‘আগেই ভর্তি হতে অনুরোধ করেছিলাম, রাজি হননি’
৪ মার্চ ২০১৯ ১৯:৫২
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চিকিৎসকরা হাসপাতালে ভর্তি হতে এর আগেও অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু তিনি রাজি হননি। তখন বলেছিলেন ‘আমি ভালো আছি।’
সোমবার ( ৪ মার্চ) বিএসএমএমইউ মিল্টন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটায় জানালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন,আগে থেকেই তার অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিক এবং উচ্চ রক্তচাপ ছিল। আগেও একবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। এসময় তাকে স্টেনটিং করার পরামর্শও দেওয়া হয়। গত ২০ ডিসেম্বর তিনি এখানে আসেন, একটা মেডিকেল বোর্ড গঠনা করে বলা হয়েছিল ভর্তি থাকার জন্য। কিন্তু তিনি তখন ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। এরপরও তার সঙ্গে দেখা হলে তাকে অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তিনি বলেছিলেন, আমি আমি ভালো আছি।
আরও পড়ুন: ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে ঢাকা ছাড়ল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
সোমবার দুপুরে ভারতের বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠি বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীনা ওবায়দুল কাদেরকে দেখে চলে যাওয়ার পর এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসান ওবায়দুল কাদেরের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের জানান।
তিনি জানান, দেবী শেঠি ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতিটি ধাপ দেখেছেন। চিকিৎসা নিয়ে তিনি মন্তব্য করেছেন, হোয়াট এভার ডান হিয়ার বাই ইউর কার্ডিয়াক টিম, ইট ইজ অ্যান অ্যাক্সিলেন্ট জব, উই হ্যাভ ডান। এমনকী, মিসেস ওবায়দুল কাদেরকে বলেন, ইউর হাসব্যান্ড ইজ লাকি। এখানকার চিকিৎসকরা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা তাকে এ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে তা ঠিক ছিল। ইউরোপ -আমেরিকাতেও এর চেয়ে বেশি কিছু করার নাই। উনি তিনবার উচ্চারণ করেছেন, ‘এর চেয়ে বেশি কিছু করার ছিল না।’
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসান জানান, আজ সকাল ৯টার পর থেকেই তার শারীরিক অবস্থা পুরো স্টেবল (স্থিতিশীল) রয়েছে। তার রক্তের চাপ ১১০ থেকে ১৭০ পর্যন্ত রয়েছে, তবে মাঝে মাঝে সেটা ১২০ থেকে ১৩০ হচ্ছে। আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে তার যে সমস্যা হচ্ছিল ইলেকট্রোলাইট অনিয়ন্ত্রিতসহ অনেক কিছুই এখন মোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থায় এসেছে। তার ডায়াবেটিসও অনিয়ন্ত্রিত ছিল, খুব উচ্চামাত্রায় ছিল তার, সেটাও নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। তিনি এখন নড়াচড়া করছেন, ভেন্টিলেশন খুলে দিতে ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
তিনি ভালো আছেন মন্তব্য করে সৈয়দ আলী আহসান আরও বলেন, তাকে আমরা ঘুমের ওষুধ দিয়েছি কষ্ট থেকে লাঘব পেতে। সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, তার অবস্থা এখন ভালো আছে এবং উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, দেবী শেঠিকে ওবায়দুল কাদেরের প্রথম উপসর্গ থেকে শুরু করে তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট, তখনকার অবস্থা এবং কী কী স্টেপ নেওয়া হয়েছে সবই জানানো হয়েছে। এরপরের এনজিওগ্রাম , স্টেনটিং ,পরবর্তীতে দুই ঘন্টা স্থিতীশীল থাকা আবার অবস্থা খারাপ হওয়া, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া সবই তিনি জানেন। তিনি এনজিওগ্রামও দেখেছেন।এরপর তার সঙ্গে আমরা বিভিন্ন কনসিকোয়েন্স নিয়ে আলোচনা করেছি, কী কী হতে পারে-কারণ তার শ্বাষকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ সমস্যা রয়েছে।
তখন ডা. দেবী শেঠি আমাদের বলেন, আপনাদের যদি তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা থাকে তাহলে এটাই উপযুক্ত সময় তাকে স্থানান্তর করার। তিনি নিজের দেশের উদাহরণ টেনে বলেন, ইন্ডিয়াতেও আমরা এমনটা করে থাকি, রাজনীতিবিদ বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বেলায়।
ডা.দেবী শেঠি আরও বলেন, রক্তে ইনফেকশনের বিষয়টা রয়েছে যেটা গতকাল ছিল ১৮ হাজার সেটা আজ হয়েছে ২৬ হাজার। ইনফেকশন থেকে এটা বেড়ে যায়। আপনাদের এখানে ভিজিটর নিয়ন্ত্রণ করাও একটা সমস্যা। যদিও সেটা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন এটাই সময় তাকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করার। এর চেয়ে জটিলতা বেড়ে গেলে কোথাও স্থানান্তর করা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। আপনাদের সিদ্ধান্ত সঠিক, আমারও পরামর্শ হবে এই মুহূর্তে তাকে স্থানান্তর করা।
সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ