়াঘা সীমান্তের নিয়ে আসা হয়েছে। যেকোনো সময় তাকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেবে পাকিস্তান।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, শুক্রবার (১ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টায় পাকিস্তান সেনার একটি কনভয় ভারতীয় পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে নিয়ে ওয়াঘা সীমান্তে পৌঁছায়। এর আগে অভিনন্দনকে সকালে প্রথমে ইসলামাবাদ থেকে লাহোরে সড়ক পথে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে বিকেলে নিয়ে আসা হয় দুই দেশের ওয়াঘা-আতারি সীমান্তে।
এর আগে, শুক্রবার সকালেই ওয়াঘা সীমান্তে পৌঁছান অভিনন্দনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল এস বর্তমান এবং মা শোভা বর্তমান। এ ছাড়া অভিনন্দন বর্তমানের জন্য ভারতীয় বিমান এবং সেনা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারাও ওয়াঘা-আতারি সীমান্তে অবস্থান করছেন।
ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির সূত্রগুলো জানাচ্ছে, উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে আকাশপথে ফেরত চেয়েছিল ভারত। অভিনন্দনের জন্য বিশেষ বিমান পাঠানোর প্রস্তাব পাকিস্তানকে দিয়েছিল ভারত। কিন্তু পাকিস্তান তাতে রাজি হয়নি।
সূত্রগুলো আরো জানাচ্ছে, ভারত চাচ্ছিল যে অভিনন্দনকে আকাশপথে আনলে মিডিয়াসহ বিশাল জনমানবের ভিড় এড়ানো যাবে। এ ছাড়া আকাশপথে অভিনন্দনকে দ্রুত দেশে এনে স্বাস্থ্যপরীক্ষার ভাবনা ছিল নয়াদিল্লির।
মেজর জেনারেল আসিফ গফুরের বরাত দিয়ে ঢাকার পাকিস্তান মিশন গত বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক বার্তায় জানিয়েছে, ওইদিন পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে ভারতের বিমানবাহিনীর দুইটি বিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ঢুকে পড়লে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী ভারতের দুইটি বিমানকে ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়। ওই সময় ভারতের দুইজন পাইলট মারা গেছেন আর একজন ভারতীয় পাইলট পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়েছে। পাকিস্তানের হাতে আটক পাইলটের নাম হচ্ছে অভিনন্দন বর্তমান।
ভারতীয় যে পাইলট পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়েছে সেই পাইলটের দুইটি ভিডিও চিত্র ঢাকার পাকিস্তান মিশন এক বার্তায় পাঠিয়েছে। একটি ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত পাহাড়ি অঞ্চলের ঝিরিতে ভারতীয় সুঠাম দেহের পাইলট পড়ে আছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সাধারণ পোশাকের লোকজন ওই পাইলটকে নিয়ে টানা-হেঁচড়া করছে।
আরেকটি ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, ভারতীয় ওই পাইলট চোখ বাধা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছেন, তার চোখের চারপাশে রক্তের দাগ এবং তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে।
বুধবারের (২৭ ফেব্রুয়ারি) ওই ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিজ নিজ দেশের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরাম খান এই ঘটনায় বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে বলেন, ‘দুইপক্ষের কাছেই যে সকল সামরিক শক্তি রয়েছে তাতে কারোরই হিসেবে ভুল হওয়ার কথা নয়। তাই উভয় পক্ষের কাছেই আমার আহ্বান থাকছে যে আমার সবার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে আমাদের যে দ্বন্দ্ব চলছে তা সমাধানে আমাদের প্রজ্ঞা এবং বিবেচনার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ভারতের দুইটি বিমান ভূপাতিত করেছি। পাইলটরা আমাদের সঙ্গেই আছে। আমি ভারতের কাছে চানতে চেয়েছি যে এরপর আমরা কোথায় যাব? আমাদের সবার দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত।’
এর আগে, গত মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানে একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ শিবিরে বিমান হামলা চালায় ভারত। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। একইদিন সন্ধ্যায় লাইন অব কন্ট্রোলের ওপর দিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়।
এর আগে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতশাসিত কাশ্মিরে এক আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলায় ভারতের অন্তত ৪০ আধা-সামরিক সেনা নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ। ওই হামলার পর কঠোর জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ভারত।
গত মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সেই হামলার পাল্টা জবাব দেয় ভারত।
সারাবাংলা/জেআইএল/একে