বুড়িগঙ্গায় নৌকাডুবি: ২৪ ঘণ্টায়ও খোঁজ মেলেনি ৫ জনের
৮ মার্চ ২০১৯ ২৩:১৬
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ঢাকার সদরঘাটে সুরভী-৭ লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাডুবির ঘটনায় ২৪ ঘণ্টা পরও নিখোঁজ পাঁচজনের সন্ধান পায়নি ডুবুরি দল। নিখোঁজদের খুঁজতে বুড়িগঙ্গা নদীর তলদেশে নৌ-বাহিনীর অত্যাধুনিক মেশিন বসিয়ে চালানো হচ্ছে উদ্ধার কাজ। সেই সঙ্গে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তিনটি ডুবুরি ইউনিট ও বিআইডব্লিউটিএ এবং কোস্টগার্ডসহ আরও পাঁচটি হউনিট।
২৪ ঘণ্টা পরও নিখোঁজদের সন্ধান না মেলায় স্বজনদের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। নিখোঁজদের সন্ধানে স্বজনদের পাশাপাশি বুড়িগঙ্গার তীরে বাড়ছে উৎসুক জনতারও ভিড়।
এদিকে ডুবুরি দলের সদস্যরা বলছেন, বুড়িগঙ্গার কালো দূষিত পানি আর তলদেশে তিন-চারফুট জমে থাকা ময়লা স্তরের কারণে পানির নিচে নিখোঁজদের খুঁজতে প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে তাদের। যে কারণে অত্যাধুনিক মেশিন ব্যবহারের পরও নিখোঁজদের সন্ধান পেতে বেগ পেতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাত দশটার দিকে কামরাঙ্গীরচর থেকে শরীয়তপুরের উদ্দেশে একই পরিবারের ৭জন ডিঙি নৌকা বেয়ে সদরঘাট পার হচ্ছিলেন। এ সময় ঢাকা-বরিশালগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ সুরভী-৭ এর ধাক্কায় নৌকাটি ডুবে যায়। এতে নৌকায় থাকা সাতজনই নিখোঁজ হন। তবে তাৎক্ষণিক সদরঘাট নৌ-পুলিশ শাহজালাল (৩৫) নামে একজনকে দুই পা কাটা অবস্থায় নদী থেকে উদ্ধার করে প্রথমে মিটফোর্ট এবং পরে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকি ছয়জনকে উদ্ধারে তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ও বিআইডব্লিউটিএ এর একটিসহ তিনটি ডুবুরি ইউনিটের সদস্যরা কাজ শুরু করেন। রাত ২টায় অত্যাধুনিক মেশিন ‘সাইড স্কেন সোনার’ নিয়ে তাদের সঙ্গে উদ্ধার কাজে যোগ দেয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিশেষ টিম।
কিন্তু রাতভর অভিযান চালিয়েও সকাল সাড়ে ১১টাটা পর্যন্ত নিখোঁজদের কোনো সন্ধান মিলেনি। দুপুর পৌন বারোটার দিকে সদরঘাটের অদূরে জামসিদা (২২) নামের একজনের লাশ ভেসে উঠতে দেখেন স্থানীয়রা।
ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের সদস্য রুহুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়েই আমরা নদীতে নেমে পড়ি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য একজনের মরদেহ ছাড়া বাকিদের সন্ধান আমরা এখনও পাইনি। নদীর তলদেশে বিপুল পরিমাণ ময়লার স্তূপ আর কালো পানি রয়েছে। আবার নদীর গভীরে দাঁড়ানো যায় না ময়লার কারণে। পলিথিনসহ বিভিন্ন অপচনশীল বস্তু প্রায় তিন থেকে চারফুট পর্যন্ত স্তর হয়ে পড়েছে। সেগুলোতে দাঁড়াতে গেলেই পা দেবে যায়। যে কারণে উদ্ধার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। তবুও আমরা উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে নৌ-বাহিনীর একজন কর্মকর্তা লে. আক্কাস আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত ২০/২২ ঘণ্টা পর মরদেহ ভাসতে শুরু করে। তাই নদীর তলদেশে আর মরদেহ থাকার কথা নয়। তবে আমরা মেশিনটি দিয়ে এখনও চেষ্টা চালাচ্ছি নিখোঁজ নৌকাটির সন্ধানে। হয়ত ওই নৌকার নিচে আটকা পড়ে থাকতে পারে কোনো মরদেহ। তাই অভিযান চলবে। অত্যাধুনিক এ মেশিনটি নিখুঁতভাবে নিখোঁজ বস্তু কিংবা নদীর তলদেশ পরীক্ষার জন্য জার্মানি থেকে আমদানি করা হয়েছে।’
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মানিকুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, নিখোঁজদের সন্ধান পেতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। সকাল-বিকেল তো লঞ্চ আসছে যাচ্ছে। এর মধ্যেই অভিযান চলছে। এখন এসব লঞ্চের নিচে গিয়ে তো আর অভিযান চালানো যাচ্ছে না। তাই কিছুটা প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে। তবে লঞ্চগুলো না থাকলে হয়ত ওইসব স্থানেও ভালো করে অভিযান চালানো যেত। এখন পানির উপরিভাগে অভিযান চলছে। সেই সঙ্গে মাইকিং করে স্থানীয়দের অবহিত করা হচ্ছে যদি কোনো কোনো মরদেহ দেখে তাহলে আমাদেরকে খবর দেওয়ার জন্য।’
সারাবাংলা/এসএইচ/একে