‘ইউরোপ-আমেরিকাতেও এর চেয়ে বেশি সম্ভব ছিল না’
৪ মার্চ ২০১৯ ২১:৫১
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে ভারতের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠি জানিয়েছেন, দেশে ওবায়দুল কাদেরের সর্বোচ্চ চিকিৎসাই হয়েছে। উন্নত দেশেও এর চেয়ে বেশি কিছু সম্ভব ছিল না। দেবী শেঠি বলেন, ‘ইওর ডক্টরস হ্যাভ ডান অ্যান এক্সিলেন্ট জব। ইউরোপ-আমেরিকা হলেও এর চেয়ে বেশি কিছু করা যেত বলে আমি মনে করি না।’
আরও পড়ুন- ‘আগেই ভর্তি হতে অনুরোধ করেছিলাম, রাজি হননি’
একই মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াও। তিনি জানিয়েছেন, ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতিটি ধাপ দেবী শেঠি দেখেছেন। তারপর মন্তব্য করেছেন, ‘হোয়াটএভার ডান হিয়ার বাই ইওর কার্ডিয়াক টিম, ইট ইজ অ্যান এক্সিলেন্ট জব উই হ্যাভ ডান।’
সোমবার (৪ মার্চ) বিএসএমএমইউয়ের মিল্টন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্শ্বিবিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কথা জানান। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও সারাবাংলাকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডা. দেবী শেঠির সাক্ষাতের কথোপকথনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রোববার (৩ মার্চ) সকালে ওবায়দুল কাদেরকে বিএসএমএমইউয়ে ভর্তির পর তার এনজিওগ্রাম করানো হয়। এসময় তার হৃদযন্ত্রে তিনটি রক্তনালীতে ব্লক চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে সেন্ট (রিং) পরানোর মাধ্যমে একটি ব্লক খুলে দেওয়া গেলেও বাকি দু’টি ব্লক অপসারণ করা যায়নি। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার কথা ভাবা হলেও শারীরিক স্থিতিশীলতা না থাকায় সেটিও সম্ভব হয়নি। পরে সিঙ্গাপুর থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেশে নিয়ে আসা হয়। তারা ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পক্ষে মত দিলেও শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে থাকায় দেশে রেখেই চিকিৎসার সিদ্ধান্ত হয় রোববার রাতে।
এরপর সোমবার ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয় ভারতের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠিকে। তিনি ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা ও তার চিকিৎসকা ব্যবস্থার পর্যালোচনা করে জানান, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো যাবে। সে অনুযায়ী, সোমবার বিকেলে ওবায়দুল কাদেরকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুরে।
আরও পড়ুন- দেবী শেঠির আইডল শেখ হাসিনা, বললেন ডাকলেই আসবেন
ওবায়দুল কাদেরকে ডা. দেবী শেঠি দেখে যাওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে তার শারীরিক অবস্থার তথ্য জানান বিএসএমএমইউ উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসান।
ওই সংবাদ সম্মেলনেই বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন ডা. দেবী শেঠি। তিনি এমনকি ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীকেও বলেছেন, ইওর হাসব্যান্ড ইজ লাকি। এখানকার চিকিৎসকরা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, সেটা তাকে এ অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছে এবং ইউরোপ-আমেরিকাতেও এর চেয়ে বেশিকিছু করার নেই। এর চেয়ে বেশি কিছু যে করার ছিল না, এটি তিনি একাধিকবার বলেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসান জানান, সোমবার সকাল ৯টার পর থেকেই ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। তার রক্তের চাপ ১১০ থেকে ১৭০ পর্যন্ত রয়েছে, তবে মাঝে মাঝে সেটা ১২০ থেকে ১৩০ হচ্ছে। আবার স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। তবে তার রক্তে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্সহ আর যা কিছু সমস্যা ছিল, তার অনেকগুলোই মোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থায় এসেছে। তার ডায়াবেটিসও ছিল উচ্চ মাত্রায়, সেটিও নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। তিনি এখন নড়াচড়া করছেন, ভেন্টিলেশন খুলে দিতে ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
অধ্যাপক ডা. আহসান জানান, এরপর তারা ডা. দেবী শেঠির সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের সম্ভাব্য চিকিৎসা ব্যবস্থার সার্বিক দিক নিয়ে খুঁটিনাটি আলোচনা করে। তখন ডা. দেবী শেঠি বলেন, আপনাদের যদি তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা থাকে, তাহলে তাকে স্থানান্তর করার এটাই উপযুক্ত সময়। এসময় তিনি (ডা. দেবী শেঠি) তার নিজ দেশের রাজনীতিবিদ বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উদাহরণও টানেন।
আরও পড়ুন- ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে ঢাকা ছাড়ল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ওবায়দুল কাদেরের রক্তে ইনফেকশন রয়েছে, সেটা রোববারের তুলনায় সোমবার বেড়েছে। এ বিষয়টি উল্লেখ করে ডা. দেবী শেঠি বলেছেন, ইনফেকশন বেড়ে গেলে জটিলতাও বেড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে তাকে স্থানান্তর করার বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। ‘আপনাদের সিদ্ধান্ত সঠিক, আমারও পরামর্শ হবে এই মুহূর্তে তাকে স্থানান্তর করার,’— বলেন ডা. দেবী শেঠি।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ডা. দেবী শেঠির সাক্ষাতের সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনিও সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশে ওবায়দুল কাদেরকে যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে তার প্রশংসা করেছেন ডা. দেবী শেঠি। তিনি বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরের ওই শারীরিক পরিস্থিতিতে উন্নত দেশের চিকিৎসকরা যা করতে পারতেন, বাংলাদেশের চিকিৎসকরা সেটাই করে দেখিয়েছেন।
সারাবাংলা/জেএ/টিআর