উপজেলা নির্বাচনে বাজেট ৯১০ কোটি টাকা
৩ মার্চ ২০১৯ ২১:৩৩
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেনাট।।
ঢাকা: আসন্ন পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৯১০ কোটি টাকা। প্রত্যেক উপজেলায় গড় বাজেট ধরা হয়েছে ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। ইতোমধ্যেই এই বাজেট অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশন সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাজেট ছিল ৭০২ কোটি টাকা। তখন প্রতিটি আসনে গড় বাজেট ছিল ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সেই হিসাবে উপজেলা নির্বাচনের এই বাজেট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে ২০৮ কোটি টাকা বেশি। আর ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে বাজেট ছিল ৪০০ কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুগ্মসচিব মো. ফরহাদ আহম্মদ খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামী জুন পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনের জন্য ৯১০ কোটি টাকা বাজেট রাখা হয়েছে। তবে এই বাজেট প্রয়োজনে বাড়তে কমতে পারে।’
ইসি সূত্র জানায়, আগামী ১০ মার্চ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত পাঁচ ধাপে ৪৮০টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ১০ মার্চ ৮৬ উপজেলায়, দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ ১২৪ উপজেলায়, তৃতীয় ধাপে ২৪ মার্চ ১২৭ উপজেলায়, চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ ১২২টি উপজেলায় এবং পঞ্চম ধাপে ১৮ জুন ২১টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে প্রথম চার ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচন: তৃতীয় ধাপে একক প্রার্থী ১৮ জন
ইসি সূত্র জানায়, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ১০৫টি খাতে ৯১০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা বাজেট রাখা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য।
এই অর্থ মোট বাজেটের প্রায় ৫০ শতাংশ, বাকি ৪৬০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে নির্বাচন পরিচালনা বাবদ। এরমধ্যে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ ২১২ কোটি টাকা। ভোটকেন্দ্রে, কক্ষ তৈরি মালামাল আনা নেওয়ায় ব্যবস্থাপনা ব্যয় ৩০ কোটি টাকা, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, ম্যাজিস্ট্রেটদের পেছনে ব্যয় ৩০ কোটি টাকা।
এছাড়া, সব স্তরের কর্মকর্তাদের আপ্যায়ন ব্যয় ২৫ কোটি টাকা, কেন্দ্রের মালামাল পরিবহনে ব্যয় ২৫ কোটি টাকা। কাগজ ও কালি খাতে বাজেট ২০ কোটি টাকা, বিভিন্ন মালামাল ক্রয় বাবদ আরও ৩০ কোটি টাকা, অবশিষ্ট ৮৮ কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হবে।
ইসি সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনে ব্যয়ের অনান্য খাতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ভোটকেন্দ্রের বেষ্টনী নির্মাণ, ভোটকক্ষ প্রস্তুতকরণ, কেন্দ্রের সংস্কার, ভোট কক্ষে ব্যালট পেপার মাকিং প্লেস-গোপন কক্ষ নির্মাণ, অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র নির্মাণ, অস্থায়ী ভোটকক্ষ।
এছাড়া রয়েছে অতিরিক্ত ভোটকক্ষ নির্মাণ খরচ, ভোটকেন্দ্রে ব্যবহারের জন্য মনোহরী সামগ্রী যথা—সাদা কাগজ-কার্বন কাগজ-বল পয়েন্ট কলম-মোমবাতি-সুপার গ্লু-গামপট-ছুরি-আলপিন-সুঁই-সুতা-দিয়াশালাই ইত্যাদি।
দেশে উপজেলা পরিষদের সংখ্যা
১৯৮৫ সালে দেশে প্রথমবারের মতো উপজেলা পরিষদ গঠিত হয়। উপজেলা পরিষদ গঠিত হওয়ার সময় দেশে উপজেলার সংখ্যা ছিল ৪৬০টি। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত উপজেলার সংখ্যা একই ছিল। অর্থাৎ ১৯৮৫ ও ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম ও দ্বিতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও উপজেলার সংখ্যা ছিল ৪৬০টি । পরর্তী সময়ে দেশে উপজেলার সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয় ৪৮১টি উপজেলায়।
সর্বশেষ ২০১৪ সালে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয় ৪৮২টি উপজেলায়। আর চলতি মার্চ মাস থেকে সারাদেশের ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে ৪৮০টিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। বাকি ১২টি উপজেলায় মেয়াদ শেষ না হওয়া এবং আইনি জঠিলতা থাকায় নির্বাচন করা যাচ্ছে না।
ধাপে ধাপে উপজেলা নির্বাচন
উপজেলা পরিষদ গঠিত হওয়ার পর প্রথম তিনটি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন একদিনে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন তিনটি যথাক্রমে ১৯৮৫, ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে, চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সাত ধাপে এবং পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন
পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যদিও স্থানীয় সরকার সংশোধনের ফলে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে দলীয় প্রতীকে প্রথমবারে তিনটি উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হয়। তবে পঞ্চম উপজেলা পরিষদে প্রথমবারের মতো সব উপজেলায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সারাবাংলা/জিএস/এমএনএইচ