Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যে বিড়াল ইঁদুর ধরতে পারে না, সেই বিড়ালের দরকার কী: হাইকোর্ট


৬ মার্চ ২০১৯ ২০:২২

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: বিনা অপরাধে তিন বছর জেল খেটে মুক্তি পাওয়া জাহালমের মামলায় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ ১৮টি ব্যাংককে পক্ষভুক্তির আবেদনের শুনানিকালে আদালত দুদককে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আপনাদের অনেক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। যে বিড়াল ইঁদুর ধরতে পারে না সেই বিড়াল থাকার দরকার কী?

এ মামলার শুনানিকালে বুধবার (৬ মার্চ) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই  মন্তব্য করেন।

শুনানি শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করার আবেদন গ্রহণ করে আদালত জাহালমকাণ্ডে সম্পৃক্ত বাকি ব্যাংকগুলোকেও পক্ষভুক্ত করার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে জাহালমের বিরুদ্ধে দুদকের করা সব মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর), অভিযোগপত্রসহ(সিএস) যাবতীয় নথি দাখিলের নির্দেশ দেন। আগামী ১০ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির তারিখ ঠিক করে দেন আদালত।

আসামি না হয়েও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় পাটকলকর্মী জাহালমের তিন বছর জেল খাটার ঘটনায় মঙ্গলবার দুদক হলফনামা আকারে ব্যাখ্যা দাখিল করে এবং পাঁচটি ব্যাংককে পক্ষভুক্তির আবেদন করেন।

আজ শুনানির শুরুতেই দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রথম আলো পত্রিকায় জাহালমের ঘটনায় দুদকের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত প্রকাশিত খবর আদালতে তুলে ধরেন। এসময় তিনি আদালতের কাছে আরজি জানান, কোর্ট প্রসেডিংসের বাইরে সাংবাদিকরা যাতে কিছু না লেখে।

তখন এক বিচারক জানতে চান প্রকাশিত খবরে যে উদ্ধৃত করা হয়েছে, সেটা কি আপনি দিয়েছেন?

জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, হ্যাঁ, বক্তব্যটা আমি দিয়েছি। কিন্তু এটাও বলেছি যে, এটা সাবজুডিস মেটার। আপনি নিউজটা দেখেন, লিখেছে, দুদক এখন দায় নিচ্ছে না। একটা পারসেপশন দাঁড় করানো হচ্ছে। একটি বিচারাধীন বিষয়ে ডিসিশন দিয়ে দিচ্ছে। দায় কার এটাতো এখনও আমরা বলতে পারছি না। তাই কোর্ট প্রসেডিংসের বাইরে না লেখার বিষয়ে কিছু বলুন।

বিজ্ঞাপন

আদালত তাতে সায় না দিলেও বলেছে, কোর্ট প্রসেডিংসের বাইরের আসলে লেখা যায় না।

খুরশীদ আলম খান তখন বলেন, এটা তো তারা মানছে না।

আদালত তখন বলে, মতামত বা পারসেপশন তৈরি হয় এমন মন্তব্য করবেন না। দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। দুদক সম্পর্কে খারাপ পারসেপশন হোক আমরা তা চাই না। তবে দুদককেও ক্লিন হতে হবে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। আগে দুর্নীতিবাজদের মানুষ ঘৃণা করত। আমাদের নৈতিক অধঃপতন হয়েছে।

তখন দুদক আইনজীবী বলেন, আমরা স্বাধীন, কিন্তু কিছু সিডিউল দিয়ে তো আমাদের হাত-পা বাঁধা। সিডিউলের মধ্যে থেকেই তো আমাদের কাজ করতে হয়।

এ পর্যায়ে আদালত বলে, যেটুকুই আছে সেটুকুই করেন। সেটুক করলেই তো হয়। স্বাধীনতা পাবেন আর সেভাবে কাজ করতে পারবেন না, এটা তো হতে পারে না।

শুনানির এক পর্যায়ে দুদক আইনজীবী জাহালমকাণ্ডে পাঁচটা ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করলে আদালত বলে, অন্যগুলোকে কেন করলেন না? পিক অ্যান্ড চুস করছেন নাকি?

খুরশীদ আলম খান তখন বলেন, অগ্রণী ব্যাংকের একটি শাখা ছিল, ওটাকে করিনি।

আদালত বলে, অগ্রণী ব্যাংককে কেন বাদ দিলেন?

জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, যে কয়টা ব্যাংককে পক্ষভুক্ত করেছি, এদের মধ্যে দিয়ে পুরো ঘটনাটা বোঝা সম্ভব মনে করেছি তাই।

আদালত তখন বলে, মিস্টার খান, স্টেট কোয়েশ্চান টু ইউ -মামলা যেহেতেু করেছেন তাহলে অগ্রণী ব্যাংককে কেন পার্টি করলেন না? ইসলামি ব্যাংক বাদ দিলেন কেন? ব্যাংক কয়টা?

জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, ১৮টা। সময়ের কারণে আমি গোছাতে পারিনি। সব আমি দিবো।

তখন আদালত বলে, আজ কেন দেওয়া হয়নি? তাহলে আজ কেন এসেছেন? চার্জশীট কোথায়?

বিজ্ঞাপন

দুদক আইনজীবী বলেন, কমপ্লাইনস দিতে হবে তাই তাড়াহুড়া করে দিয়েছি। আমাকে একটু সময় দেন। সব দিব।

আদালত তখন বলে, কত সময়? তাহলে কেন আমাদের সময় নষ্ট করছেন?

এ পর্যায়ে খুরশীদ আলম খান জাহালমের ঘটনায় দুদক কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা আদালতে তুলে ধরতে চাইলে আদালত বলেন, কোনো স্টেপ নেননি। ১৬৪ ধারায় এক আসামি যে জবানবন্দি দিয়েছে সেটা কেন চার্জশীটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। হাউ ডেঞ্জেরাস!

খুরশীদ আলম খান তখন বলেন, একটা তদন্ত কমিটি হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতিসংক্রান্ত মামলাগুলোর অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন বিচারিক আদালতে জমা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে জাহালমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার চেয়েও বিচারিক আদালতে আবেদন করা হয়।

খুরশীদ আলম হলফনামা থেকে তথ্য তুলে ধরে আদালতকে বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাসহ সাক্ষীরা জাহালমকে সালেক বলে শনাক্ত করেন। তবে অধিকতর তদন্তে জানা যায়, প্রকৃত আসামি সালেকের বাড়ি ঠাকুরগাঁও।

আদালত তখন দুদক আইনজীবী কাছে জানতে চায়, কবে দুদক জানতে পারল যে জাহালম সালেক না। উত্তরে খুরশীদ আলম খান বলেন, গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি জানতে পেরেছি। চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে জাহালমের বিষয়ে রিপোর্ট আসার পর জাহালম যে নির্দোষ সে বিষয়ে দুদক তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়।

সে তদন্তে জাহালম যে নির্দোষ তা উঠে আসে। তদন্তে দেখা গেছে যে, সে অভিযুক্ত না। তাই আমরা তো বিষয়টি নিয়ে সঠিক পথেই আছি।

আদালত তখন আবারও বলে, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের রিপোর্ট হওয়ার আগে তিনি (তদন্ত কর্মকর্তা) কি করেছেন? দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আপনাদের অনেক স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। যে বিড়াল ইঁদুর ধরতে পারে না সেই বিড়াল থাকার দরকার কি?

জবাবে দুদক আইনজীবী বলেন, আমাদেরও তো সীমাবদ্ধতা আছে।

আদালত তখন বলে, কবে আপনারা জানলেন জাহালম নির্দোষ আর কবে আদালতে অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেন?

খুরশীদ আলম খান জানান, অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন তিনি আদালতে নিয়ে এসেছেন। এগুলো সবই তিনি আদালতে জমা দেবেন।

আদালত তখন দুদক আইনজীবীকে বলে, যখন আপনারা জানতে পারলেন জাহালম নির্দোষ, তখন আপনাদের উচিত ছিল জাহালমের জামিনের ব্যবস্থা করা। জাহালম বলে আসছেন, সে নির্দোষ। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এর দায় আপনাদের নিতেই হবে। যখন জানতে পারলেন সে নিরপরাধ। জানার পরেও কেন তার জামিনের ব্যবস্থা করলেন না? এটার দায় আপনাদের নিতে হবে।

দুদকের আইনজীবী তখন বলেন, জাহালমকে যে ২৬ মামলার আসামি করা হয়, সে–সংক্রান্ত সব কাগজপত্র আদালতে জমা দেওয়া হবে।

আদালত তখন বলে, সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনার ৩৩টি মামলার সব কাগজপত্র আদালতে জমা দেবেন। আমরা সব দেখব। এই যে ভুলভাবে মামলার আসামি করলেন এটা স্পেসিফিকভাবে হলফনামায় নাই কেন?

খুরশীদ আলম খান বলেন, দিব, সব দিব। সবাইকে পার্টি করবো। চার্জশীট দিব।

পরে আদালত সব মামলার নথি দাখিলের নির্দেশ দিয়ে শুনানি শেষ করেন।

এ সময় আদালতে জাহালমের পক্ষে আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

সারাবাংলা/এজেডকে/এনএইচ

জাহালমকাণ্ড দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হাইকোর্টের মন্তব্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর