এমা ও কলিকে ফেরাতে ঢাকা-কাবুল চিঠি চালাচালি
১৩ মার্চ ২০১৯ ১৮:৪৯
।। এম এ কে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: তানিয়া ফারহানা এমা ও কাওসার সুলতানা কলি নামে দুই বাংলাদেশিকে ফেরত দিতে চায় আফগানিস্তান সরকার। এই দুজন আফগানিস্তান সেনাবাহিনীর সন্ত্রাস নির্মূল অভিযানে আটক হয়েছেন। আফগানিস্তানের নিরাপত্তার স্বার্থে এমা ও কলিকে ফেরত দেওয়ার জন্য ঢাকার সঙ্গে অনবরত যোগাযোগ করছে কাবুল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, বাংলাদেশি দুই নারী তানিয়া ফারহানা এমা (৩০) ও কাওসার সুলতানা কলি (৩৯) গত বছর আফগানিস্তান সেনাবাহিনীর সন্ত্রাস নির্মূল অভিযানে আটক হয়। গত বছরের জুন মাসে কাবুলের পক্ষ থেকে ঢাকাকে ঘটনাটি জানিয়ে ওই দুই নারীকে বাংলাদেশে ফেরত নেওয়ার জন্য বলা হয়।
ঢাকা-কাবুল অনেক চিঠি চালাচালির পর গত বছরের নভেম্বরে এমা এবং কলি প্রকৃত অর্থেই বাংলাদেশি কি-না, তদন্ত করে দেখার জন্য বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, এমা ও কলি বাংলাদেশি, এই বিষয়ে তারা এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়েছে। তবে এই দুইজন নারী জঙ্গি কি-না, তাদেরকে আফগানিস্তান সরকার কেন ফেরত পাঠাতে চাইছে এবং তাদের সন্তানদের বাংলাদেশ গ্রহণ করবে কি-না এসব বিষয়সহ আরও অনেকগুলো বিষয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সারাবাংলাকে জানান, বিষয়টি স্পর্শকাতর, খুবই জটিল এবং জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। এমা ও কলির বিষয়ে অনেক কিছু বিবেচনা করার পাশাপাশি কিছু বিষয় ক্রসচেক করে যাচাই করতে হচ্ছে। বিষয়টির সঙ্গে কতটুকু জঙ্গি বা সন্ত্রাস সংশ্লিষ্ট তাও দেখতে হচ্ছে। পুরো যাচাই প্রক্রিয়া শেষ না হলে এমা এবং কলি বাংলাদেশে ফিরতে পারবে কি-না বলা যাচ্ছে না।
পররাষ্ট্র এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সারাবাংলাকে আরও জানান, পুরো বিশ্বের কোথাও জঙ্গি, সন্ত্রাস বা চরমপন্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জায়গা নেওয়ার নজির নেই। সর্বশেষ আইএসের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করেছে যুক্তরাজ্য। তাই এমা এবং কলির বিষয়টি যাচাই-বাছাই শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পুরো প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত দেবেন যে এমা এবং কলি বাংলাদেশি ফিরতে পারবে কি পারবে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের আগস্টে আফগান্তিানের হেলমান্দ প্রদেশে এক সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। ওই অভিযানে তানিয়া ফারহানা এমা সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন। এমা এখন অসুস্থ। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে।
তানিয়া ফারহানা এমা বাংলাদেশে থাকাকালীন সাইফুল নামে একজনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তারপর দুজনই আফগানিস্তান পাড়ি দিয়ে তালেবান গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগ দেন। তালবানদের বিরুদ্ধে আফগান সরকারের কোনো এক অভিযানে সাইফুল নিহত হন। পরবর্তী সময়ে শফিক নামের আরেকজনকে বিয়ে করেন এমা।
অন্যদিকে, কাওসার সুলতানা কলি ঢাকার পশ্চিম ভাষানটেকের বাসিন্দা। কলি ২০১৭ সালে কান্দাহারে আফগান সেনাবাহিনীর সন্ত্রাস নির্মূল অভিযানে ধরা পরে। কলি এখন অসুস্থ। কলি বাংলাদেশে থাকাকালে মতিউর রহমান নামের একজনকে বিয়ে করেন। পরবর্তী সময়ে তারা দুজনই নিখোঁজ হন। কলির চার জন বাচ্চা রয়েছে বলেও জানা গেছে।
সারাবাংলা/জেআইএল/এমআই