‘৭ই মার্চ নিয়ে সাবেক ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ ডাহা মিথ্যা বলছে’
৮ মার্চ ২০১৯ ২০:৪৩
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট নিয়ে তৎকালীন ছাতনেতাদের কারও কারও বক্তব্যকে অর্বাচীনের মতো সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এই সেমিনারের আয়োজন করে।
আয়োজিত সেমিনারে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ১৯৭১ এর ভাষণের ওপর এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ভাষণের তাৎপর্য থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীনের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা গেরিলা যুদ্ধ করতে গেলে অস্ত্র কোথা থেকে আসবে? গেরিলাদের ট্রেনিং কেথায় হবে? কীভাবে দেশের সমর্থন আদায় করা যেতে পারে? তিনি কিন্তু সেই বিষয়গুলোর পরিকল্পনাটা লন্ডনে বসেই করে এসেছিলেন।’
আরও পড়ুন: ‘প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে ৭ই মার্চের ভাষণে’
এ পরিকল্পনাটা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল উল্লেখ করে তার কারণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার ভেতরে অদ্ভূত একটা দূরদর্শিতার শক্তি ছিল। তিনি (বঙ্গবন্ধু) বলেছিলেন, নির্বাচন হবে কিন্তু ওরা ক্ষমতা দেবে না। আমাদের যুদ্ধ করতে হবে এবং দেশস্বাধীন করতে হবে। এ কথাগুলো হয়ত তিনি আমাদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বলতেন। তবে এটা বাইরে কোনোদিন তিনি কখনো বলতেন না। আর আমাদেরও একটা শিক্ষা তিনি ছোট বেলা থেকেই দিয়েছিলেন। বিশেষ করে এ ব্যাপারে আমার মায়ের ভূমিকা অনেক বেশি ছিল। তিনি আরও বেশি জানতেন। আমরা এইটুকু জানলেও কখনও প্রকাশ করার অধিকার ছিল না এবং কখনো বলিনি। হয়ত এখন সময় এসেছে আমরা বলছি।’
সত্তরের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করবে বঙ্গবন্ধুর সেই ভবিষ্যতে করা কথাটির উল্লেখ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কাজেই তিনি যা যা বলেছিলেন ঠিক সেই ঘটনাই কিন্তু ঘটল। এই পাকিস্তানি শাসকদের তিনি খুব ভালভাবে চিনতেন। ওরা কী করতে পারে। এই পূর্ব বঙ্গে তিনি যে দুটি আসন হারাবেন, সেটাও কিন্তু তিনি বলেছিলেন।’
সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেই তিনি সত্তরের নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন আমাদের অনেকেই ইলেকশনের বিরুদ্ধে ছিলেন। অনেক দল বিরুদ্ধে ছিল। নাম বলতে চাই না। অনেকবার বলেছি। সেখানে তার কথা ছিল ইলেকশনটা হতে হবে এই কারণে বাঙালি জাতির পক্ষে কে কথা বলবে, কে নেতৃত্ব দেবে সেটা আগে ঠিক করতে হবে? জনগণের ম্যান্ডেটটা হাতে থাকলে সেটায় একটা আলাদা শক্তি পাওয়া যায়। সেই জন্যই তিনি ইলেকশনকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং ইলেকশনের মধ্য দিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট পান।’
৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে তৎকালীন ছাত্রনেতাদের কারও কারও তথ্যগত বিভ্রান্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ভাষণটা নিয়ে অনেকে অনেক ব্যাখ্যা দেন তখনকার ছাত্রনেতারা এখন যারা জীবিত আছেন। আমি আজকেও একজনের ইন্টারভিউ দেখছিলাম, আজকে দুপুরে দিকে। সেখানে কেউ কেউ নানাভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন। আসলে ব্যাখ্যাগুলি শুনলে হাসিই পায়। এরা আসলে কত অর্বাচীনের মতো কথা বলে।’
তিনি (বঙ্গবন্ধু) নাকি আগের দিন নিউক্লিয়াসের (সিরাজুল আলম খান বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ছাত্র নেতা, রাজনীতিবিদ। তিনি বাঙালির ‘জাতীয় রাষ্ট্র’ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষে ১৯৬২ সনে গোপন সংগঠন ‘নিউক্লিয়াস’ গঠন করেন। নিউক্লিয়াস ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নমেও পরিচিত। এছাড়াও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ গঠন এবং ‘সিপাহী জনতার গণ-অভ্যুত্থান’ এর নেপথ্য পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল আলম খান। তাকে বাংলাদেশের রাজনীতির রহস্যপুরুষ বলা হয়।) সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এখানে মুক্তির সংগ্রামটা আগে বলবে, না স্বাধীনতার সংগ্রাম আগে বলবে, সেটাও নাকি নিউক্লিয়াসে আলোচনা করেছে। এগুলো সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা কথা, সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা কথা। কোনো যৌক্তিকতাই নাই। যিনি বলছেন, উনি ওটা বলতে পারেন। কারণ ওনার আবার একটা নিক নেম ছিল। আমরা যখন ছাত্ররাজনীতি করতাম আমাদের নেতাদের কার কি নাম সবার জন্য একটা টাইটেল দিতাম, এটা আমাদের একটা অভ্যাস ছিল। এটা করতাম সবার জন্য। তারও একটা টাইটেল ছিল, এখন বলে ফেললে সবাই আবার বুঝে যাবেন। আমার মনে হয় টেলিভিশন দেখে নিয়েন, সেটাই ভালো। আমি আর বলতে চাই না।’
‘এই যে এক জন এক একটা ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, আসলে তো তা নয়। যাওয়ার আগে অনেকেই দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। অনেক অনেক পয়েন্ট তৈরি করেছেন। এটা বলতে হবে, ওটা বলতে হবে, এটা না বললে জনগণ হত্যাশ হয়ে ফিরে যাবে-এভাবে নানা ধরনের কথায় কথায় আমরা জর্জরিত ছিলাম। আর কাগজে কাগজে অনেক কাগজ। আমাদের বাসায় জমা হয়েছিল। শেষ কথা বলেছিলেন আমার মা। যে কথাটি আমি সবসময় বলি। আমার মা, একটা কথাই বলেছিলেন সারাটা জীবন তুমি সংগ্রাম করেছো এবং তুমি জানো দেশের মানুষ কী চায়? তার জন্য কী করতে হবে? তোমার থেকে ভালো আর কেউ জানে না? কাজেই তোমার মনে যে কথাটা আসবে, তুমি শুধু সেই কথাই বলবে, আর কোনো কথা না।
‘এত দীর্ঘ একটা ভাষণ, এখানে কোনো কাগজও নাই পয়েন্টও নাই কিছুই নাই। কারণ তিনি তো সংগ্রাম করে গেছেন, সেই ১৯৪৮ সাল থেকে। তখন থেকেই তো বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য তিনি সংগ্রাম করেছেন। কাজেই স্বাভাবিকভাবে তিনি তো জানেন, মুক্তির পথটা কোথায় এবং কীভাবে আসবে?’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান। বিশেষ আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান, অধ্যাপক নীলয় রঞ্জন বিশ্বাস।
সারাবাংলা/এনআর/একে