Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুপ্রিমকোর্ট বারের নির্বাচন বুধবার, প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা


১২ মার্চ ২০১৯ ২১:৫৮

।। আব্দুল জাব্বার খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: আগামীকাল (বুধবার) থেকে শুরু হচ্ছে সুপ্রিমকোর্ট বারের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনকে সামনে রেখে জমে উঠেছে আদালত প্রাঙ্গণ। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তারা।

দুই দিনব্যাপী ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বুধবার ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। এ জন্য সুপ্রিমকোর্ট বার অডিটোরিয়ামে স্থাপন করা হয়েছে বেশ ক‘টি বুথ।

অন্যান্য বারের মতো এবারো দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যেই মূল প্রতিন্দ্বন্দিতা হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা) ও বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেলে এ নির্বাচন করছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন।

গত বছর বারের নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১০টি পদে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা বিজয়ী হন। অন্যদিকে ৪টিতে বিজয় লাভ করেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা। একদিকে জয় নিয়ে ফিরতে চান আওয়ামী প্রার্থীরা। অন্যদিকে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে মরিয়া বিএনপির নীল প্যানেল।

এই নির্বাচন নিয়ে দুই দলের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। তাতে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজের মাধ্যমে নিজেদের অনুকূলে ফলাফল আনার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়। তবে কার প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৪ মার্চ পর্যন্ত।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্যানেল ছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে সভাপতি পদে ১ জন এবং সম্পাদক পদে ২ জন অংশ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট বারের সুপারেন্টেন্ডেন্ট নিমেষ চন্দ্র দাস।

বরাবরের মতো এবারও এওয়াই মশিহুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন।

তফসিল ঘোষণার পর থেকে সভাপতি ও সম্পাদকের নেতৃত্বে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আইনজীবীরা। প্রার্থীদের ব্যক্তিগত পরিচিতি, বারের অতীতের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অবদান ও নির্বাচনে জয়ী হলে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভোটারদের মন জয় করতে নানা লেখা ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা।

সাদা প্যানেল

সাদা প্যানেলে সভাপতি পদে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করছেন আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন (এএম আমিন উদ্দিন)। সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল, সহ-সভাপতি পদে মো. জসিম উদ্দিন ও বিভাস চন্দ্র বিশ্বাস, সহ-সম্পাদক পদে বাসির উদ্দিন ভূঁইয়া এবং কাজী শামসুল হাসান শুভ, ট্রেজারার পদে সৈয়দ আলম টিপু। এছাড়া সদস্য রয়েছেন পদে মোহাম্মদ জগলুল কবির, মশিউর রহমান, শামীম সরদার, আফিয়া আফরোজি রানী, আওলাদ হোসেন, হুমায়ূন কবির ও চঞ্চল কুমার বিশ্বাস।

নীল প্যানেল

অন্যদিকে নীল প্যানেল থেকে সভাপতি হিসেবে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল জামিল (এ জে) মোহাম্মদ আলী এবং সম্পাদক পদে বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহাবুব উদ্দিন খোকন প্রার্থী হয়েছেন। সহ-সভাপতি পদে মো. আব্দুল জব্বার ভূইয়া এবং আব্দুল বাতেন, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. ইমাম হোসেন, সহ-সম্পাদক পদে মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান এবং শরীফ ইউ আহম্মেদ। সদস্য পদে রয়েছেন অ্যাডভোকেট রাশিদা আলিম ঐশী, মোহাম্মদ ওসমান চৌধুরী, কাজী আখতার হোসেন, মো. শাফিউর রহমান, মো. শরীফ উদ্দিন রতন, মো. মোহাদ্দেস উল ইসলাম ও সৈয়দা শাহীন আরা লাইলী।

স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা

এই দুই প্যানেল ছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে সভাপতি প্রার্থী রয়েছেন এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান ও ড. মো. ইউনুছ আলী, সহ-সম্পাদক পদে ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভুইয়া ও সদস্য পদে তপন কুমার দাস।

যা ভাবছেন প্রার্থীরা

আওয়ামী লীগ সমর্থিত সভাপতি প্রার্থী এ এম আমিন উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, যেহেতু এটা পেশাজীবীদের নির্বাচন, পেশাজীবীদের সংগঠন- সুতরাং পেশার মানোন্নয়নে আমরা সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাবো। তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্ট বারকে রাজনীতির বাইরে রেখে পেশাজীবীদের সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলবো। আমাদের আইনজীবীদের অনেক সমস্যা রয়েছে। বসার জায়গার সংকট, ভালো পরিবেশ নেই, এগুলো উন্নয়নে কাজ করে যাব। আইনজীবীদের জন্য একটা বহুতল ভবন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

সিনিয়র এই আইনজীবী বলেন, বারের সদস্যদের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠনসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করার আছে।

এ এম আমিন উদ্দিন আরও বলেন, তারা (নীল প্যানেল) গত তিন বছর ধরে জিতেছেন, তাহলে কি তারা এই তিন বছরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন? এটা তাদের নির্বাচনি একটা ভাওতাবাজি। বরং আমরাই পারব আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে। যে কোনো প্রয়োজনে আমরাই দাঁড়াবো।

অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে সম্পাদক প্রার্থী সুপ্রিমকোর্ট বারের বর্তমান সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে গত সাত-আট বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে আমাদের আইনজীবী ঐক্য পানেল জয়ী হয়ে আসছে। এই সুপ্রিমকোর্ট একদিন তলাবিহীন ঝুড়ি ছিল। আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছি, তখন এর ফান্ড ছিল মাত্র ৭ কোটি টাকা। আজকে এই ফান্ড বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ কোটি টাকায়। এটা হয়েছে কারণ আমরা অপচয় বন্ধ করেছি, স্বচ্ছতা এনেছি।

তিনি বলেন, এখন দুটি বিষয়ে কাজ করতে হবে। মানবাধিকার নিশ্চিত করতে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা এবং আইনজীবীদের কল্যাণে কাজ করা। দেশে এখন স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা নেই। সরকারের হস্তক্ষেপ সব জায়গায়। তারপরও আইনজীবীরা আমাদের ভোট দিচ্ছেন, সরকারের এই হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার জন্য।

আইনজীবীদের জন্য ফান্ড বাড়িয়েছি, ক্যান্টিন করেছি, ব্যাংকের শাখা খুলেছি, পরিবেশটাই ভিন্ন হয়েছে। তাছাড়া দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে বিজ্ঞ আইনজীবীরা আমাদের আবারও ভোট দেবেন- বলেন মাহবুব উদ্দিন খোকন।

নির্বাচন নিয়ে আইনজীবীদের মতামত

তবে সাধারণ আইনজীবীরা মনে করছেন, এবারের নির্বাচনে কোন প্যানেল বিজয়ী হবে তা বলা কঠিন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তাদের মতে, বারের সভাপতি হওয়া উচিত- যিনি আইনজীবীদের স্বার্থ রক্ষার্থে কাজ করবেন।

সারাবাংলা/এজেডকে/এটি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর