বছর শেষে প্রবৃদ্ধি হবে ৭.৫ শতাংশ, পূর্বাভাস এডিবির
৪ মার্চ ২০১৯ ২২:০১
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: চলতি বছর শেষে অভ্যন্তরীণ চাহিদার উপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হার ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। এ অবস্থায় আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চার ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বেশকিছু পরামর্শও দিয়েছে।
সোমবার (৪ মার্চ) রাজধানীর হোটেল র্যাডিসন ব্লুকে এডিবি আয়োজিত ’রিজিওনাল ইকোনমিক আউটলুক’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ফরিদা নাসরিন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. ইয়াসুকি সোয়াদা।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, আগামীতে ঋণের উচ্চ সুদের হার বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি। এর ফলে মূলধন অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে। এছাড়া ব্রেক্সিট কার্যকর হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অস্থিরতার প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়তে পারে। বৈশ্বিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে তেলের দাম বৃদ্ধি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে পোশাক খাতে কর্মসংস্থান কমে আসার কারণেও অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে কর্মবাজারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগের পরিমাণ আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে এডিবি। এজন্য শ্রম নীতিমালা হালনাগাদ করা ও শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতিতে আগামীতেও পোশাক খাতের সম্ভাবনাকেই বড় করে দেখছে এডিবি। পাশাপাশি চামড়া শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে সম্ভাবনাময় বলা হয়েছে। এসব খাতের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক সহযোগিতা ও যোগাযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে এডিবি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০১৯ সাল শেষে প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আগের বছরের চেয়ে কিছুটা কম। ২০১৮ সালের শেষে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি। পূর্বাভাস কমানোর কারণ হিসাবে বলা হয়, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশের। আর চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতেও পড়তে পারে।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, বাংলাদেশ গত ১০ বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে গত তিন বছর টানা ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। রফতানি বহুমুখীকরণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে মনোযোগ বাড়ালে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, মার্কিন ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধে এশিয়ার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু সঠিক উদ্যোগ নিতে পারলে এ থেকে উপকৃতও হওয়া সম্ভব।
ড. মশিউর রহমান বলেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষ মানুষের কর্মসংস্থান কমাবে। কিন্তু জনশক্তিকে প্রশিক্ষিত করতে পারলে অবশ্যই নতুন শিল্প ক্ষেত্র ও কাজের সুযোগ বাড়ানো সম্ভব। উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনতে হলে মানুষের প্রয়োজন আছে। সরকারও বাড়তি জনসংখ্যাকে বোনাস হিসেবে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কর্মসংস্থান বাড়ছে না। এছাড়া দারিদ্র্য নিরোসনের হারও কমছে। প্রতিবছর মাথাপিছু আয় বাড়লেও চরম বৈষম্য বিরাজ করছে। সমঅর্থনীতির ভিয়েতনামে রফতানি আয় আমাদের চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। উদ্যোক্তা তৈরি, বৈশ্বিক বিনিয়োগ বাড়ানো ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিকে তিনি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর
এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক জিডিপি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি