Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্যাতিত নারীর ছবি নয়, ধর্ষকের ছবি প্রচার করুন: প্রধানমন্ত্রী


৯ মার্চ ২০১৯ ১৩:৫৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: শিশু ধর্ষণ- নারী ধর্ষণকারীরা সমাজের শত্রু উল্লেখ করে তাদের প্রতি ঘৃণা জানাতে সমাজের সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এই কাজে লিপ্ত তাদের নাম-ধাম চেহারা ভালভাবে প্রচার করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই নির্যাতিত নারীর ছবি প্রকাশ করা যাবে না। যে ধর্ষক তার পরিচয়, তার চেহারা বা ছবি এমনভাবে প্রচার করতে হবে যাতে সমাজের প্রতি স্তরের মানুষ  তাকে ঘৃণার চোখে দেখে।’

শনিবার (৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৯ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে  এই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এম্পাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত  প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্ষকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও তাদের শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।  তিনি বলেন, ‘এটা শুধু বাংলাদেশের সমস্যা না। এই সমস্যা কিন্তু বিশ্বব্যাপী। এমনকি উন্নত সভ্য দেশেও এই সমস্যাটা কিন্তু রয়েছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে আরও জনমত সৃষ্টি করা দরকার, এটাই আমরা মনে করি।’

শেখ হাসিনা বলেন, সমাজ ও দেশকে কল্যাণময় করে গড়ে তুলতে নারী-পুরুষ সকলের একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। নারীদের বাদ রেখে একটি সমাজ কখনোই গড়ে উঠতে পারে না।

সমাজে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে দেশের নারী সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় দেখেছি নারীর প্রতি বৈষম্য ছিল এ দেশে। পাকিস্তান আমলে একটি আইন ছিল সেখানে জুডিশিয়াল সার্ভিসে কোনো নারী প্রার্থী হতে পারবেন না। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা সেই আইন বাতিল করে দিয়ে সেখানে নারীদের সুযোগ করে দেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন ১৯৯৬ সালে সরকারে আসি তখন দেখি আমাদের উচ্চ আদালতে একজনও নারী জজ নাই। একজন ডিস্ট্রিক্ট জজ ছিলেন। তখন আমি রাষ্ট্রপতিকে বলে হাইকোর্টে প্রথম তাকে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এখন জুডিশিয়ারিতে অনেক নারীর সুযোগ হয়েছে। কিন্তু একসময় এই জায়গাটা নারীর জন্য নিষিদ্ধই ছিল।’

আমাদের সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বর্ডার গার্ড কোথাও কিন্তু নারীদের স্থান ছিল না বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বর্তমানে সব জায়গায় এখন আমাদের নারীদের অবস্থান আছে । তারা প্রত্যেকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করছে বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ বিষয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতাই আমাদেরকে শক্তি দিয়ে গেছেন। সংসদে তিনি যে প্রথম সংবিধান দিলেন, সেখানে তিনি মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত আসন দিয়ে গেলেন। এছাড়া মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু সবসময় একটা কথা বলতেন, একজন মেয়ে যদি আর্থিকভাবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতাটা অর্জন করতে পারে তাহলে  পরিবারে ও সমাজে তার একটা স্থান হয়। আর সেটাই  সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় আমাদের ধর্মীয় অনেক নেতারা নারীদের শিক্ষা বা নারীদের কর্মের বিরুদ্ধে কথা বলেন। কিন্তু আমি এইটুকু বিশ্বাস করি যে, তারা অন্তত এইটুকু স্মরণ করবেন বিবি খাদিজাই কিন্তু প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।  তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তার অধীনে নবী (সা.) কিন্তু চাকুরি করতেন। পরবর্তীতে তিনি তাকে বিবাহ করেন। তিনি যখন ধর্ম প্রচার শুরু করেন, তখন বিবি খাদিজাই প্রথম নারী হিসাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। সে সময় কিন্তু কোন পুরুষ সাহস করে এগিয়ে আসে নাই।’

বিজ্ঞাপন

তৃণমূল পর্যন্ত নারী ক্ষমতায়নে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাতেও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়ন ও উপজেলায় একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানে ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। যদিও ক্ষমতা দিয়েছি তবে সব জায়গায় তারা ক্ষমতটা প্রয়োগ করতে পারেন না। তাই যারা দায়িত্বে আছেন তাদের নিজেদের ক্ষমতাটা নিজেদেরকে অর্জন করে নিতে হবে, কেউ হাতে তুলে কখনো দেয় না, এটা হলো বাস্তবতা।’

নারী সমাজের উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে সকলের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু আইন করলে সহিংসতা অথবা বৈষম্য দূর হবে না। এই জন্য সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্তভাবে দরকার। এইক্ষেত্রে  মা-বোনেরা যারা আছেন, যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছেন, নারী-পুরুষ সকলেই এক হয়ে কাজ করতে হবে। কারণ একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, একটা সমাজকে যদি গড়ে তুলতে হয়, সেই সমাজের অর্ধেক যেখানে নারী তাদেরকে বাদ রেখে তা সম্ভব না। সেই ক্ষেত্রে সকলকে এক হয়ে কাজ করা, এটাই সব থেকে বেশী প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবসময় বিশ্বাস করি যে, সমাজকে গড়ে তুলতে হলে সকলের একসঙ্গে কাজ করা দরকার। আমাদের কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলে গেছেন, বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’

‘নারীর যে সমঅধিকার সেই অধিকারের কথা কিন্তু তিনি স্পষ্টভাবে বলে গেছেন। কাজেই এটা মনে রাখতে হবে, সমাজ-দেশকে কল্যাণময় করতে গেলে নারী পুরুষ সকলের একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। এটাই একান্তভাবে দরকার’ বলেন প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসাবে গড়ে ওঠে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে ২১ ভাগে নামিয়েছি। ইনশাল্লাহ, আরও কমিয়ে বাংলাদেশকে আমরা একেবারে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসাবে গড়ে তুলব, সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।

অনুষ্ঠানে পাঁচজন নারীকে বিশেষ অবদানের জন্য জয়িতা সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক আয়োজন উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

‘সবাই মিলে ভাবো নতুন কিছু করো, নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ো’ প্রতিপাদ্যকে নিয়ে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও  এবছর  উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

সারাবাংলা/এনআর/একে/জেডএফ

আরও পড়ুন

‘উইমেন এম্পাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ নির্যাতিত নারীদের উৎসর্গ করলাম

নারী দিবস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর