রাশেদ খান কোনো ধর্মকে কটাক্ষ করেননি : নাসিম
৮ মার্চ ২০১৯ ১৫:২৩
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন, ১৪ দলের মুখপাত্র ও সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। এই ঘটনাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে নাসিম বলেন, একটি তথাকথিত ধর্মান্ধ দল রাশেদ খানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করতে আবার মাঠে নেমেছে। তিনি কোনো ধর্মকে নিয়ে কোনো কটাক্ষ করেন নাই।
শুক্রবার (৮মার্চ) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে নাসিম এই দাবি করেন।
১৪ দলের শরিক রাশেদ খান মেননের বক্তব্য নিয়ে বিক্ষোভের ঘটনা প্রসঙ্গে নাসিম বলেন, তিনি একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, একজন বিজ্ঞ পার্লাামেন্টারিয়ান। পার্লামেন্টে তিনি বক্তব্যে যে কথাটি বলেছেন, সেই কথাটির ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আজকে তথাকথিত ধর্মান্ধ একটি দল আবার মাঠে নেমেছে। তারা তার বিরুদ্ধে মিছিল করেছে। তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এই সদস্য জানান, আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, রাশেদ খান মেনন একটি গণতান্ত্রিক দলের প্রধান। তিনি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। তিনি কোনভাবে ধর্মকে নিয়ে কোনো কটাক্ষ করেন নাই। প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দেওয়ায় তিনি বরং প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, এর মাধ্যমে যেন কোনো সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়া না হয়। কোন ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি করা না হয়, এটা তিনি ষ্পষ্ট বলেছেন। কিন্তু তার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আজকে এই চেনা মহলটি আবার মাঠে নেমেছে।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে নাসিম বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না। কারণ আমরা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করি। যার যার ধর্ম সে পালন করবে, এটা বিশ্বাস করি। এই দেশে কোনদিন সাম্প্রদায়িক রাজনীতি হবে না, এটা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।
স্থানীয় সরকারের আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করাকে দুঃখজনক ঘটনা দাবি করে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম বলেন, ইলেকশন বর্জন করে, ইলেকশন ভণ্ডুল করে তারা গত কয়েক বছরে কোনো কিছু অর্জন করতে পারেন নাই। তারা আবারও সেই ভুল পথে যাচ্ছে। তাদের দলকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে।
শপথ নিয়ে সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের সংসদে যোগদানের বিষয়টি উল্লেখ করে ১৪ দলের পক্ষ থেকে অন্যান্য দল থেকে নির্বাচিতদের শপথ নেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি। নির্বাচিত হয়ে এখনো যারা শপথ গ্রহণ করেনি তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংসদে এসে সরকারের ভুল ধরিয়ে দেন। সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। এই পথই আপনাদের একমাত্র পথ। অন্য কোনো পথে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে, নামকাওয়াস্তে আন্দোলন করে আপনাদের নেত্রীকে মুক্তি করতে পারবেন না। জনগণের কথা বলতে পারবেন না।
উপজেলা নির্বাচনে বিপুলভাবে জনগণের অংশগ্রহণ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য যা যা করণীয় আপনারা করবেন। এব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। কোনো প্রার্থীর মুখ দেখে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। ১০ তারিখ থেকে নির্বাচন হবে। জনগণ যেন সুষ্ঠুভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, নির্বাচন যেন উৎসবমুখর হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী চান, স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। এজন্য তিনি সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন, মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন। স্থানীয় নির্বাচনে কেউ যেন কোন প্রভাব বিস্তার না করে।
পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন অপসারণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর হওয়ার আহ্বানও জানান নাসিম। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না আর কোনো আপোষ করা যাবে না। কোন অজুহাত শোনা হবে না। মানুষের মৃত্যু নিয়ে আর কোনভাবেই খেলা করা উচিত না।
ওবায়দুল কাদের একজন দক্ষ পরিশ্রমী সাধারণ সম্পাদক। তিনি হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওনার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে জানিয়ে ১৪ দলের পক্ষ থেকে তার দ্রুত রোগমুক্তিও কামনা করা হয়। এছাড়াও ১৪ দলের পক্ষ থেকে জাতির পিতার জন্মদিবস ১৭মার্চ শিশু দিবস, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ও ২৬মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন সরকারের জোটটি।
১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, জাসদ একাংশের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দিন খান বাদল, জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, উপ দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, বাসদের রেজাউর রশিদ খানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/এনএইচ