Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডাকসু নির্বাচন: এখন অপেক্ষা কেবল ভোটের


১১ মার্চ ২০১৯ ০০:০৭

।। তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: রাত পাহালেই শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এখন কেবল এক রাতের অপেক্ষা। সোমবার (১১ মার্চ) সকাল ৮টায় পছন্দের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন করতে ভোটের লাইনে দাঁড়াবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ভোটগ্রহণ চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত।

এই নির্বাচনের মাধ্যমে শেষ হতে যাচ্ছে ডাকসুর ২৮ বছরের দীর্ঘ অচলাবস্থা। তাই নির্বাচন ঘিরে শতাব্দী প্রাচীন এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এখন উৎসবের আমেজ। প্রচারণার জন্য বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হয়ে গেলেও এখনো অনেক প্রার্থী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন। সাধারণ ছাত্রদের মুখে মুখেও ভোটের নানা হিসাব-নিকাশ।

বসে নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনী কর্মকর্তারাও। রোববার (১০ মার্চ) সকাল থেকেই ব্যস্ততা বেড়েছে তাদের। এদিই চিফ রিটার্নিং অফিসারের কক্ষে পরিচয়পত্র গ্রহণের জন্য ভিড় করেছিলেন প্রার্থী ও সাংবাদিকরা। সেসবের ফাঁকেই নির্বাচনের অন্যান্য কাজও এগিয়ে নিতে হয়েছে তাদের। বিকেলে সিনেট ভবনের তৃতীয় তলার এই কক্ষ থেকেই হলগুলোতে পাঠানো হয়েছে ব্যালট বাক্স।

ডাকসু নির্বাচনের জন্য ছাত্রদের ১৩টি এবং ছাত্রীদের ৫টি হলে প্রস্তুত করা হয়েছে ৫১১টি বুথ। এর মধ্যে মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ৩২টি, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৩৫টি, শহীদুল্লাহ হলে ২০টি, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৩৫টি, অমর একুশে হলে ২০টি, জগন্নাথ হলে ২৫টি, কবি জসীম উদ্দীন হলে ২০টি, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ৩০টি, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২১টি, স্যার এ এফ রহমান হলে ১৬টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ২৪টি, জিয়াউর রহমান হলে ২০টি এবং বিজয় একাত্তর হলে ৪০টি, রোকেয়া হলে ৫০টি, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪৫টি, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ১৯টি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ২০টি, শামসুন্নাহার হলে ৩৫টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। তবে পি জে হার্টস আন্তর্জাতিক হলে কোনো বুথ বসানো হয়নি।

বিজ্ঞাপন

রোববার মধ্যরাতের মধ্যেই বুথগুলোতে ব্যালট বক্স বসানো হবে। তবে নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট বাক্সগুলো নিয়ে এরইমধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স নিয়ে আপত্তি তুলেছে বেশ কয়েকজন প্রার্থী। রোববার দুপুরে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন এ আর এম আসিফুর রহমান, অরণী সেমন্তি খান, লিটন নন্দী, উম্মে হাবিবা বেনজিরসহ অনেক প্রার্থী।

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ভোটগ্রহণের সময় চার ঘণ্টা বাড়ানো ও স্বচ্ছ ভোটবাক্সের ব্যবস্থা করা, ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার ও বাক্স ভোটকেন্দ্রে প্রেরণসহ মোট ৭টি দাবি ছিল তাদের।

প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি নির্বাচনের নামে কোনো প্রহসনের আয়োজন করে তাহলে আমরা মানবো না। কিন্তু আদতে তারা সেটিই করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা চাচ্ছি শিক্ষার্থীরা যেন সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে। কর্তৃপক্ষ যদি শিক্ষার্থীদের সেই অধিকারটুকু হরণ করে তাহলে ইতিহাসে এই ঘটনা একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।’

ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা ড. এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনে স্টিলের বাক্সই ব্যবহৃত হয়। এটা নতুন কিছু নয়। আগেও এমনটা হয়েছে। ঢাবি শিক্ষক সমিতি নির্বাচন ও রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচনে এই বাক্সগুলোই ব্যবহার করা হয়েছে। কখনো আপত্তি ওঠেনি।’

এদিকে ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা- এ বিষয়ে সারাবাংলার কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কয়েকজন প্রার্থী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভিপি পদপ্রার্থী বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মতোই হবে ডাকসু নির্বাচন। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করছে। তারা একটি নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠনকে জিতিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। তবে আমি বিশ্বাস করি শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে এই চক্রান্ত রুখে দেবে।’

বিজ্ঞাপন

জিএস পদপ্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান বলেন, ‘আমাদের একটাই চাওয়া যেন ভোটগ্রহণ ও গণনা প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হয়। আমরা চাই এই নির্বাচনে প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেন নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। এজন্য ভোটগ্রহণের সময় বাড়িয়ে দেওয়ার জন্যও দাবি জানাচ্ছি আমরা।’

তবে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন উপস্থাপনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলেছে প্রশাসন। রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িতরা ছাড়া বহিরাগত কোনো ব্যক্তি কিংবা যানবাহন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। শিক্ষার্থীদেরও পরিচয়পত্র দেখিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহবাগ, নীলক্ষেত, পলাশী, জগন্নাথ হল ক্রসিং, রুমনা ভবন ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ও শহীদুল্লাহ হল ক্রসিংয়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এসব স্পটে নিরাপত্তার দায়িত্বে র‌্যাব ও পুলিশ একযোগে কাজ করবে। এছাড়াও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউট গ্রুপ, বিএনসিসি ও রেঞ্জার।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে সম্পন্ন করতে আড়াই হাজার পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলেই পুলিশ আইন প্রয়োগ করবে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নিরাপত্তা চৌকি সরানোর পাশাপাশি ১৮টি হলে ১১৩টি নজরদারি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।’

সারাবাংলা/টিএস/এমও

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর