ছিঁড়ে পড়া লিফটের সেন্সর-সিগন্যাল বাতি ছিল না
৭ মার্চ ২০১৯ ২১:৪৭
।। আরিফুল ইসলাম, স্টাফ কেরসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের লিফটটি অনেক আগে থেকেই ত্রুটিপূর্ণ ছিল। প্রায়শই এটি অব্যবহৃত থাকত। এছাড়া এটিতে ছিল না কোনো সেন্সর কিংবা সিগন্যাল বাতিও।
মাঝেমধ্যে লিফটম্যান নিজ উদ্যোগে এটি মেরামত করে চালু রাখতেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ত্রুটিপূর্ণ লিফটি ছিঁড়ে পড়ে। এতে লিফটম্যানসহ ১২ জন আহত হয়েছেন। তাদের বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
জানা যায়, লিফটটি ১৯৮০ সালের দিকে আদালত ভবনে লাগানো হয়। ওই লিফটটি আটজনকে বহন করার ধারণ ক্ষমতায় তৈরি করা হয়। কিন্তু লিফটটি যখন বন্ধ বা ওভারলোড হয় তখন কোনো সেন্সর কিংবা সংকেত বাতি জ্বলে না।
লিফটটের সবকিছু হাত দিয়ে (অ্যানালগ) পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবহার হয়ে আসছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত আরোহী ও অতিরিক্ত ওজনের কারণে লিফটি ছিঁড়ে পড়ে।
লিফটটির ধারণক্ষমতা আটজন। প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে লিফটি ছিঁড়ে পড়ার পর ভেতর থেকে ১২ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটি, না অতিরিক্ত আরোহীর কারণে লিফট ছিড়ে পড়ে কি তা তদন্ত শেষে জানা যাবে। এর আগে কিছুই বলা যাবে না।’
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির তারিকুল আলম বলেন, ‘এ দুর্ঘটনার পরপরই আমরা কোতয়ালী থানায় একটি জিডি করেছি। দুর্ঘটনার কারণ এ মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নেজারত শাখার জারি কারক আক্তার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ লিফটটা রশিদ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান মেইনটেন্যান্স করে। লিফটটা অনেক পুরনো। অনেক সময় বন্ধ থাকত। কোনো বাতি ছিল না। কোনো সিগন্যালও নাই। ঠিকমতো এটির রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো না। কোনো সমস্যা দেখা দিলে লিফটম্যান সেটি ঠিক করতেন।’
আসাদুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি প্রতিদিনের মত বসে কাজ করছিলাম। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ করে বিকট একটি শব্দ শুনতে পাই। এরপর চারদিকে আমার সামনে ধুলোয় অন্ধকার হয়ে যায়। মনে হচ্ছিল বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে শব্দটি ঠিক তেমন। এর কিছুসময় পরই সামনে তাঁকিয়ে দেখি লিফটের ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। ওই সময় তৌহিদ নামের এক ব্যক্তি দ্রুত লিফটের দরজা খোলেন। লিফটের ভেতরের সবাই অনেকটা অজ্ঞান অবস্থায় ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমি আটকাপড়া ৪/৫ জনকে লিফটের ভেতর থেকে বের করি। এদের মধ্যে একজন পায়ে ব্যথা পেয়েছে। বাকিরা রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল। সকলেই গুরুতর আহত ছিল। এরপর আমিসহ আরও কয়েকজন মিলে তাদেরকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। এদের মধ্যে লিফটম্যান জাহাঙ্গীরের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।’
সারাবাংলা/এআই/একে