গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আতঙ্কের কারণ নেই: বিইআরসি চেয়ারম্যান
১৪ মার্চ ২০১৯ ২০:১৬
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। গ্যাস বিতরণ কোম্পানি যা-ই প্রস্তাব করুক না কেন যৌক্তিক পর্যায়ে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিইআরসিতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আবেদনের ওপর শুনানিতে শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা যদি অতীতের দিকে তাকান তবে দেখবেন কোম্পানি যাই বলুক যৌক্তিক পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়েছে। ২০১৭ সালে ৯৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল, বিইআরসি ১১ শতাংশ বাড়িয়েছিল। ২০১৮ সালে ৭৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিপরীতে কোনো দাম বাড়ানো হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিতরণ কোম্পানিগুলোকে অনুরোধ করব যেন সঠিক পরিমাণে প্রস্তাব করে। কথায় আছে এলএমজি চাইলে কমপক্ষে পিস্তল তো পাওয়া যাবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।’
বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। নোটও করা হয়েছে। কমিশন পুরোপুরি স্বাধীন। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে বিচার-বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে। তবে আমরা কখনও কাউকে সন্তুষ্ট করতে পারিনি। দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবে ভোক্তাদের ওপর চাপ বেড়ে যায়। সে কারণে তারা স্বাভাবিক কারণেই অসন্তুষ্ট হন। গণশুনানিতে অনেকগুলো সুপারিশ এসেছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বলব বিষয়টি দেখার জন্য।’
স্থানীয় পর্যায়ে গিয়ে গণশুনানি করার প্রস্তাব এসেছে বিইআরসি বিবেচনা করবে বলে জানান চেয়ারম্যান।
জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব জহির রায়হান বলেন, ‘বিইআরসিকে অনেককিছু বিবেচনা করতে হবে। একদিকে যেমন ভোক্তা না থাকলে কোম্পানির কোনো দাম নেই, তেমনি কোম্পানি না থাকলে ভোক্তা সেবা পাবেন না। দুইপক্ষকেই বাঁচাতে হবে।’
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ১১ মার্চ গণশুনানি শুরু হয়। প্রথম দিনে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির হুইলিং চার্জ বৃদ্ধির আবেদনের ওপর শুনানি নেওয়া হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ছয়টি বিতরণ কোম্পানি পক্ষ থেকে দাম বৃদ্ধির ওপর গণশুনানি হয়। প্রত্যেকে ১০২ শতাংশ হারে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। প্রধান কারণ দেখানো হয়, চড়া দরে এলএনজি আমদানির কথা। তবে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে তীব্র বিরোধিতা করা হয়।’
গণশুনানিতে অংশ নিয়ে ভোক্তারা বিশেষ ক্ষমতা আইন বন্ধ, বাপেক্সকে শক্তিশালী করা, দেশীয় গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম জোরদার করার প্রস্তাব দেন।
এদিকে, কর্ণফুলী ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তাদের প্রস্তাবে আবাসিকে এক চুলা বর্তমান দর ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৩৫০ টাকা, দুই চুলা ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৪৪০ টাকা এবং প্রি-পেইড মিটারে ৯ দশমিক ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ দশমিক ৪১ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
অন্যদিকে বিদ্যুতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম তিন দশমিক ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৭৪ টাকা, সিএনজিতে ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮ দশমিক ১০ টাকা, সার উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার দুই দশমিক ৭১ টাকা থেকে বাড়িয়ে আট দশমিক ৪৪ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯ দশমিক ৬২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ দশমিক শূন্য ৪ টাকা, শিল্পে সাত দশমিক ৭৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪ দশমিক শূন্য পাঁচ টাকা এবং বাণিজ্যিকে ১৭ দশমিক শূন্য চার টাকার পরিবর্তে ২৪ দশমিক শূন্য পাঁচ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে তারা বিতরণ চার্জ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে।
এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চলের পক্ষ থেকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, বর্তমান প্রস্তাবনা অনুযায়ী গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৮৭ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩৪৮ দশমিক ৩০ মিলিয়ন টাকা অতিরিক্ত উৎসে আয়কর কাটা হবে। এ জন্য ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব চাহিদা হবে যথাক্রমে এক হাজার ১৮১ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন টাকা এবং এক হাজার ৩৫৩ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন টাকা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যৌক্তিকভাবে ভারিত গড়ে প্রতি ঘনমিটারে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১ দশমিক ০৬৪ টাকা এবং ১ জুন থেকে শূন্য দশমিক ৯৭৩ টাকা বিতরণ চার্জ নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খায়েজ আহমদ মজুমদার বলেন, ‘কোম্পানির পক্ষ থেকে এলএনজি আমদানির কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ৪০ দশমিক ২৫ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ২১১ ভাগ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। একইসঙ্গে বিতরণ চার্জ শূন্য দশমিক ২৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য প্রতি ঘনমিটারে ১ দশমিক ০৬ টাকা এবং শূন্য ৭৭ টাকা করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।’
এদিকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি ও কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে মূল্যায়ন কমিটির পক্ষ থেকে মো. কামরুজ্জামান জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রতিদিন গড়ে ৩২০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি বিবেচনায় গ্যাসের গড় সরবরাহ ব্যয় দাঁড়ায় প্রতি ঘনমিটার ৭ টাকা ৯২ পয়সা। অন্যদিকে প্রতিদিন গড়ে ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ বিবেচনায় গ্যাসের সরবরাহ ব্যয় দাঁড়ায় প্রতি ঘনমিটারে ১১ টাকা ৭৭ পয়সা। অন্যদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ বিবেচনায় গ্যাসের গড় সরবরাহ ব্যয় প্রতিঘনমিটারে ১২ টাকা ৪৩ পয়সা হবে।
তিনি বলেন, ‘কমিশন গত বছরের ১৬ অক্টোবর জারি করা আদেশে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির বিতরণ চার্জ শূন্য দশমিক ৩৩৯৪ টাকা এবং কর্ণফুলীর শূন্য দশমিক ২৫ টাকা নির্ধারণ করে। যা গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর। ফলে চলতি অর্থবছর শেষে প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে বিতরণ চার্জ পুনঃনির্ধারণ করা যেতে পারে।’
সারাবাংলা/এএইচএ/একে
আরও পড়ুন
দাম বাড়ানো নয়, গ্যাসের দাম কমানোর জন্য গণশুনানি দাবি
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে রিট
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে বিরোধিতা ব্যবসায়ীদের