Thursday 03 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কেমিক্যাল গোডাউন থেকেই আগুন, ছড়ানোর কারণ দাহ্য প্রসাধনী


৬ মার্চ ২০১৯ ১৯:৫৯
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: রাজধানীর চকবাজার চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনের সূত্রপাত ওয়াহেদ ম্যানসনের কেমিক্যাল গোডাউন থেকে। ওইদিন ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ার কারণ গোডাউনে থাকা দাহ্য প্রসাধনী ও তার বিপুল মজুদ।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (আইইবি) গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।

সম্ভাব্য তিন কারণে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি অ্যাকুমুলেশন অ্যান্ড ডিসচার্জ, বৈদ্যুতিক সুইচ অন করার সময় সৃষ্ট স্ফুলিঙ্গ ও দাহ্য পদার্থের মজুদে সংলগ্ন এলাকায় কর্মরত ব্যক্তিদের অসাবধানতাবশত জ্বালানো আগুন থেকে সূত্রপাত হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

আইইবির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী খন্দকার মনজুর মোর্শেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় আগুন লাগার পর ২৩ ফেব্রুয়ারি আইইবির পক্ষ থেকে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাপেক্ষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দেন। গত শনিবার (৩ মার্চ) প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত কমিটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টা জামে মসজিদের পাশের ওয়াহেদ ম্যানসনে হঠাৎ ও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সেখানে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ এবং ক্যামেরায় তোলা কিছু ভিডিওতে আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। যদিও এই ঘটনার পর অনেকে দাবি করেছেন যে, আগুনটা বাইরে থেকে শুরু হয়ে ভবনে ছড়িয়েছে। কিন্তু মসজিদের পাশের সিসিটিভি ফুটেজে বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে এয়ার ফ্রেশনারের ক্যান দেখা যায়। তাতে আপাতত দৃষ্টিতে আগুন ওয়াহেদ মানসনের দোতলা হতে শুরু হয়েছে বলে ধারণা হয়।

বিপুল পরিমাণে অতিদাহ্য পদার্থ এই ভবনে থাকায় ভয়াবহ আগুনের বিস্ফোরণে বাইরের দেয়াল ভেঙে পড়েছে ও অভ্যন্তরীণ দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়েছে। তবে ভেতরের দিকে অক্সিজেনের সরবরাহ কম থাকায় আগুন সেদিক বাড়তে পারেনি। এ জন্য ওয়াহেদ ম্যানসনের সঙ্গে থাকা ওয়াহেদ মঞ্জিলের কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং রাস্তার দিকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।

ওয়াহেদ মঞ্জিলের একতলার সিঁড়ি ঘরেও তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, ওয়াহেদ ম্যানসনের আশেপাশে ডিপিডিসির বৈদ্যুতিক কোনো ট্রান্সফরমার ছিল না। বা বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনেও শর্টসার্কিটের কোনো আলামত ছিল না। ট্রান্সফরমার যেখানে ছিল তা সেখানে অক্ষত অবস্থায় ছিল। বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনও অক্ষত ছিল বলে পরিদর্শনে প্রমাণ পান তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটি সদস্যরা সরেজমিন পরিদর্শনে আরও জানতে পারেন, প্লাস্টিক দানা নেওয়ার জন্য যে পিকআপ ভ্যানটি ওয়াহেদ ম্যানসনের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল তা ডিজেলচালিত ছিল। অপর একটি পিকআপ বা মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে রিপোর্ট করা হয়েছে। তবে সেখানকার সিলিন্ডারও অক্ষত ছিল বলে দেখা গেছে। এমনকি ওয়াহেদ ম্যানসনের দ্বিতীয় তলায় বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রীর মজুদের ভস্মীভূত ও প্রায় অক্ষত অবশেষও দেখা যায়। এর মধ্যে অ্যালমন্ড অয়েল, কাস্টার অয়েল, অলিভ অয়েল, এয়ার ফ্রেশনার ‍ও সুগন্ধী ছিল। আরও কিছু প্রসাধনীর অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়, যা শনাক্ত করা যায়নি।

তদন্ত কমিটি স্থানীয়দের সাথে আলোচনা করে জানতে পেরেছে, ওয়াহেদ ম্যানসনের দ্বিতীয় তলায় প্রসাধনী সামগ্রী মজুদ ছাড়াও খালি ক্যানে পারফিউম ও এয়ার ফ্রেশনার রিফিল করা হতো।

ওয়াহেদ ম্যানসনে যা পাওয়া যায়, তার প্রতিটি উদ্বায়ী এবং দাহ্য পদার্থ। পারফিউমের অন্যতম উপাদান ইথানলের ফ্লাশ পয়েন্ট ১৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এয়ার ফ্রেশনারের ক্যানে প্রোপিলেন্ট হিসেবে এলপিজি ব্যবহৃত হয়। বাতাসে এয়ার ফ্রেশনারের ঘনত্ব আনুমানিক শতকরা এক ভাগ হলেই তা দাহ্যতার নিম্নসীমা অতিক্রম করে এবং স্ফুলিঙ্গের উপস্থিতিতে আগুন ধরে বিস্ফোরণ হতে পারে। এলপিজি সাধারণত নিচু ও বদ্ধ জায়গায় জমা হয়।

জমাট বাধা এলপিজি অনেকদুর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে এবং স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে আসা মাত্র ফ্লাশব্যাকের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। এমনকি ওয়াহেদ ম্যানসনের দোতলায় পাশের রুমে সুইসবোর্ডেও বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা যায় সেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

প্রতিবেদনের সার্বিক পর্যালোচনায় বলা হয়, ঢাকা শহরে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অন্তত ৫৪টি সংস্থা উন্নয়নমূলক কাজ করে। এসব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। কর্মকাণ্ডের পরিধির মধ্যে দ্বৈততা আছে। যার প্রেক্ষাপটে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা পরিলক্ষিত হয। সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ড পরিচালনা, পরিদর্শন ও মনিটরিংয়ের জন্য একক কোনো মন্ত্রণালয়, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নিয়োজিত নেই। সংস্থাগুলোর যে সব আইন ও বিধি আছে সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নেই বলে পুরান ঢাকার কেমিক্যালের ব্যবসা বহুদিন ধরে চলে আসছে যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজার চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানসনে আগুনে ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট ১৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এ ঘটনায় আইইবির পক্ষ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে সরেজিমন তদন্ত করেন। ৩ মার্চ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

চকবাজার চুড়িহাট্টা পুরান ঢাকা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর