Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৬১ বছর পর চালু হচ্ছে লালমনিরহাট বিমানবন্দর


১৫ মার্চ ২০১৯ ২০:২৯

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: একসময় এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দরের খ্যাতি পাওয়া লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ৬১ বছর পর বিমানবন্দরটি নতুন করে কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায়।

কর্তৃপক্ষ বলছে, লাইসেন্সধারী বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো চাইলে যে কোনো সময় বিমানবন্দরটি ব্যবহার করতে পারবে। তবে সরকারিভাবে বিমান চালু করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। এ বছরের মধ্যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) শফিউল আরিফ।

তিনি বলেন, ‘শিগগিরই বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা মেনে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রাইভেট এয়ারলাইন্সগুলো চাইলে এটিতে ফ্লাইট চালু করতে পারে।’

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি। এখানে উড়োজাহাজ কারখানা করার ঘোষণাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ঘোষণাকে বাস্তবে রূপ দিতে বিমান বাহিনীর প্রকৌশলীরা দুই দিনব্যাপী বন্দরের বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন। এছাড়া উড়োজাহাজ কারখানার সম্ভাব্যতা যাচাই করেন।’

বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত বুধবার (১৩ মার্চ) লালমনিরহাট বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসেন। এরপর বিমান বাহিনীর প্রকৌশলীদের সঙ্গে নিয়ে পুরো বিমানবন্দর ঘুরে দেখেন এবং এর সম্ভব্যতা যাচাই করেন। এরপর সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও সিভিল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিমানবন্দরে সভা করেন বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত।

বিজ্ঞাপন

সভায় এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে পরিত্যক্ত বিমানবন্দরটি প্রথমদিকে বিমান কারখানা হিসেবে চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারখানা করার পর যাত্রী পরিবহনের জন্য চালু হবে ফ্লাইট।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ সভার বরাত দিয়ে আরও বলেন, ‘বিশাল এ বিমানবন্দরটিতে প্রথম দিকে বিমান কারখানা করা হবে। পরে এখানে চাহিদা অনুযায়ী যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হবে। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তার স্বার্থে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। চার কিলোমিটার রানওয়ে, বিশাল টারমাক, হ্যাঙ্গার, ট্যাক্সিওয়েসহ সব অবকাঠামো একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দরের আদলেই রয়েছে। প্রয়োজন শুধু সীমানা প্রাচীর।’

জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ আরও বলেন, ‘সীমানা প্রাচীরের কারণে বিমানবন্দরের জমি ব্যবহারকারী কৃষকদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। এরইমধ্যে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। কৃষকদের খুশি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে এ বিমানবন্দরটির সম্ভাব্যতা যাচাই করতে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দিনভর যশোর বিমান বাহিনীর একটি প্রকৌশলী দল দু’টি বিমান সফলভাবে ওড়াতে ও ল্যান্ডিং (অবতরণ) করতে সক্ষম হয়। তাদের সাফল্যের পর এ বৈঠকে বিমান কারখানা স্থাপন ও ফ্লাইট চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। কয়েক যুগ ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা লালমনিরহাট বিমানবন্দরে দুইদিন ধরে উড়োজাহাজ উড়তে দেখে স্থানীয়দের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়।

বুড়িমারী স্থলবন্দরে ভারত, ভুটান ও নেপালের মধ্যে যাত্রী পরিবহন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য জেলাবাসী দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দরটি চালু করার দাবি জানিয়ে আসছিল।

বিজ্ঞাপন

বিমানবন্দর চালুর ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (মিডিয়া) কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে অবকাঠামো তৈরি করে দিলে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে ফ্লাইট চালু করতে কোনো সমস্যা নেই। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দেশের সব বিমানবন্দরে ফ্লাইট করতে সবসময় উদ্যেগী হয়ে আছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ শেষ হলেই আমরা লালমনিরহাট টু ঢাকা ফ্লাইট শুরু করব।’

১৯৩১ সালে ব্রিটিশ সরকার লালমনিরহাটে বিমানবন্দর নির্মাণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনী এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এ বিমানবন্দরটি ব্যবহার করে। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে এটি অব্যবহৃত থেকে যায়। তবে ১৯৫৮ সালে স্বল্পপরিসরে ফ্লাইট চালু হলেও তা বেশি দিন আলোর মুখ দেখেনি।

১৯৮৩ সালের দিকে বিমানবন্দরের জমি ‘কৃষি প্রকল্প’ হিসেবে ব্যবহার করছে বিমান বাহিনী।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

বিমানবন্দর লালমনিরহাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর