Wednesday 15 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিশু কিডনি রোগীর সংখ্যা


১৪ মার্চ ২০১৯ ০৭:৪৩

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু রোগীদের মধ্যে ৫ থেকে ৭ শতাংশ শিশু কিডনি রোগে আক্রান্ত। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) প্রতিবছর বহির্বিভাগে ৭ হাজার শিশু কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেয়। ভর্তি হয় বছরে ৬ শতাধিক শিশু। আর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর মৃত্যুহার ১ শতাংশ।

জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১৪ বছরের সুপ্রিয়া (ছদ্মনাম)। মাদারীপুর জেলার সদরেই বাস তাদের। যেখানে তার বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাবার কথা, মাঠ কাঁপিয়ে খেলে বেড়ানোর কথা সেখানে সুপ্রিয়া গত তিনমাস চিকিৎসাধীন এ হাসপাতালে। তার কিডনি অকার্যকর হয়ে যাওয়াতে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সুপ্রিয়ার বাবাই মেয়েকে কিডনি দিয়েছেন।

কেবল সুপ্রিয়াই নয়, বকুল, নিশাত, শরীফসহ আরও শিশু-কিশোরদের দেখা মেলে এই হাসপাতালে। তাদের কারও কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে, কেউ অপেক্ষায় রয়েছে আবার কারও ডায়ালাইসিস চলছে।
জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন থেকে জানা যায়, প্রায় ৫০ লাখ শিশু বর্তমানে কিডনি রোগে আক্রান্ত। আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এই সংখ্যা। জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশন,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের শিশু ইউনিট, কিডনি ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও শিশু কিডনি রোগীর বেশ উপস্থিতি দেখা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার ৪৫ শতাংশ। সঠিক পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া, শারীরিক ব্যায়ামসহ খেলাধূলা না করা এবং স্থূলতা শিশুদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু কিডনি বিভাগের অধ্যাপক ও পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মাঈন উদ্দিন বলেন, দেশের হাসপাতালগুলোতে আগত শিশু রোগীর ৫ থেকে ৭ শতাংশ শিশু কিডনি রোগে আক্রান্ত।

তিনি বলেন, আক্রান্ত শিশু কিডনি রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ৬০ থেকে ৭০ জন শিশু কিডনি রোগ বিষয়ক চিকিৎসক বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত আছেন। বর্তমানে দেশে বিএসএমএমইউ, জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশু কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বছরে প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হচ্ছে।

ডা. গোলাম মাঈন উদ্দিন আরও বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপন ক্রনিক শিশু কিডনি রোগীদের প্রধান চিকিৎসা। এই চিকিৎসা শুধু বিএসএমএমইউয়ে দেওয়া হচ্ছে।

কিডনি ফাউন্ডেশনের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার ডা. মঈনুল খোকন বলেন, ‘প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থূলতাজনিত কিডনি রোগে আক্রান্ত শিশুরা হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছে। যা সত্যিকার অর্থেই উদ্বেগজনক।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বে প্রতি দশজনে একজন কিডনি রোগী। বাংলাদেশে এই হার প্রতি সাতজনে একজন। সারাবিশ্বে বয়স্কদের মধ্যে এ হার শতকরা ৪০ শতাংশ। শিশুদের ক্ষেত্রেও এ হার ক্রমাগত বেড়ে চলছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে এই স্থূলতার হার শহুরে শিশুদের মধ্যে ২০ শতাংশ এবং গ্রামের শিশুদের মধ্যে ৮ শতাংশ।’

ডা. মঈনুল খোকন বলেন, ‘প্রাথমিক অবস্থায় যদি রোগ শনাক্ত করা যায় এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে শিশুদের কিডনি রোগ থেকে বাঁচানো সম্ভব।’

বিজ্ঞাপন

শিশুদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো কী কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রস্রাব কমে যাওয়া, ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া, খাবারে অনীহা, দীর্ঘসময় জ্বরে ভোগা শিশুদের কিডনি আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। কিন্তু অনেক সময়ে অভিভাবকেরা এগুলো বুঝতে পারায় যথাসময়ে প্রিভেনশন করা সম্ভব হয় না।’

জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘একটু জ্বর কিংবা যে কোনও ব্যাথায় অভিভাবকেরা অনেক সময়ে একটি ব্যাথার ট্যাবলেট খাইয়ে দেন শিশুদের, যেটা শিশু কিডনি রোগের অন্যতম কারণ। বিশ্বব্যাপী গবেষণায় দেখা যায়, পেইন কিলার ওষুধগুলো এ রোগের অন্যতম উপসর্গ হিসেবে কাজ করে। তাই অভিভাবকদের এ প্রবণতা রোধ করতে হবে। একইসঙ্গে শিশুদের কোমল পানীয়, ফাস্ট ফুড, জাঙ্কফুড খেতে নিরুৎসাহিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শিশুদের খেলার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে খোলা মাঠে। তাদের মোবাইল নিয়ে খেলা এবং টিভি দেখার সময় কমিয়ে দিতে হবে। শিশুরা যত বেশি স্থূল হবে, তত এ রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।’

সারাবাংলা/জেএ/একে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর