চুড়িহাট্টার মরদেহের ডিএনএ প্রক্রিয়া শেষ, এখনো নিখোঁজ ৬
১২ মার্চ ২০১৯ ১৫:৫০
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: রাজধানীর চকবাজার চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানসনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের মরদেহের ডিএনএ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। সেই অনুযায়ী আরও ৫ জনের মরদেহ শনাক্ত করেছে সিআইডি। শনাক্ত হওয়া ৫ জন হলেন, ইসমাইল হোসেন (৬০), জাফর আহমেদ (৪৩), ফয়সাল সরোয়ার (৫৩), মোস্তফা মিয়া (৩৯) ও রেহনুমা তাবাসসুম দোলা (১৯)।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সিআইডির মালিবাগ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত আইজিপি (সিআইডি প্রধান) শেখ হিমায়েত হোসেন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি মরদেহ উদ্ধারের পর বলা হয়েছিল ৬৭টির কথা। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি আরও একটি পুড়ে যাওয়া হাত উদ্ধার করা হয়। তা নিয়ে মরদেহের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৮টি তে। ওই সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে থেকে ৪৮ জনের মরদেহ শনাক্ত সাপেক্ষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বাকী থাকে ২০ টি মরদেহ। এই ২০টি মরদেহ শনাক্তের জন্য মোট ৫২ জন দাবীদারের ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়।
তিনি বলেন, তার মধ্যে গত ৫ মার্চ ১১ জনের মরদেহ শনাক্ত করে সিআইডি। এরা হলেন, নুরুল হক, আহসান, তানজিল হাসান রোহান, নাসরিন জাহান, সালেহ আহমেদ লিপু, দুলাল কর্মকার, নুরুজ্জামান মিয়া, ফাতেমাতুজ জোহরা বৃষ্টি, শাহীন আহমেদ, এনামুল হোসেন ও ইব্রাহীম হোসেন। আজ ৫ জনসহ ১৬ জনের মরদেহ শনাক্ত হলো। দুইটি অজ্ঞাতসহ মরদেহের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮টি তে। আর দুইটি মরদেহের সাথে ডিএনএ মিলে যায় আগেই হস্তান্তর করা ৪৮টি মরদেহের সাথে।
অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, মরদেহের সংখ্যা ৬৮টি হলেও দুইটি মরদেহের ব্যাগ থেকে নেওয়া স্যাম্পল অন্য দুইটি ব্যাগের সাথে মিলে যাওয়ায় মরদেহ কমে ৬৬টিতে দাঁড়ায়।
সবশেষ বাকী ৭টি মরদেহের বিপরীতে নিখোঁজ ছিলেন ১১ জন। এই ১১ জন হলেন- ইসমাইল হোসেন, জাফর আহমেদ, বিবি হালিমা, আত তাহী, ফয়সাল সরোয়ার, রেহনুমা তাবাসসুম দোলা, রাজু, হেলাল উদ্দিন, মোস্তফা মিয়া, শাহাবুদ্দিন ও ফারুক হোসেন।
ব্রিফিং এ জানানো হয়, এদের মধ্যে ৫ জনের মরদেহ শনাক্ত হলেও ৬ জন এখনও নিখোঁজ রইল । এরা হলেন – বিবি হালিমা, আত তাহী, রাজু, মোস্তফা মিয়া, শাহাবুদ্দিন ও ফারুক হোসেন। সিআইডি জানিয়েছে, মর্গে থাকা দুটি লাশের সাথে নিখোঁজদের কারও ডিএনএ এর সাথে মিল পাওয়া যায়নি।
এই ৬ জনের মধ্যে রাজুর জন্য ডিএনএ দিয়েছিলেন তার মা ফাতেমা বেগম। কিন্তু মেলে নাই। হেলাল উদ্দিনের ডিএনএ দিয়েছিলেন তার বাবা কামাল হোসেন, সেটিও মেলে নাই। ফারুক হোসেনের জন্য ডিএনএ দিয়েছিলেন বাবা আনোয়ার হোসেন, সেটিও মেলেনি।
অন্যদিকে আত তাহী ছিল নাসরিন জাহান ও সালেহ আহমেদ লিপুর একমাত্র সন্তান। ঘটনার দিন সবাই একই সাথে রিকশায় যাচ্ছিলেন। আগুন লাগার পর তাদের আর পাওয়া যায়নি। গত ৫ মার্চ নাসরিন জাহান ও সালেহ আহমেদ লিপুর মরদেহ সনাক্ত হলেও সন্তান আত তাহীর মরদেহ শনাক্ত হয়নি। পরিবারের ধারণা ছিল বাকী মরদেহগুলোর মধ্যে হয়ত আত তাহীর মরদেহ শনাক্ত হবে। কিন্তু সিআইডি সবশেষ বলেছে, আত তাহী নামে কোনো মরদেহ শনাক্ত হয়নি।
বাকী বিবি হালিমা ও শাহাবুদ্দিনের ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা করতে পারেননি সিআইডি। এখন সিআইডির হিসেবে কোনো নিখোঁজ না থাকলেও রেডক্রিসেন্টের তালিকায় ৫ জনসহ ৬ জন নিখোঁজ থাকল।
অগ্নিকাণ্ডের পরদিন রেডক্রিসেন্টের করা তালিকাতেও নিখোঁজ ৫ জনের নাম রয়েছে। তবে সেই তালিকায় ফারুক ও নুরুজ্জামান নামে কারও নাম ছিল না। অথচ ডিএনএ টেস্টের জন্য দেওয়া সেম্পলের সময় ফারুক ও নুরুজ্জামানের নাম আসে। ৫ মার্চ নুরুজ্জামানের মরদেহ শনাক্ত হলেও ফারুকের মরদেহ মেলেনি।
সিআইডির এই সংবাদ সম্মেলনে সিআইডি প্রধান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিআডির ফরেনসিক বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) শেখ মো. রেজাউল হায়দার, বিশেষ পুলিশ সুপার (ফরেনসিক) রুমানা আক্তার, ডিএনএ এনালিস্ট আহমাদ ফেরদৗস ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) শারমিন জাহান।
সারাবাংলা/ইউজে/জেডএফ