চিকিৎসার অভাবে মারা যায় ৮০ ভাগ কিডনি রোগী
১৪ মার্চ ২০১৯ ০০:১১
।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ কিডনি রোগীর মৃত্যু হয় চিকিৎসা করাতে না পেরে। অথচ সচেতন হলে এবং শুরুতেই রোগ শনাক্ত করা গেলে এই মৃত্যুর সংখ্যা অনেকখানি কমিয়ে আনা যায়, বলছেন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, আক্রান্ত দুই কোটি মানুষের মধ্যে ৪০ হাজার রোগী দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে যাদের কিডনি একসময় সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যাচ্ছে। তখন ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজন ছাড়া বাঁচার উপায় থাকে না। কিন্তু এ দুটো পদ্ধতিই অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে শতকরা ৮০ শতাংশ রোগী মারা যায়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করলে অনেক সময় কিডনি রোগ প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা যায় এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যাদের ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা যদি তাদের রক্তের স্যুগার এবং ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ রাখেন তাহলে তাদের কিডনি রোগের সম্ভাবনা কমে যায়। আমরা যদি সচেতন হই তাহলে কিডনি রোগে বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
বিশ্বে প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ বিভিন্ন কারণে কিডনিরোগে আক্রান্ত এবং দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগে প্রতিবছর প্রায় ২৪ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়। তাই কিডনি রোগ বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য থেকে জানা যায়, পৃথিবীর ৭৬৮ কোটি মানুষের মধ্যে ৮৫ কোটি মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর ২৪ লাখ মানুষ মারা যায়। আকস্মিক কিডনি বিকল রোগ সঠিকভাবে চিকিৎসা করা না হলে সেটি দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে পরিণত হতে পারে। প্রতিবছর ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ আকস্মিক কিডনি বিকল রোগে আক্রান্ত হয়। আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেখা যায় আকস্মিক কিডনি রোগের প্রায় ৮৫ শতাংশই নিম্ন এবং নিম্ন মধ্য আয়ের দেশের জনগণ। প্রতি বছর ১৭ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করে আকস্মিক কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি রোগী মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে ভুগছে যা কি-না মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে- ডায়াবেটিস জনিত কারণে ৪১ ভাগ, উচ্চ রক্তচাপের কারণে ৩৩ ভাগ, সংক্রমণজনিত কারণে ২৫ ভাগ এবং অন্যান্য কারণে এক ভাগ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। আর মোট রোগীর ২০ ভাগ রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির আওতায় আসলেও ৮০ ভাগ কিডনি রোগী চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান। যাদের মধ্যে ৩৫ হাজার রোগীর কিডনি স্থায়ীভাবে অকার্যকর হয়ে যায়।
এছাড়া দেশে আকস্মিকভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত হন ১৫ থেকে ২০ হাজার এবং ধীরগতিতে আক্রান্ত হন ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষ। আর এসব রোগীদের মধ্যে ডায়ালাইসিস করে বেঁচে আছেন ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. শহীদুল ইসলাম সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এর জন্য ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, নেফ্রাইটিস ও পেইনকিলার ওষুধ সেবনই দায়ী।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের গ্রাম, থানা, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিডনি বিশেষজ্ঞের সংখ্যা অনেক কম। ফলে কিডনি রোগীরা সঠিকভাবে চিকিৎসা পান না। প্রাথমিক অবস্থাতেই যদি এসব রোগীকে উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া যায় তবে কিডনিরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসবে।’
কিডনি ফাউন্ডেশনের মেডিকেল অফিসার ডা. শেখ মঈনুল খোকন সারাবাংলাকে বলেন, কিডনি রোগ যেমন অতিদ্রুত বাড়ছে তেমনি কিডনি চিকিৎসা সেবারও সংকট রয়েছে। কিডনি রোগ যে শুধুমাত্র চিহ্নিত কারণেই জন্যই হয় তা নয়; পাশাপাশি দারিদ্রতা, লিঙ্গ বৈষম্য, শিক্ষার অভাব, পেশাগত বিপত্তি এবং পরিবেশ দূষণের কারণেও কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিষয়ে যথাযথ নির্দেশনার অভাবের কারণে এসব রোগের প্রকোপ বেড়ে যাচ্ছে। দেখা যায় বিশ্বের অর্ধেকের বেশি দেশে দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিষয়ে যথাযথ নির্দেশনা কিংবা পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগে আক্রান্ত রোগীদের সামাজিক অবস্থান কিংবা পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় না এনে প্রত্যেককেই সেবা দিতে হবে এবং এই সেবা দ্রুততম সময়ে সর্বত্রই পাওয়া যাবে। সঙ্গে সঙ্গে মানুষ যেনো কিডনি রোগে আক্রান্ত না হয়ে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে তারা যেনো স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে- স্বাস্থ্যকর খাবার খায়, নিয়মিত শরীর চর্চা করে, ধূমপান ত্যাগ করে। কারণ এসবের মাধ্যমে কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
সারাবাংলা/জেএ/এমআই