ডাকসু নির্বাচন: ভিপি হলে সবার জন্য কাজ করবেন শোভন
৬ মার্চ ২০১৯ ১৯:৪৩
।। তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। আর পাঁচ দিন পর আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠেয় ভোটেই নির্বাচিত হবে শতাব্দী প্রাচীন এই বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী প্রতিনিধি। সেই নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন অংশ নিচ্ছেন ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) পদে। সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদের ব্যানার থেকে পুরোদমে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের দিচ্ছেন দিন বদলের প্রতিশ্রুতি।
শোভন জানালেন, বিশ্ববিদালয়ের হলগুলোর ক্যান্টিনে খাবারের মান, লাইব্রেরিতে পড়ালেখার পরিবেশ, চিকিৎসা সেবার মতো বিষয়গুলো নিয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজ করবেন তিনি। তবে কেবল শিক্ষার্থী নয়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত শোভন ঢাবি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার জন্যই কাজ করতে চান।
ডাকসুতে জিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিবেশে ছাত্রলীগ কি আদৌ কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে— সারাবাংলা প্রতিবেদকের এই প্রশ্নের উত্তরে শোভন বলেন, ‘দিন বদল সম্ভব এবং আমরা সেই দিন বদলেরই স্বপ্ন দেখছি। শিক্ষার্থীরা যদি আমাদের ওপর আস্থা রাখে, আমরা তাদের সিদ্ধান্তকে বৃথা যেতে দেবো না।’
ডাকসুর দায়িত্ব পেলে কোন কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে ছাত্রলীগ— জানতে চাইলে শোভন বলেন, ‘প্রথমেই ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকের দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করব। আমরা অবশ্যই চাইব, ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হোক এবং তাদের মধ্যে জ্ঞান সম্পর্কিত আলোচনার একটা ক্ষেত্র তৈরি হোক। যেন এদের কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ ভালো কিছু পায়।’
শোভন আরও বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, সে তখন অনেক স্বপ্ন নিয়েই ভর্তি হয়। ধীরে ধীরে তার সেই স্বপ্নগুলো ফিকে হতে থাকে। আমরা ছাত্রলীগ ডাকসুতে গেলে তার স্বপ্নগুলোকে ফিকে হয়ে যেতে দেবো না।’
শোভন পড়ালেখা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। তার দাদা শামসুল হক চৌধুরী ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এবং ৬ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যে অন্যতম। কুড়িগ্রাম-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৯৭৩ এবং ১৯৭৯ সালে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বর্তমান নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান শোভনের বাবা।
ঐতিহ্যগতভাবেই রাজনৈতিক পরিবারের মানুষ শোভন। ছাত্র সংসদে বিজয়ী হতে কিংবা বিজয়ের দেখা পেয়ে গেলে কেমন রাজনীতি করবেন তিনি? শোভন বলেন, ‘আমার রাজনীতি সবসময় বঙ্গবন্ধুরে আদর্শের রাজনীতি। জাতির জনক যেমন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়েছেন, আমিও ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী— সবার অধিকার আদায়ে লড়ার চেষ্টা করব সবসময়।’
ডাকসুর সহসভাপতি হয়ে গেলে ফলপ্রদ কোন কাজগুলো করবেন— জানতে চাইলে শোভন ক্যান্টিনের খাবারের মান বাড়ানোর কথা বলেন। তার মতে, শিক্ষার্থীরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার খাচ্ছে এবং এই খাবারে পরিমাণমতো পুষ্টিও পাচ্ছে না। নির্বাচিত হলে সব হলেই খাবারের মান বাড়ানোর জন্য ছাত্রলীগের হয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল ও লাইব্রেরির সেবার মান বাড়ানোর কথা বলেন শোভন।
ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, জাতি গঠনে পড়ালেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর পড়ালেখার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। সেই সঙ্গে আমাদের মেডিকেল সেন্টারে সিট সংখ্যা বৃদ্ধি করতে চাই, যেন আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা এখানে উন্নত চিকিৎসা সেবা পায়।’
শোভন জানান, সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মতামত নিচ্ছে ছাত্রলীগ। এজন্য প্রতিটি হলে বসানো হয়েছে মতামত বক্স। যে কেউ নিজের পরিচয় গোপন রেখে এসব বক্সে রেখে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত বিভিন্ন মতামত।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন। এবারের ডাকসু নির্বাচনে শোভন ছাড়াও কেন্দ্রীয় সংসদে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২০ জন প্রার্থী। এদের মধ্য থেকে একজন ভিপিকে নির্বাচিত করতে ভোট দেবেন সর্বমোট ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী।
সারাবাংলা/টিএস/টিআর
ছাত্রলীগ ছাত্রলীগের ভিপি প্রার্থী ডাকসু নির্বাচন ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ