এমএইচ৩৭০: বিহ্বলতা ও রহস্যের ৫ বছর
৮ মার্চ ২০১৯ ১৫:২৮
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
এমএইচ৩৭০ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা অনেক গুজবের জন্ম দিয়েছে। নিখোঁজ হওয়ার পর পাঁচ বছর হয়ে গেলেও আচমকা রাডার থেকে মুছে যাওয়া বিমানটির কোনো খোঁজ আজও পাওয়া যায়নি। গুজব ছড়ানো অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু বিমানের সঙ্গে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া আরোহীদের পরিবারের জন্য এই পাঁচ বছর ছিল শোক, বিহ্বলতা আর অবিশ্বাসে ভরা। এই পাঁচ বছরে পৃথিবীর ইতিহাসে বিমান ঘিরে সৃষ্ট সবচেয়ে বড় রহস্যের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘এমএইচথ্রিসেভেন্টি’।
২০১৪ সালের ৮ মার্চ রাডার থেকে ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় এমএইচ৩৭০। বিমানের ২২৭ যাত্রীর একজন ছিল কেএস নারেন্দ্রানের স্ত্রী। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি প্রতি বছর মার্চ মাসে তিনি ভারতের চেন্নাই থেকে কুয়ালালামপুর সফর করেছেন বিমানে করে। মূলত স্ত্রীর স্মরণে ও মালয়েশিয়া সরকারের ওপর খোঁজ অব্যাহত রাখতে চাপ বৃদ্ধি করতেই কুয়ালালামপুর যান তিনি।
পাঁচ বছর পূর্তি
শুক্রবার (৮ মার্চ) বিমানটি নিশ্চিহ্ন হওয়ার পাঁচ বছর পূর্ণ হল। এতদিনে স্মীত হয়েছে শোক আর ক্ষোভ দু’টোই। নারেন্দ্রান জানান, এইবার সফরটি করবেন কিনা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি এখানে (কুয়ালালামপুর) আসা নিয়ে দোটানায় ভুগছিলাম। যা বলার ছিল, এতদিনে তা তো বলা হয়েই গেছে।
কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে এক ঘণ্টা পরই বোয়িং ৭৭৭-২০০ মডেলের বিমানটি রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। যদিও বেইজিং পৌঁছাতে বিমানটির ছয় ঘণ্টার মতো সময় লাগার কথা ছিল। ধারণা করা হয়, বিমানটির যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।
পরবর্তীতে সামরিক রাডার বিশ্লেষণ করে জানা যায়, বিমানটি মাঝপথে মালয়েশিয়া ফেরত আসা শুরু করে। পেনাং দ্বীপের ওপর দিয়ে একটি চক্কর দিয়ে সুমাত্রা দ্বীপের দিকে যাত্রা করেছিল। কিন্তু এরপর বিমানটি ও এর আরোহীদের ভাগ্যে কি ঘটেছে সে বিষয়ে কোনো খবর আজও মেলেনি।
প্রায় ২৬টি দেশ যৌথভাবে বিমানটির সন্ধান বের করতে খোঁজ ও উদ্ধার অভিযান চালায়। কিন্তু কিছুই পাওয়া যায়নি।
কয়েক সপ্তাহ পর মালয়েশিয়া সরকার জানায়, জ্বালানি শেষ হওয়া পর্যন্ত উড়ছিল এমএইচ৩৭০। তবে কোথায় গিয়ে জ্বালানি শেষ হয়েছে সেটা জানা যায়নি। সম্ভাব্য জায়গা হিসেবে ধরা হয়, বেইজিং থেকে ভারত মহাসাগরের তলদেশ পর্যন্ত হাজার হাজার মাইল।
পরবর্তীতে কর্মকর্তারা জানতে পারেন, রাডার থেকে মুছে গেলেও, ইমারস্যাট সিস্টেম থেকে পাঠানো স্যাটেলাইট সংকেতে সাড়া দিচ্ছিল বিমানটি। ওই সিস্টেম ব্যবহার করে তারা বিমানটির সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে একটি নকশা তৈরি করেন।
শুরুতে ফিরে যাওয়া
এমএইচ৩৭০ নিয়ে প্রথম সরকারি প্রতিবেদন প্রকাশ পায় গত জুলাই মাসে। প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটিতে নতুন উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পর এ বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকার যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি। পাঁচ বছর পর কেবল বিমানটির কিছু ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। তবে এমএইচ৩৭০ ও এর আরোহীদের ভাগ্যে কি ঘটেছে সে বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময় হয়েছে আবার প্রথম থেকে তদন্ত শুরু করার।
মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল এয়ার ডিজাস্টার এলায়েন্স ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক গেইল ডুরহাম বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার সময় বেইজিংয়ে ছিলেন।
তিনি বলেন, সরকারকে সব প্রকাশ করে আবার শুরু থেকে শুরু করতে হবে। বিজ্ঞানীরা সেটাই করে। আমাদের কাছে যা আছে আর আমরা যা জানি তার ওপর ভিত্তি করেই আমাদের খুঁজতে হবে এখন। আমাদের আর হারাবার কিছু নেই।
বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পর এই বিপর্যয় সামলাতে মালয়েশিয়া সরকারের ঢিলেঢালা পদক্ষেপ তীব্রভাবে সমালোচিত হয়েছে। কিন্তু গত মে মাসে ওই প্রশাসন বিদায় নিয়েছে। ৬০ বছর পর দেশে এসেছে নতুন সরকার। অনেকের প্রত্যাশা ছিল, নতুন সরকার এমএইচ৩৭০’র সন্ধান বের করতে নতুন করে উদ্যোগ নেবে।
নারেন্দ্রান বলেন, কিছুটা প্রত্যাশা ছিল যে, এবার কিছু পরিবর্তন আসবে। কিন্তু নতুন সরকারের আচরণে মনে হচ্ছে তাদের কাছে ঘটনাটি অতীতের কোন বিপর্যয়। তারা এটা ভুলে যেতে চায়।
গ্রহণযোগ্য সূত্র
রোববার (৩ মার্চ) বিমানের যাত্রীদের স্মরণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তাদের পরিবারের সদস্যরা। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন মালয়েশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী অ্যান্থনি লোকে। প্রথমবারের মতো বিমানের উদ্ধারকৃত ধ্বংসাবশেষগুলো নিরীক্ষা করেন ও নিখোঁজদের স্মরণে একটি গাছ লাগান।
তিনি বলেন, তদন্তে জোগাড় হওয়া সব তথ্য ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তবে সরকার বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের ওপর ভিত্তি করে নতুন করে খোঁজ অভিযান চালুর প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখবে।
মালয়েশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের অপেক্ষায় আছি। বিশেষ করে ওশান ইনফিনিটি’র কাছ থেকে।
উল্লেখ্য, ওশান ইনফিনিটি হচ্ছে মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থা। সংস্থাটি মালয়েশিয় সরকারে পক্ষে সাগরে বিমানটির খোঁজ চালিয়েছে।
সারাবাংলা/ আরএ