জোটের সিদ্ধান্তের আগে শপথ নিলে মনসুর-মোকাব্বিরকে বহিষ্কার
৩ মার্চ ২০১৯ ১৮:৫২
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান ও চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করলেও সংসদ ও সংসদের বাইরে আন্দোলনের অংশ হিসেবে শপথ গ্রহণের পক্ষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক ‘গণফোরাম’।
তবে দল ও জোটের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগেই কাউকে কিছু না জানিয়ে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান শপথ গ্রহণ করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা হিসেবে বহিষ্কার ও তিরস্কারের সিদ্ধান্ত নেবে দলটি।
গণফোরামের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই জরুরি বৈঠকেও বসবে তারা।
আরও পড়ুন- সুলতান মনসুরের সামনে ৫ বাধা: চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইসিতে
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে মৌলভীবাজার-২ এবং মোকাব্বির খান ‘উদীয়মান সূর্য’ প্রতীকে সিলেট-২ আসনে নৌকার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ধানের শীষের মহাবিপর্যায়ের মধ্যে এ দু’টি আসনে জিতে আসেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও গণফোরামের মোকাব্বির খান।
কিন্তু নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি, কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ ও ভোট ‘ডাকাতি’র অভিযোগ এনে প্রথমে ফল প্রত্যাখান এবং পরে ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। একইসঙ্গে জোটের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেউ ‘আপাতত’ শপথ নেবে না। বিএনপির মহাসচিবসহ দলটির ছয় জন সংসদ সদস্য এই সিদ্ধান্ত মেনে শপথ গ্রহণ থেকে বিরত রয়েছেন।
তবে শুরু থেকেই গণফোরামের দুই সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান শপথ গ্রহণের বিষয়ে তাদের আগ্রহের কথা বলে আসছিলেন। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন তারা। আর শপথ গ্রহণের জন্য তারা বেছে নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের দিনটিকে।
আরও পড়ুন- সুলতান ও মোকাব্বির খানকে অপেক্ষার পরামর্শ গণফোরামের
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ ও সংসদের বাইরে ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যেই জাতীয় ঐক্যফ্যন্টের আট সংসদ সদস্য শপথ নেবেন। এ ক্ষেত্রে জোটের শীর্ষ নেতাদের যুক্তি হচ্ছে, নির্বাচনের ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি, কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এবং সর্বোপরি ভোট ‘ডাকাতি’র যে অভিযোগগুলো তারা বিভিন্ন ফোরামে করছেন, সেটি জাতীয় সংসদে গিয়ে করা দরকার। অধিবেশনের রেকর্ডে এগুলো থাকা দরকার। তবে সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত একক কোনো ব্যক্তি নিতে পারবেন না, সেটা হতে হবে দল ও জোটের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে।
এ প্রসঙ্গে শনিবার (২ মার্চ) রাতে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংসদ ও সংসদের বাইরে আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংসদ সদস্যরা শপথ নিতে পারেন। তবে সেটা তো জোট ও দলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হতে হবে। কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফ্লোর ক্রসিংয়ের অভিযোগ আনা হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ফল প্রত্যাখান ও ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলার পর শপথ গ্রহণ করলে নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে পারে— এমনটি ভেবেই সবগুলো আসনে মামলা না করে প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার বিপরীতে একজন করে প্রার্থী হাইকোর্টের নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। বিষয়টিকে তারা ‘ভোট কারচুপি’র প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবেই নিয়েছেন, যেন পরবর্তীকালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংসদে গেলে কেউ কিছু বলতে না পারে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা আগেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ বৈঠকে আলোচনা করেছি। ফল প্রত্যাখান ও ফল চ্যালেঞ্জ করে মামলা করার পরও নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নিয়ে কারও কিছু বলার থাকবে না। কারণ, যেখানে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জিতেছেন, সে আসনের ফলফাল তো আমরা চ্যালেঞ্জ করিনি। যেখানে কারচুপির মাধ্যমে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের ঠকিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানকার ফল আমরা প্রত্যাখান করেছি এবং চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছি।’
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
উদীয়মান সূর্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গণফোরাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ধানের শীষ বিএনপি মোকাব্বির খান সংসদ সদস্যদের শপথ সুলতান মনসুর