‘বর্ষায় চট্টগ্রামে আগের মতো জলাবদ্ধতা হবে না’
২ মার্চ ২০১৯ ১৭:২৬
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম মহানগরীতে আগের মতো জলাবদ্ধতা হবে না বলে আশা করছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। শনিবার (২ মার্চ) চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন ও চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ আশাবাদের কথা জানান।
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই সভা হয়েছে। সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে মন্ত্রী জানান, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পসহ চট্টগ্রামকে একটি দৃষ্টিনন্দন শহরে পরিণত করতে সিটি করপোরেশন ও সিডিএ যাতে সমন্বিতভাবে কাজ করে, সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পরিষ্কার দেখেছি, তাদের মধ্যে সমন্বয় আছে।
সভায় সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, বর্ষায় যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় এবং জনজীবনে যাতে কোনো অস্বস্ত্বি সৃষ্টি না হয়, সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সিটি করপোরেশন আগামী কয়েকদিনের মধ্যে একটি বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান আরম্ভ করবে। আমরা আশাবাদী যে, আগের মতো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে না।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন ও সিডিএর সঙ্গে বসেছি। সমন্বিতভাবে ধাপে ধাপে চট্টগ্রামকে যাতে একটা দৃষ্টিনন্দন শহরে পরিণত করা যায়, সেটা আমরা আলোচনা করেছি। এছাড়া বর্ষাকে সামনে রেখে চট্টগ্রামবাসীকে কোনো দুঃসংবাদের চিন্তা না করারও অনুরোধ করেছেন মন্ত্রী।
সিডিএর যেসব প্রকল্প চলমান আছে সেগুলোর গুণগত মান অক্ষুন্ন রেখে কাজের গতি ত্বরান্বিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেওয়ার প্রকল্পের কাজ শিঘ্রই শুরু হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প গত ২৭ ফেব্রুয়ারি একনেকে পাশ হয়েছে। আমরা আশা করি সেই প্রকল্পসহ চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামে একটা স্থায়ী সমাধান হবে।’
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প ও সিডিএ’র কর্মকাণ্ড নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন আসতে থাকলে পাশে থাকা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. আবদুচ ছালাম বারবার মন্ত্রীকে ব্রিফিং শেষ করার তাগাদা দিতে থাকেন। এসময় মেয়র হেসে টিপ্পনী কাটেন, ‘মিডিয়ায় সংবাদ কম প্রচার করলে ভালো।’
এর আগে সভার শুরুতে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যান উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বর্ষার আগে অতিদ্রুত কোনো কাজটা করতে হবে, সেটা চিহ্নিত করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা দেখতে চান না। আপদকালীন সমস্যা দ্রুত সমাধান করুন, যাতে বর্ষায় চট্টগ্রামের মানুষ দুর্ভোগে না পড়ে।’
জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহি কমিটি) অনুমোদন পায়। প্রথম পর্যায়ে ২০১৮ সালের মার্চে ছাড় করা হয় ৫০০ কোটি টাকা। এরপর ২৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয় প্রথম পর্যায়ের কাজ।
জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া এই প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খাল আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া, খালের উভয় পাশে ১৫ ফুট চওড়া সড়ক ও খালের মুখে ৫টি স্লুইশ গেইট বসানো, ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপ (বালি জমার স্থান), ৫টি জলাধার নির্মাণ, ৩৬টি খাল খননের মাধ্যমে ৫ লাখ ২৮ হাজার ২১৪ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন, ৪২ লাখ ঘনমিটার কাদা অপসারণ, নতুন করে ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, ১ লাখ ৭৬ হাজার মিটার দীর্ঘ রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ এবং খালের উভয় পাশে ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করার কাজ রয়েছে।
মূলত সিডিএর কাজের অগ্রগতি জানতেই আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় মেয়র-সিডিএ চেয়ারম্যান ছাড়াও পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, সিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার কুসুম দেওয়ান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই