Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাটখড়িতে স্মৃতিকাতর প্রধানমন্ত্রী


৬ মার্চ ২০১৯ ১৭:০২

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: গ্রামে যারা বেড়ে উঠেছে, তাদের বেশিরভাগেরই ছোটবেলায় পাঠখড়ি দিয়ে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাদের মধ্যে যারা দীর্ঘদিন শহরে থাকছেন, সেসব কথা মনে করে স্মৃতিকাতর না হয়ে তাদের উপায় কী! জাতীয় পাট দিবসের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ঠিক তেমনই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাটখড়ি দিয়ে ছোটবেলায় খেলার সেই স্মৃতি তুলে ধরলেন।

বুধবার (৬ মার্চ) দুপুরে বঙ্গবন্ধু আর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় পাট দিবস-২০১৯’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাটের বহুমুখী ব্যবহার তুলে ধরতে থাকেন তিনি। তাতে উঠে আসে পাটখড়ির কথাও। আর তারই একপর্যায়ে উঠে আসে তার শৈশব-কৈশোরের কথা।

আরও পড়ুন- ‘পাটের কিছুই ফেলনা নয়, লোকসান হবে কেন?’

পাটের বহুমুখী ব্যবহারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পাট এমন একটি ফসল যে এর কিছুই ফেলা নয়। এর প্রতিটি অংশই কাজে লাগে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, পাটখড়ি থেকেই যেমন এখন আসবাবপত্র তৈরি হচ্ছে, চারকোল তৈরি হচ্ছে।

ঠিক এই সময়েই গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় কাটানো শৈশবের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা গ্রামে বড় হয়েছি। ছোটবেলায় পাটখড়ির মাথায় কচা গাছের আঠা লাগিয়ে সেই পাটখড়ি দিয়ে ফড়িং ধরে বেড়াতাম। শহরের ছেলেমেয়েরা হয়তো এই আনন্দ পায়নি। কিন্তু আমরা যারা ছোটবেলাটা গ্রামে কাটিয়েছি, তারা কিন্তু ছোটবেলায় এমন আনন্দ উপভোগ করেছি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, এছাড়া পাটখড়ি ভেঙে ছোট ছোট টুকরা করে একসঙ্গে ছেড়ে দিতাম। তারপর একটা কাঠি দিয়ে কে কয়টা সরিয়ে নিতে পারে— এরকম একটা খেলাও খেলাম। এখন কিন্তু বিদেশে এ ধরনের খেলার জন্য উন্নত মানের খেলনা পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা ছোটবেলাতেই এগুলো খেলেছি।

বিজ্ঞাপন

পরে পাট পাতা থেকে শুরু করে পাটের বিভিন্ন অংশের বৈচিত্র্যময় ব্যবহার তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পাতের পাতা কিন্তু ভালো একটি সবজি। পাট শাকে আয়রন বেশি। পাট শাক ডায়রিয়া, জ্বর থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগের জন্য কাজ করে। আবার পাট পাতা মাটিরও উর্বরতা বাড়ায়। এখন আবার পাটের চা’ও আবিষ্কার হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পাটখড়ি থেকে ফার্নিচার হচ্ছে, চারকোল হচ্ছে। পাটখড়ি একসময় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পাটখড়ি দিয়ে ঘরের বেড়াও দেওয়া হতো। আবার ভিসকস তৈরি হয় গাছের ছাল থেকে। সবচেয়ে ভালো যে ভিসকস, সেটি কিন্তু পাট থেকেই হয়। পাটের যে গোড়া, সেটাও ফেলা যায় না। অর্থাৎ পাটের কোনোকিছুই ফেলনা নয়।

আরও পড়ুন- সুনাম ছড়িয়ে পাটপণ্যের বিশ্ববাজার দখলের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

সোনালি আঁশ পাটকে বাঁচিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাট ক্ষেত প্রকৃতিবান্ধব। পাট পরিবেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কার্বন শোষণ করে। ফলে পরিবেশ রক্ষাতেও বিরাট অবদান রাখে।

তিনি বলেন, পাটকে কিভাবে আরও কাজে লাগাতে পারি আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে আমরা আইনের মাধ্যমে পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছি। তাছাড়া পাটপণ্যের মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা-২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ১৯টি পণ্যে এই মোড়কের ব্যবহার শুরু হয়েছে।

বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একসময় যাদের পাটের মিল ছিল অনেকেই খুব হতাশ ছিলেন। এখন ধীরে ধীরে তারা আবার উৎসাহিত হচ্ছেন। এর মধ্যে অনেককে আমরা পুরস্কার দিলাম। যারা পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি চাই আরও উদ্যোক্তা এগিয়ে আসুক।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, ‘সোনালি আঁশের সোনার দেশ, জাতির পিতার বাংলাদেশ’ স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে তৃতীয়বারের মতো পাট দিবস পালিত হচ্ছে এ বছর। দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে মন্ত্রণালয়। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো সাজানো হয়েছে পাট, পাটখড়ি, পাটের পণ্য, রঙ-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড দিয়ে। এছাড়াও ১৪টি ক্যাটাগরিতে ১৪ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পাট দিবসের পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মিজানুর রহমান।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

জাতীয় পাট দিবস পাটখড়ি পাটপণ্য প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

শরৎ বাংলাদেশের কোমল স্নিগ্ধ এক ঋতু
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৪

সম্পর্কিত খবর