কুমিল্লায় বিদ্যুৎ বিতরণ সক্ষমতা বাড়াতে প্রকল্প
২২ জানুয়ারি ২০১৮ ১২:৫৫
জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা : কুমিল্লার ১৩ উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণের সক্ষমতা বাড়াতে নতুন প্রকল্প নিয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে খরচ হবে এক হাজার ৪৫৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান। ওই কর্মকর্তা জানান, অনুমোদন পেলে চলতি মাস থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস সারাবাংলা’কে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী কুমিল্লার ৬টি জেলার ১৩টি উপজেলায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণ করতে প্রয়োজনীয় সহায়ক অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।
প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা জেলার কুমিল্লা সদর উপজেলা, চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম ও বুড়িচং উপজেলা; ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলা, আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলা; চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর সদর উপজেলা; নোয়াখালী জেলার মাইজদি উপজেলা, বেগমগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা; ফেনী জেলার ফেনী সদর উপজেলা এবং লক্ষীপুর জেলার লক্ষীপুর সদর উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগের আওতায় ৬টি জেলার অন্তর্গত মোট ১৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আওতাধীন কুমিল্লা বিতরণ জোন। ২০৩০ সাল নাগাদ বিতরণ জোন কুমিল্লার চাহিদা নির্ধারণ করার জন্য পিডিবির নিজস্ব প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৫ সালে সম্পাদিত সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনের হিসেব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বিতরণ জোন কুমিল্লার সর্বোচ্চ বিতরণ চাহিদা ছিল ৩০৫ মেগাওয়াট। ২০১৭ সালে কুমিল্লা বিতরণ জোনের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা প্রায় ৩৬৬ মেগাওয়াট। কিন্তু এই চাহিদা মেটানোর জন্য প্রায় ৪২৭ মেগাওয়াট বা ৫৩৬ এমভিএ ক্ষমতার ৩৩/১১ কেভির ১৪টি উপকেন্দ্র রয়েছে। অর্থাৎ উপকেন্দ্রগুলোর ক্ষমতার ৮৬ শতাংশ ব্যবহ্নত হয়ে হেছে এবং অব্যবহ্নত রয়েছে মাত্র ১৪ শতাংশ।
২০৩০ ও ২০৪১ সাল নাগাদ দেশকে মধ্যম ও উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত করার জন্য সরকার দেশব্যাপী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ক্রমবর্ধমান শিল্পায়নের ফলে সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা বার্ষিক ১০ থেকে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার প্রক্ষেপণ হচ্ছে, ২০২০ সালে ১৪ হাজার ৪৬০ মেগাওয়াট, ২০৩০ সালে ২৭ হাজার ৩৯৩ মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালে ৫০ হাজার ৯৭৯ মেগাওয়াট। শহরে শিল্প কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, জনবসতি, হাই-রাইজ ভবন ইত্যাদি বৃদ্ধি পাওয়ায় লোডের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিতরণ জোন কুমিল্লার গত ৫ বছরের বিদ্যুৎ চাহিদার প্রবৃদ্ধি সমীক্ষা করে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ চাহিদার বৃদ্ধি বিবেচনায় নিয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই জোনের বিদ্যুতের চাহিদা ১ হাজার ২৭৫ মেগাওয়াট প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।
সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ সূত্র জানায়, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ এর অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৪ হাজার ২০০ কিলোমিটার নতুন লাইন নির্মাণ, ১১৫টি সাব-স্টেশন নির্মাণ, ১৪ লাখ নতুন গ্রাহক সংযোগ ও সিস্টেম লস ৯ দশমিক ৮ শতাংশে হ্রাস করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২ হাজার ১০৬ কিলোমিটার নতুন লাইন নির্মাণ, বিদ্যমান ১ হাজার ২০২ কিলোমিটার পুরাতন লাইন রিনোভেশন, ১৪টি নতুন ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র স্থাপন, ১৯টি বিদ্যমান ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রের রিনোভেশন ও আপগ্রেডেশনসহ বিদ্যুৎ বিতরণে আধুনিক মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য স্ক্যাডা সিস্টেম প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম গুলো হচ্ছে, ১৪টি ৩৩/১১ কেভি নতুন উপকেন্দ্র নির্মাণ করা, বিদ্যমান ১৯টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র নবায়ন ও আপগ্রেডেশন করা, নতুন ২ হাজার ১০৬ কিলোমিটার ৩৩ কেভি, ১১ কেভি, ১১/৪ কেভি ও শূন্য দশমিক কেভি বিতরণ লাইন নির্মাণ, আবাসিক ভবন, অফিস ভবন, রেস্ট হাউজ, বাউন্ডারি ওয়াল অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ এবং স্ক্যাডা সিস্টেম স্থাপন করা হবে।
সারাবাংলা/জেজে/জেএএম