ডাকসু’র ভোটে ছাত্র রাজনীতিতে সুবাতাস দেখছেন ফখরুল
১০ মার্চ ২০১৯ ১৪:৫৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ছাত্ররাজনীতিতে সুবাতাস দেখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে একটি সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। এটা যদি চালু রাখা যায় তাহলে আমাদের দেশের জন্য ভালো হবে। আমরা ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারব।’
রোববার (১০ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির স্বাধীনতা হলে নবগঠিত জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের আহ্বায়ক কমিটির সভায় মির্জা ফখরুল এ সব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আগামীকাল ডাকসু নির্বাচন। নির্বাচনে ছাত্রদল অংশগ্রহণ করেছে। আমি এটিকে স্বাগত জানাই। কারণ ২৮ বছর ডাকসু নির্বাচন হয়নি। আরেকটি ক্যান্সারের সৃষ্টি করা হয়েছিল। আমাদের দেশে যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠার কারখানা, সেটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।’
নবগঠিত কৃষকদলের কমিটি প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এমন সময় কৃষক দলের নেতৃত্ব পেলেন, যখন দেশে ভয়াবহ সংকট চলছে। এ সংকট শুধু বিএনপির নয়, গোটা জাতির। বন্য হাতি যখন ক্ষেতে ঢুকে ফসল নষ্ট করে তেমনি বাংলাদেশে একটি দানব ঢুকে আমাদের সমস্ত অর্জন ধ্বংস করে ফেলেছে। সবকিছু একেবারে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। আমরা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছি। সংগ্রাম করেছি লড়াই করেছি, রাষ্ট্র গঠন করেছি। মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা রাষ্ট্র গঠন করেছি, সবকিছু এই দানব ধ্বংস করে ফেলেছে।’
দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বর্ণনা দিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘গায়েবি মামলার বিষয়টি কেউ দেখছে, শুনছে বলে আমার জানা নেই। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৯৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আসামির সংখ্যা এটি ইংরেজিতে বলতে গেলে বলতে হয় ২.৫ মিলিয়ন অর্থাৎ ২৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ওরা (ক্ষমতাসীনরা) চিন্তাও করতে পারে না এমন অবস্থা দেশের।’
দলের চেয়ারপারসন বেগম জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভুয়া-মিথ্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হলো। নিম্ন আদালতের সেই সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করল। তিনি এখন অত্যন্ত অসুস্থ, বসতে পারেন না। তাকে বিছানা থেকে তুলতে একজন সাহায্যকারী দরকার। খালেদা জিয়ার প্রতি এ আচরণ মানবাধিকারের একটি সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ সরকারের বিরুদ্ধে এরকম আইন লঙ্ঘনকারী ঘটনা আমি যদি বলতে থাকি সারাদিন বলতে পারব।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরে একটি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করেছিলাম। জোট গঠন করে, ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে অংশগ্রহণ করেছিলাম। চিন্তা করেছিলাম জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি আন্দোলনের মধ্যদিয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব। কিন্তু তারা একটি ক্রিমিনাল মাইন্ড নিয়ে গোটা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে।’
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন,’নির্বাচন কমিশন গঠন করার সময় আমরা বলেছিলাম একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক। রাষ্ট্রপতির কাছে আমরা বলেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাদের পোষ্যদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। তারা এখন আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে।’
‘জাতীয় নির্বাচনে তারা যা করেছে এটি নজিরবিহীন। তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে একেবারে ধ্বংস করে ফেলেছে। তাই দেশের জনগণের এখন নির্বাচনের প্রতি আস্থা নেই। যার ফলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে যায়নি। উপজেলা নির্বাচনে জনগণের আগ্রহ নেই। আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি এরইমধ্যে ৭০-৮০ জন প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে’ বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন,’আমি অনেককে বলতে শুনেছি প্রশাসন এখন তাদেরকে (ক্ষমতাসীনদের) বলছে যে, আপনাদের আমরা জয়ী করেছি। নির্বাচন আমরা করেছি। এখন যা করার আমরা করব। আপনারা চুপ করে বসে থাকেন। এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, মানুষ এখন কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে?’
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময়ই গণতন্ত্র ধ্বংসকারী একটি দল। ৭২ সালে তারা ক্ষমতায় আসার পর নিজেদের সংবিধান নিজেরাই ধ্বংস করেছে। তারা মানুষের অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়েছে। তখন রক্ষীবাহিনী নাম একটি দল ছিল, যারা গণতন্ত্রকামী ব্যক্তিদের হত্যা করেছে নির্যাতন করেছে। তারা মুখে মুক্তিকামের কথা বলে কিন্তু গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা সবসময় ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতি তারা যেটা করছে বিশ্বাস-আস্থা নষ্ট করে ফেলছে। তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কী দিচ্ছে? মিথ্যা ভোট ডাকাতির সঙ্গে একটি মিথ্যা দুর্বৃত্ত প্রোনাউন চলে আসছে। যারা ভয়াবহভাবে দুর্বৃত্ত তাদেরকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করছে। তারা ইয়াবা বিরুদ্ধে অভিযান করছে কিন্তু যিনি ইয়াবা সম্রাট তিনি তাদের দলের দায়িত্বে আছেন। তিনি বাইরে আছেন অথচ আমাদের নেত্রী জেলের ভেতর আছেন। এখন আমাদের দলের একটাই দায়িত্ব খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এবং আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কৃষকদলের সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন।
অনুষ্ঠানে কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তকদির হোসেন মোহাম্মদ জসিম, নাজিম উদ্দিন মাস্টার জামাল উদ্দিন খান মিলন, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জিয়াউল হায়দার পলাশ, এস কে সাদি, নাসির হায়দার, মাইনুল ইসলাম, মো. আলিম হোসেন, অধ্যক্ষ সেলিম হোসেন, মিয়া মো. আনোয়ার, বায়জিদ বোস্তামী, মোজাম্মেল হক মিন্টু, কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন, আব্দুর রাজি, এম জাহাঙ্গীর আলম, কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ, শরিফুল ইসলামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এজেড/একে