ঠাকুরগাঁওয়ের সেই অজ্ঞাত রোগ আসলে নিপাহ ভাইরাস
৪ মার্চ ২০১৯ ১৬:১২
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
ঠাকুরগাঁও: অজ্ঞাত রোগে নয় ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভান্ডারদহ নয়াবাড়ী গ্রামে একই পরিবারের যে পাঁচজন মারা গেছেন তার কারণ নিপাহ ভাইরাস। সোমবার (৪ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১ টায় সিভিল সার্জনের সম্মেলন কক্ষে ঠাকুরগাঁও স্বাস্থ্য বিভাগ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ রংপুরের উপ-পরিচালক ডা. আবু মোহাম্মদ খয়রুল কবির সাংবাদিকদের জানান, গত ৯ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৫ দিনের ব্যবধানে জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভান্ডারদহ মরিচপাড়া গ্রামে একই পরিবারের যে পাঁচজন মারা গেছেন তারা কোনো অজ্ঞাত রোগে নয়, বাদুরবাহিত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)-এর অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্রিফিংয়ে সময় উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. শাহজাহান নেওয়াজ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. তোজাম্মেল হক, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নাদিরুল আজিজ, ডা. ফিরোজ জামান জুয়েল প্রমুখ।
একই পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যুর পর ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে আইইডিসিআর গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের একটি টিম পাঠায়। পরবর্তীতে আরও চার সদস্যের আরেকটি টিম তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অনুসন্ধান করেন তদন্ত দলের সদস্যরা। এ সময় হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও মৃত ব্যক্তিদের পরিবার, প্রতিবেশি, গ্রামবাসীসহ মোট ৬৫ জনের কাছ থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও ৪৫ জনের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন দলের সদস্যরা।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত ব্যক্তিদের সবার জ্বর, মাথা ব্যাথা, বমি ও মস্তিস্কে ইনফেকশনের (এনসেফালাইটিস) উপসর্গ ছিল। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় এবং ওই নমুনায় নিপাহ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময়ে মৃত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি এবং তাদের স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রেখেছে আইইডিসিআর।
নিপাহ রোগ সাধারণত বাদুর সংক্রমিত খেজুরের কাঁচা রস পান করার মাধ্যমে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পের্শে আসার কারণে ছড়ায় বলে প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়। সে জন্য খেজুরের কাঁচা রস পানে বিরত থাকার পরামর্শও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
রোগীর মৃত্যু হলে মৃত ব্যক্তির লালা, রক্ত, মল-মূত্রের সরাসরি সংস্পর্শে না আসা এবং মাস্ক ও গ্লাভস পরে নির্দেশিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে গোসল করানোর কথা বলেছে আইইডিসিআর। এমন কি সাবধানতার সঙ্গে মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর পর নিজেও সাবান দিয়ে গোসল করে পরিস্কার পোশাক পরতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৯ ফেব্রুয়ারি আবু তাহের (৫৫) মৃত্যুবরণ করেন। এরপর তার মেয়ের স্বামী হাবিবুর রহমান বাবলু (৩৫) একই ভাবে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। জামাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পরেই তাহেরের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম (৪৫) একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে একই রোগে আক্রান্ত হয় আবু তাহেরের দুই ছেলে ইউসুফ আলী (২৭) ও মেহেদী হাসান (২৪)। তাদের দুজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেয়ার পথে ইউসুফ মারা যায় এবং মেহেদী রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার মেডিসিন বিভাগের ৩নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় রোববার রাত সাড়ে ৯টার সময় মৃত্যুবরণ করেন।
সারাবাংলা/এসএমএন