।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: চকবাজারের চুড়িহাট্টায় দগ্ধ হওয়ার পর ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত হওয়া আরও দুই মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ নিয়ে শনাক্ত হওয়া ১১টি মরদেহের মধ্যে ১০টি হস্তান্তর করা হলো স্বজনদের কাছে। দুলাল নামে একজনের মরদেহ নিতে এখনও আসেননি কেউ।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গ থেকে চুড়িহাট্টায় দগ্ধ নুরুল হক (৩৩) ও ইব্রাহিমের (২৮) মরদেহ তাদের স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
নুরুল হকের মরদেহ বুঝে নিতে এসেছিলেন তার ভাই আইনুল হক। তিনি জানান, তার মা সুকা খাতুন, বাবা আতাব মিয়া। তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ। নুরুল হক থাকতেন ইসলামবাগ এলাকায়। চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনে সবজি বিক্রি করতেন তিনি।
আইনুল জানান, ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় আগুন লাগার পর থেকেই তার ভাইকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। চুড়িহাট্টা থেকে উদ্ধার হওয়া লাশগুলোর মধ্যে যেগুলো শনাক্ত করা গেছে, তার মধ্যেও ছিল না নুরুল হকের মরদেহ। পরে তারা লাশ শনাক্ত করার জন্য ডিএনএ নমুনা জমা দেন। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করা হয়।
আইনুল হক বলেন, গতকাল (বুধবার) আমাদের জানানো হয় ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে। রাতেই কিশোরগঞ্জ থেকে আমরা রওনা দিয়ে ঢাকায় আসি। এখন ভাইয়ের লাশ নিয়ে ফিরব বাড়িতে।
অন্যদিকে, ইব্রাহিমের লাশ নিতে এসেছিলেন তার স্ত্রী রোকসানা বেগম ও মেয়ে বৃষ্টি। রোকসানা জানান, ইব্রাহিমের মা রহিমা খাতুন, বাবা নূর হোসেন। তাদের বাড়ি শরিয়তপুরের বোশাইর হাটের কোদালপুর গ্রামে। পেশায় অটোরিকশাচালক ইব্রাহিম থাকতেন কামরাঙ্গীরচর মজিবর ঘাট এলাকায়।
রোকসানা বেগম বলেন, ওই দিন (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে আগুন লাগার খবর পাই। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ইব্রাহিমের কোনো সন্ধান পাইনি। পরে আমাদের পরীক্ষার জন্য ডিএনএ নেয়। কাল (বুধবার) ফোন দিয়ে জানায়, ইব্রাহিমের লাশ শনাক্ত করা গেছে। কাল আসতে পারিনি, তাই আজ মেয়েকে নিয়ে এসেছি লাশ বুঝে নিতে।
এদিকে, ছেলের কোনো সন্ধান না পেয়ে ইব্রাহিমের মা রহিমা খাতুন গত সোমবার (৪ মার্চ) মারা গেছেন বলে জানান রোকসানা। তিনি বলেন, ইব্রাহিমকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে আমরা ধরেই নেই সে আগুনে পুড়ে মারা গেছে। ওই দিন থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন মা। তিনি আর সুস্থ হননি। শেষ পর্যন্ত সোমবার মারা গেছেন।
ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম জানান, চুড়িহাট্টায় আগুনে পোড়া লাশগুলোর মধ্যে ১৯টি লাশ সাধারণভাবে শনাক্ত করা যায়নি। পরে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা নিয়ে ১১টি লাশ শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে বুধবার আটটি লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আজ আরও দু’টি লাশ হস্তান্তর করা হলো। দুলাল নামে আরও একজনের লাশ এখনও কেউ নিতে আসেনি। তার স্বজনরা এলেই লাশটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
শফিকুল ইসলাম জানান, লাশগুলোর দাফনসহ আনুষাঙ্গিক খরচের জন্য প্রতিটি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
সারাবাংলা/এসএসআর/আরএ/টিআর