Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পেশাগত স্বীকৃতি চান আইনজীবীদের নারী সহকারীরা


৮ মার্চ ২০১৯ ২০:৪৩

।। আব্দুল জাব্বার খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: নারী এখন আর কারো উপর নির্ভরশীল নন। নিজ যোগ্যতা, মেধা, বিচক্ষণতায় তারা সবখানেই জায়গা করে নিচ্ছেন। নারীদের সরব অবস্থান এখন সমাজের সবখানেই। প্রশাসন, পুলিশ, আইনজীবী, বিচারপতি, সেনাবাহিনী চিকিৎসা, প্রযুক্তি, শিক্ষকতা, নার্সিং, রাজনীতি সর্বত্রই নারীরা দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন।

আইনজীবীদের সহকারী পেশাতেও সমান দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন তারা। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে চার হাজার আইনজীবী সহকারীদের মধ্যে নারী সদস্য আছেন ২০ থেকে ৩০ জন। হাতে গোনা কয়েকজন হলেও একসময় এটাও কল্পনা করা যেত না।

আইনজীবী সহকারী পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি নারী সদস্য হয়ে কাজ করছেন চাদঁপুরের শারমিন আক্তার (২৫), নারায়ণগঞ্জের সাইদা রহমান (২৮), ঝিনাইদহের নাসরিন সুলতানা (৩২) ময়মনসিংহের মারজিনা আক্তারসহ (৩৫) অনেকেই। তবে কাজ করে গেলেও এখনও এ পেশার কোনো স্বীকৃতি নেই। তারা বলছেন, ‘বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনো স্বীকৃতির বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই সবার আগে তার চান এই পেশার আইনি স্বীকৃতি।’

এরইমধ্যে এক যুগেরও বেশি সময় পার করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর নারী সহকারী মারজিনা আক্তার। তিনি শোনালেন এ পেশায় টিকের থাকার গল্প। সংসারের হাল ধরতে ২০০৭ সালে ফুফাতো ভাইয়ের মাধ্যমে ময়মনসিংহ থেকে সুপ্রিম কোর্টে এসে পেশায় তিনি যুক্ত হন।

সেই সময়ের গল্প তুলে ধরে ময়মনসিংহের মারজিনা বেগম বলেন, ‘আমার ফুফাতো ভাইয়ের মাধ্যমে আমি এখানে আসি। প্রথমে যখন আমি কোর্টে পা রাখি তখন আমার মনে হয়েছে ভিন্ন একটি জগৎ। যে জগতে নারী সহকারী হিসেবে আমি সম্পূর্ণ একা। যা ছিল আমার জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এক কোর্ট থেকে বের হয়ে আরেক কোর্টে যেতে রাস্তা ভুলে যেতাম। অনেক সময় বার ভবনে যেতেও রাস্তা ভুল করতাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘মামলার কোর্ট মনে রাখা, নাম্বার মনে রাখা, কোন মামলা কোন কোর্টের কত নাম্বারে আছে সেটি স্যারকে জানানো। কোন মামলার কি রায় হলো সেটি মনে রাখা। মামলার তারিখ মনে রাখা। ক্লায়েন্টদের সেটি আবার জানানো। এসব কাজকে তখন অনেক জটিল মনে হতো।’

মারজিনা বলেন, ‘অ্যাডভোকেট আব্দুল কাদির নামে এক আইনজীবীর চেম্বারে ক্লার্ক (আইনজীবী সহকারী) হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম। পরে আমি প্রতিদিন অনেকবার করে ঘুরে ঘুরে এসব মনে রাখতাম। সেই থেকে আইনজীবীর সহকারী হিসেবে আমার যাত্রা শুরু। এরপর অনেকেই নারী সদস্যই কাজে যোগ দেন। এখন তো অনেকেই কাজ করছেন।’

সহকারীর কাজ কি জানতে চাইলে শারমিন আক্তার নামে আরেকজন জানান, ‘আইনজীবীরা তো মামলার শুনানি করেন আর ফাইল ড্রাফট করে দেন। এরপর ওই ফাইল টাইপ করা, বারের টিকেট লাগানো, ফটোকপি করা, সেকশনে ফাইল করা, রায়ের কপি সংগ্রহ করা, আদেশ পাঠানো, মামলার তালিকা দেখা থেকে শুরু করে সব কিছুই একজন ক্লার্ক (আইনজীবী সহকারী) করে থাকেন।’

তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে সব থেকে কষ্টের কাজ হলো সেকশনে ফাইল এন্ট্রি করা। সেখানে সব সময় ভিড় লেগেই থাকে। কখনো কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা লাইন ধরে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থেকে ফাইল এন্ট্রি করতে হবে। যেটা নারী হিসেবে আমাদের জন্য সব থেকে কষ্টের।’

কোন কোন শাখায় গিয়ে কাজ করতে হয় জানতে চাইলে এ নারী সহকারী বলেন, ‘ক্রিমিনাল আপিল শাখা, ক্রিমিনাল রিভিশন শাখা, ক্রিমিনাল বিবিধ শাখা, সেকশন, রিট শাখা, সিভিল শাখা, ডেসপাস (আদান-প্রদান) শাখায় গিয়ে কাজ করতে হয়। এছাড়া একটি মামলা দায়েরের পর সেটি তালিকায় উঠানো থেকে শুনানি শেষে রায় পর্যন্ত ওই মামলার যাবতীয় খোঁজ-খবর রাখতে হয়।’

আইনজীবীর সহকারী সাইদা রহমান বলেন, ‘আমাদের জন্য পৃথক কোনো ওয়াশ রুম, নামাজ ঘর এমনকি পৃথক কোনো খাবার ঘরও নাই। এছাড়া আমাদের এই পেশাকে আইনি স্বীকৃতি দিতে বার বার আশ্বাস দেওয়া হলেও এখনও সেটি আলোর মুখ দেখেনি। তবে গত মাসে আইনমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের পেশাকে স্বীকৃতি দিতে আইনটি সংসদে উত্থাপন করবেন। আমরা সেই আশাই আছি। আমাদের পেশাকে আইনি স্বীকৃতি দিলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে সুপ্রিম কোর্টে কাজ করে গর্ব অনুভব করি। কেননা বাইরে গেলে আত্মীয়-স্বজন মামলার সম্মুখীন হলে যোগাযোগ করে। ভালো আইনজীবী খুঁজে দেওয়ার জন্য বলে। মামলার জন্য সহযোগিতা চান। এটা আমাদের জন্য গর্বের।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সহকারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ সারাবাংলাকে জানান, সুপ্রিম কোর্টে এখন প্রায় ৪ হাজার আইনজীবীর সহকারী কাজ করছে। এর মধ্যে মাত্র ১৮ জন নারী সদস্য আছেন। এ বছর আরও ১০ জনের মত যোগ দিয়েছেন।  সব সুবিধা পেলে এ পেশায় নারীরা আরও ভালো করবেন।

সারাবাংলা/এজেডকে/এমও


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর