বুড়িগঙ্গায় দুর্গন্ধময় এক বিকেল
১৫ মার্চ ২০১৯ ২১:৫৮
।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: প্রাচীন শহর ঢাকার অন্যতম নদী বুড়িগঙ্গায় যেন শোক নেমেছে। বুড়িগঙ্গার পানির রং দেখে মনে হয় গভীর শোক তার। শোকের চেয়ে আরও গভীর শোক তার বুকে জমে থাকা কালো পানিতে।
কালো রঙের পানি উৎকট গন্ধ ছড়াচ্ছে। নদীর পানিতে ভাসছে নানা ধরনের ময়লা-আবর্জনা।রবুড়িগঙ্গার ওপর দিয়ে এখনও প্রাণের চলাচল রয়েছে। তবে তা প্রাণবন্ত নয়। এই প্রাণগুলোতে খেলা করছে এক ধরনের বাধ্যবাধকতার প্রতিচ্ছবি।
সদরঘাট থেকে পোস্তগোলা সেতু পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা নদীর দুইপাড় শুক্রবার (১৫ মার্চ) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নদীর পানি কালো কুচকুচে। পানি থেকে ছড়াচ্ছে উৎকট বিশ্রি গন্ধ। বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনা যেন বুড়িগঙ্গায় স্থায়ী নিবাস গড়েছে।
এই পথে যারা চলাচল করছেন তাদের অনেকের কাছেই বুড়িগঙ্গার এই চিত্র সহনীয় হয়ে গেছে। আবার অনেকে কোনোরকমে নাক-মুখ চেপে যাতায়াত করছেন।
সদরঘাট থেকে বুড়িগঙ্গার ওপারে মীরের বাগের বাসিন্দা রাসেল শিকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘পেশাগত কারণে প্রতিদিনই দুইবার করে বুড়িগঙ্গা পাড়ি দিতে হয়। এই পথে এতই দুর্গন্ধ যে দম (শ্বাস-প্রশ্বাস) নেওয়া দায় হয়ে পড়ে।’
সদরঘাট থেকে পোস্তগোলা সেতুর পূর্ব-উত্তর পাড় ধরে গড়ে উঠেছে সবজি-মসলার আড়ত, ইট-পাথর-রড়-কাঠের কারখানাসহ একাধিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এর পেছনে রয়েছে প্লাস্টিক কারখানা, রং তৈরির কারখানা, কাপড় ধোলাইয়ের মিলসহ একাধিক রাসায়নিক সংক্রান্ত কাজ-কারবার।
অন্যদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ে (পোস্তগোলা থেকে কেরানীগঞ্জ) গড়ে ওঠেছে পোশাক তৈরির কারখানা, জাহাজ মেরামতের ডকইয়ার্ডসহ রাসায়নিক সংক্রান্ত একাধিক কারখানা। এ ছাড়া ঢাকা ওয়াসার পয়ঃনিষ্কাশনের পানিও এসে গড়িয়ে পড়ছে বুড়িগঙ্গার বুকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং কল-কারখানার ময়লা-আবর্জনাগুলো সরাসরি বুড়িগঙ্গায় আসছে। দীর্ঘদিন ধরে এই চর্চা থাকায় বুড়িগঙ্গার পানির রঙ স্বাভাবিক থেকে কুচকুচে কালোতে ধারণ করেছে।
বুড়িগঙ্গার পাড় ধরে সরকার একাধিকবার বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলেও দুইপাড়ের কোথাও কোনো বৃক্ষ দেখা যায়নি। পাশাপাশি বুড়িগঙ্গার পানি শোধন করতে এবং পানি থেকে ময়লা নিষ্কাশনের জন্য সরকারের তরফে একাধিক উদ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়ন করা হলেও সরেজিমনে গিয়ে পানি থেকে উৎকট গন্ধ পাওয়া গেছে।
বুড়িগঙ্গার পরিবেশ নিয়ে সারাবাংলা’র এই প্রতিবেদকের সঙ্গে পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের আলাপ হয়।
তিনি বলেন, ‘বুড়িগঙ্গার পানি জীবনের জন্য অযোগ্য। সেখানে কোনো জলজ প্রাণী বাঁচার পরিবেশ নেই। শুধু তাই নয় বুড়িগঙ্গার পরিবেশ মানুষের জন্যও ক্ষতিকর।’
পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলনের আবু নাসের খান বলেন, ‘সর্বশেষ ২০১৬ সালে বুড়িগঙ্গার পানি পরীক্ষা করা হয়। তখন পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা মাত্রা শূন্যের কোঠায় ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা মহানগর ও কেরানিগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার গৃহস্থালি, শিল্পকারখানা ও হাসপাতালের কঠিন বর্জ্যের একটা বড় অংশ কোনো শোধন ছাড়াই প্রতিদিন বুড়িগঙ্গায় পড়ছে। এতে বুড়িগঙ্গার পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’
সারাবাংলা/জেআইএল/একে