Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নারী অবমাননা বন্ধে বদলাতে হবে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া


৬ মার্চ ২০১৯ ১৫:৪৪

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: শব্দ, বাক্য কিংবা উক্তির কোনও লৈঙ্গিক পরিচয় থাকার কথা না। কিন্তু পৃথিবীতে শুধু নারীকে অবমাননার জন্য রোজ ব্যবহার করা হচ্ছে নানা শব্দ। যখনই নারী উড়তে চেয়েছে, স্রোতের বিপরীতে যেতে চেয়েছে, নিজের অধিকার চেয়েছে তখনই তাকে এরকম নানা অপমানসূচক শব্দে জব্দ করার চেষ্টা হয়েছে।

বুধবার (৬ মার্চ) রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এক সংলাপে উঠে আসে এসব কথা। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন এইড ‘শব্দে জব্দ নারী’ শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজন করে।

শুরুতেই অ্যাকশন এইডের উইমেন রাইটস বিভাগের ম্যানেজার কাশফিয়া ফিরোজ একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। ১৪টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে তিনি জানান, ২০১৮ সালে দেশে মোট তিন হাজার ৯১৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।

এর মধ্যে ধর্ষণের সংখ্যা ৯৪২টি, গণধর্ষণ ১৮২টি এবং ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছে ৬৩জনকে। এছাড়া প্রতি তিনজন নারীর একজন পারিবারিক সহিংসতার শিকার বলেও জানানো হয়। নারীর প্রতি সহিংসতার একটি শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে তুলে ধরা হয় শব্দ বা বাক্যকে। বলা হয়, একজন নারীর মনোবল ভেঙে দিতে যথেষ্ট একটি শব্দ।

অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীরের সঞ্চালনায় সংলাপে অংশ নেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নানা শ্রেণি-পেশার দর্শকও।

নারী হিসেবে পথ চলা কেমন? এমন প্রশ্নের জবাবে নিজেরা করি’র সমন্বয়ক মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির বলেন, শুরুতে তিনি যখন কাজ শুরু করেন তখন তাকে অনেক কটুক্তি শুনতে হয়েছে। তবে সেগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন তিনি, এগুলোই তাকে পথ চলতে শক্তি জুগিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আলোচনায় উঠে আসে পাঠ্যবইয়ে নারীর প্রতি অবমাননাকর শব্দের কথা, সরকারি নথিতে বিধবা বা স্বামী পরিত্যাক্তা শব্দের ব্যবহারের কথা, বিভিন্ন প্রবাদ প্রবচনে নারীকে অবমাননা, উঠে আসে কর্মক্ষেত্রে শব্দভিত্তিক অসমতার কথাও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সালমা আকতার বলেন, নারী পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদের শুরুটা হয় ছোটবেলা থেকেই। আমাদের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াই একটি শিশুকে মেয়ে বা ছেলেতে পরিণত করে। ছেলে হলে কাঁদতে পারবে না, মেয়েরা হবে নরম স্বভাবের এগুলো সমাজ বা পরিবার শিখিয়ে দেয়। ফলে একজন পুরুষ নিজের ভেতরের আবেগকে প্রকাশ করতে পারে না। একসময় সেই অবরুদ্ধ আবেগই তাকে নারীর প্রতি সহিংস করে তোলে।

উল্টো কোনও পুরুষ নরম মনের হলে তাকে এর জন্য অপমান করা হয়। তাকে বলা হয় মেয়েলি। আর এই মেয়েলি শব্দের মাধ্যমে পক্ষান্তরে নারীকেই অপমান করা হয়।

দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন এবং নিউজ ২৪ এর প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী আলোচনা করেন গণমাধ্যমে শব্দের ব্যবহার নিয়ে। তারা জানান, শব্দের ব্যবহারে গণমাধ্যম এখন অনেক সচেতন। তবে বেশিরভাগ গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত নীতিমালা নেই বলেও জানালেন তারা।

শাহনাজ মুন্নী বলেন, যেহেতু শব্দ সংস্কৃতির অংশ, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অভ্যাসের মধ্যে আমরা বেঁচে থাকি সেহেতু নারীদের জন্য অবমাননাকর শব্দের ব্যবহার থেকে বের হওয়া আসতে সময় লাগবে। কারণ গণমাধ্যম তো সমাজবিচ্ছিন্ন নয়। তবে এটাও ঠিক যে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এরইমধ্যে দেশের বেশিরভাগ গণমাধ্যম নারীর প্রতি অবমাননাকর অনেক শব্দই ব্যবহার বন্ধ করেছে।

বিজ্ঞাপন

অ্যাকশন এইডের একটি জরিপ অনুযায়ী, ৮৮ শতাংশ নারী পথচারী কর্তৃক আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার হন, ৪৬ শতাংশ নারী আপত্তিকর ভাষায় যৌন হয়রানির শিকার হন। হয়রানীকারীদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ গাড়ি চালক এবং কন্ডাক্টরদের দ্বারা, ৬৯ শতাংশ দোকানদার ও বিক্রেতা।

প্রায় ৪৫ শতাংশ নারী এবং ১৮ শতাংশ পুরুষের মতে, নারীর প্রতি সম্মানবোধের অভাবই এই হয়রানির মূল কারণ।

কারণেই যারা নারীর প্রতি অবমাননাকর শব্দগুলো বেশি ব্যবহার করেন সেই পুরুষদের এই ধরনের সংলাপে বেশি অংশগ্রহণ নিশ্চিতের দাবি জানান একজন দর্শক।

সংলাপে উঠে আসে, নারীকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা থেকে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন রকমের অবমাননাকর শব্দ বা গালি। কোনও সন্তান খারাপ কাজ করলেও তার জন্য দায়ী করা হয় মায়ের গর্ভকে। মোটকথা নারীকে পুরুষের অধীন সম্পদ হিসেবে ধরে নিয়ে তাকে ছকে বাঁধতে, তার মনোবল ভাঙতেই তার জন্য এসব শব্দের প্রয়োগ করা হয়। তবে নারীকে, এইসব শব্দে জব্দ না হয়ে নিজের মতো করে বাঁচতে পরামর্শ দেন আলোচকরা। কোনও শব্দ দিয়েই যেন নারীকে জব্দ করা না যায় তেমন মানুষ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

মোটকথা নারী-পুরুষে সমতা আনতে এবং নারী অবমাননা বন্ধে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার প্রতিই জোর দেন আলোচক-দর্শকসহ সংশ্লিষ্টরা। কারণ সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যেই একজন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী তৈরি হয়।

সংলাপে আরও অংশ নেন চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আখতার এবং অ্যাকশন এইডের বোর্ড সদস্য ডা. খলিলুর রহমান।

সারাবাংলা/এসএমএন

অ্যাকশন এইড নারীর প্রতি অবমাননা নারীর প্রতি সহিংসতা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর