অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ১৫ বীর সেনার গণকবর
২ মার্চ ২০১৯ ০৭:৪৭
|| রানা আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ||
সিরাজগঞ্জ: ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর পাকহানাদার বাহিনী উপজেলার মাগুরা বিনোদ ইউনিয়নের আমবাড়িয়া গ্রামে ঢুকে নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড চালায়। পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে নির্বিচারে গুলি করে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় ওই গ্রামের মুক্তিকামী ১৩ জনকে।
আহত অবস্থায় বেঁচে যান দুজন। প্রায় তিন বছরের মতো হলো তারাও মারা গেছেন। এ সকল বীর যোদ্ধাদের সবাইকে সমাহিত করা হয়েছে আমবাড়িয়া গ্রামের একটি কবরস্থানে। যেখানে একসঙ্গে শায়িত আছেন বাংলা মায়ের বীর সন্তানরা।
জীবনবাজি রেখে দেশ-মাতৃকার টানে দেশকে স্বাধীন করার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মানুষের বড়ই অভাব এই স্বাধীন দেশে। মহান স্বাধীনতার ৪৮ বছর হলেও যাদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদের খোঁজ কেউ রাখি না। অরক্ষিত আর অযত্ন-অবহেলায় আজও পড়ে আছে তাদের গণকবর। সংরক্ষণের অভাবে স্মৃতিচিহ্ন মুছে যেতে বসেছে বর্তমান প্রজন্মের কাছে।
তাড়াশে রয়েছে কয়েকটি গণকবর। এর মধ্যে আমবাড়িয়া গ্রামের কবরটি অন্যতম। ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর পাকবাহিনী রাজাকারদের সহায়তায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরা হলেন শহীদ ইয়ার মোহাম্মাদ, শহীদ মেছের উদ্দিন, শহীদ সুলতান শেখ, শহীদ শফিজ শেখ, শহীদ দেছের প্রামাণিক, শহীদ ফয়েজ উদ্দিন, শহীদ ওসমান গনি, শহীদ মজিবর রহমান, শহীদ কিসমত আলী, শহীদ জুব্বার ফকির, শহীদ আমিনুদ্দিন, শহীদ আব্দুর রহমান এবং শহীদ মোক্তার হোসেন।
এ গণকবরটিতে একাত্তরে শহীদ মোট ১৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ চিরশায়িত আছেন। আহত তাজুদ্দিন মোল্লা ও দেছের প্রামাণিক তিনবছর আগে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে দেছের প্রামাণিকের কবর বাঁশের চাটাই দিয়েই আজও ঢেকে রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে সুরক্ষা প্রাচীর না থাকায় যুগযুগ ধরে অরক্ষিতই থেকে যাচ্ছে ১৫ জন দেশপ্রেমী বীর সেনার গণকবর।
আমবাড়িয়া গ্রামের শহীদ ইয়ার মোহাম্মদের বড় সন্তান ও দোবিলা ইসলামপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. লুৎফর রহমান জানান, বিজয়ের মাস এলেই কিছু মানুষ ফুল দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে যান। পরে আর কেউ খোঁজ রাখেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি সহায়তা না পেলেও গ্রামবাসী কোনোরকমভাবে গণকবরটি ইট দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। তবে অর্থাভাবে এর সুরক্ষা প্রাচীর করা সম্ভব হচ্ছে না।’
এ সময় তিনি গণকবরটিতে যাতায়াতের জন্য সরকারিভাবে রাস্তা নির্মাণ ও একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির জোর দাবি জানান।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গাজী আরশেদুল ইসলাম গণকবরসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-বিজড়িত সকল স্থাপনা সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন। নয়ত একদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মুক্তিযুদ্ধে পাক-হানাদারবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের কালের সাক্ষী হয়ে থাকা গণকবরগুলো।
সারাবাংলা/একে