‘সোনার বাংলার কারিগর হিসেবে শিশুদের গড়ে তুলতে চাই’
১৩ মার্চ ২০১৯ ১৭:১৫
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: শিশুদের সুপ্ত চেতনা ও মেধা বিকশিত করার মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ার কারিগর হিসেবে গড়ে চান বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, তারা মানুষের মতো মানুষ হবে। আজকের এ শিশুরাই একদিন ভবিষ্যতে দেশের কর্ণধার হবে। এরাই একদিন হয়তো আমার মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও হবে। আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে চাই। সেই সোনার বাংলা গড়ার মূল কারিগর তো আমাদের আজকের শিশুরাই হবে। সেভাবেই তাদের গড়ে তুলতে হবে।
বুধবার (১৩ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৯’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারে আসার পর থেকে চেষ্টা করেছি আপনাদের নানা সমস্যা দূর করতে, যেন মন-প্রাণ দিয়ে শিক্ষা দিতে পারেন। আপনারা মানুষ গড়ার কারিগর। আপনারা এমনভাবে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেবেন, যেন ভবিষ্যতে তারা এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
শিশুদের মেধার বিকাশে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি তাদের ওপর চাপ না দেওয়ার আহ্বানও জানান শেখ হাসিনা। শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শিক্ষাকে যেন কেউ ভয়ের কিছু মনে না করে। আমরা যখন ছোটবেলায় পড়লেখা করেছি, এসএসসি পরীক্ষা ছিল প্রথম বড় বোর্ড পরীক্ষা। এই পরীক্ষার কথা শুনেই নার্ভাস হয়ে যেতাম। হাত-পা কাঁপত, গলা শুকাত, পরীক্ষা দিতে গেলে সবাই নার্ভাস হয়ে যেতাম। কিন্তু ছোটবেলা থেকে যখন বোর্ডে পরীক্ষা দিতে দিতে অভ্যাস গড়ে উঠছে, তখন বড় হয়ে আর পরীক্ষা দিতে গিয়ে শিশুরা ভয় পায় না। আবার ক্লাশ ফাইভের পর হাতে একটা সার্টিফিকেট পাচ্ছে। তখন সেটা নিয়ে একটা ছবি তুলে সেই ছবিটা ঘরে টাঙিয়ে রাখলে সেটাও তো নিজের একটা মানসিক একটা শক্তি আসে।
শিক্ষার সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষার প্রয়োজন জানিয়ে শিশুদের অতিরিক্ত চাপ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষাটা যেন আরও উন্নত ও মানসম্মত হয়, সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি। আমরা সব শিশুর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল মেয়াদে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। শিক্ষার ক্ষেত্রে যত টাকা লাগে আমরা দিচ্ছি। খেলাধুলা, শরীরচর্চা, সঙ্গীতচর্চা ও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করে শিক্ষাকে সার্বজনীন ও বহুমুখী করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রাইমারিতে খেলাধুলায় মনোযোগী করতে বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি ছোট শিশুরা প্রতিযোগিতা করে এখন ধীরে ফুটবল খেলায়, ক্রিকেট খেলায় বেশ পারদর্শী হয়ে যাচ্ছে। এখন যখন পুরস্কার দিচ্ছিলাম, একটি একটি ছোট্ট সোনামণি মেয়ে আমাকে বললো, সে ভালো ক্রিকেট প্লেয়ার হতে চায়। শুনে আমার খুব ভালো লাগল। তাদের ভেতর যে আকাঙ্ক্ষা— তারাও প্রতিযোগিতা করবে, সেখান থেকে তারা পুরস্কার পাবে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য তারা আন্তর্জাতিক সম্মাননা নিয়ে আসবে। সেটাই আমরা আশা করি। তাছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাব স্কাউটিংও পর্যায়ক্রমে চালু হবে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী শিশুদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের ছোট্ট সোনামণিদের বলব, আজ অনেকগুলো পুরস্কার দিলাম। আশা করি আরও পুরস্কার দিতে পারব। কারণ আমাদের এই শিশুরা তারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তোমরা আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলো, লেখাপড়ায় মনোযোগ দিয়ো, সঙ্গে খেলাধূলা-সাংস্কৃতিক চর্চা— যার যে গুণ আছে, সেগুলো যেন বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়। এদিকে বিশেষভাবে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল হোসেন।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা