Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্কুল যাতায়াতে বছরে ৮৮০ শিশুর মৃত্যু, তবু রাজধানীতে স্কুলবাস ৮টি


১৮ মার্চ ২০১৯ ০৮:০০

।। সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: রাজধানীর তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নওরিন। মায়ের সঙ্গে স্কুল যাওয়ার পথে কাজিপাড়া বাসস্ট্যান্ডে পাবলিক বাসে উঠতে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই গাড়িটি ছেড়ে দেয়। এতে সেখানেই ছিটকে পড়ে সে। মেয়ের পাশে থাকা মা লিপি আখতার ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ভ হয়ে স্থির দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, নওরিন কিভাবে রাস্তায় ছিটকে পড়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

লিপি সারাবাংলাকে বলেন, সেদিনের ঘটনায় কিভাবে আমার মেয়েটা বেঁচে গেল, আমি জানি না। আমি শুধু দেখছিলাম মেয়েটা গাড়ির চাকার নিচে চলে যাচ্ছে। এরপর থেকে আমরা ভয়ে আর ফার্মগেটের স্কুলে যাই না, বাসেও উঠি না। বাড়ির পাশের একটি স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। মেয়েটি  আগের স্কুলে ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিল। নতুন স্কুল তার ভালো লাগছে না।

রাজধানীতে এমন দুর্ঘটনার  আর ভোগান্তিতে  সন্তানদের নিয়ে স্কুল যাতায়াত করেন বেশিরভাগ অভিভাবক। তারা  সড়ক দুর্ঘটনানহ নানা ধরনের হয়রানিরও  শিকার হন হরহামেশা। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে তাদের করারও তেমন কিছু নেই।

এদিকে, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির গত বছরের (২০১৮) তথ্য বলছে, স্কুলে আসা যাওয়ার পথে গত এক বছরে সারাদেশে ৮৮০ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, স্কুলবাস থাকলে দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমে যেত। একইসঙ্গে ঢাকার যানজটও কমত। কারণ স্কুলবাসে যাতায়াত করলে অনেক প্রাইভেট কার রাস্তায় কম চলবে। কারণ মাত্র একটি প্রাইভেট কারে একজন শিক্ষার্থী স্কুলে যায়, এমন চিত্রই বেশি দেখা যায়।

অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্কুলে যাওয়ার সময় বাস সংকট আর যানজটে প্রতিদিন তাদের নাস্তানাবুদ হতে হয়। আরার রাস্তায় হঠাৎ দুয়েকটি স্কুলবাস চোখে পড়লেও  শিক্ষার্থীদের দেখে সেগুলো থামেও না। থামালেও বড়দের উঠতে দিয়ে শিক্ষার্থীদের উঠতে দেওয়া হয় না। তিন বছর আগে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে স্কুলের বাসের দাবি নিয়ে পরিবহনমন্ত্রীর পথ আটকেছিল সাহসী স্কুলছাত্রী সামসুন্নাহার শতাব্দী। পরের দিন থেকে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিতে বাস এসেছিল।

বিজ্ঞাপন

বিমানবন্দর সড়কের এমইএস মোড়ের শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের শিক্ষার্থীরা এভাবে বাস পেলেও রাজধানীর সরকারি বেসরকারি ছয় শতাধিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের বাস নেই।

২০১১ সালে খানিকটা ঘটা করেই চালু হয়েছিল স্কুলবাস সার্ভিস নামে ১৪টি বাস। শেষমেষ এই বাসের সংখ্যা দু’টিতে এসে ঠেকেছিল। এরপর রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের শিক্ষার্থীরা আরও একটি বাস পায় শতাব্দীর সাহসী ভূমিকায়। আর রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী জাবালে নুর পরিবহনের বাসচাপায় প্রাণ হারানোর পর প্রধানমন্ত্রী গত বছরের আগস্টে বিআরটিরিস পুরনো পাঁচটি বাস দেন শিক্ষার্থীদের জন। এছাড়া রাজধানীর শত শত স্কুল-কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য কোনো বাসের ব্যবস্থা নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, গত বছরের বাজেটে স্কুলবাস কেনা শুল্ক ফ্রি করেও সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলোকে নিজস্ব বাস কেনাতে পারেনি সরকার। ফলে এখন রাজধানীতে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজ শাখার ছয়টি বাস ও মিরপুর থেকে আজিমপুর সড়কে দু’টি বাস ছাড়া কোনো স্কুলবাস নেই।

মিরপুর ১২ নম্বর থেকে মিরপুর ১০, ১, টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর, শ্যামলী, আসাদগেট, কলাবাগান, নিউমার্কেট হয়ে আজিমপুর রুটে চলে বাস দু’টি। এতে ২৬টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা যাতায়াত সুবিধা পান।

এর বাইরে রাজধানীজুড়ে শিক্ষার্থীদের চলতে যানজট মোকাবিলা আর বড়দের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হয়। তবে সেখানেও বৈষম্যের শিকার তারা। কারণ রাজধানীর বিভিন্ন মোড় ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থী দেখলেই বাসচালক ও হেলপার তাদের তুলতে অনাগ্রহ দেখান। এর কারণ হিসেবে তারা বলছে, শিক্ষাথীরা হাফ ভাড়া দেয়।

আবার সিটিং সাভিস হিসেবে চলা রাজধানীর তিনশ বাস কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকেই হাফ ভাড়া নেয় না। রাষ্ট্রীয় পরিবহন প্রতিষ্ঠান বিআরটিসির চালক-হেলাপারদের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের বাসে তুলতে অনাগ্রহ দেখা গেছে।

এদিকে, সবশেষ বিআরটিসিতে ভারত থেকে কেনা ছয়শ বাস সংযোজনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টির মতো বাস এসেও গেছে। কিন্তু এবারও শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো বাস রাখা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআরটিসি চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূইয়া সারাবাংলাকে জানান, নতুন বাসগুলো দিয়ে নতুন রুট চালু করে বিআরটিসিকে লাভজনক করাই তাদের লক্ষ্য।

সারাবাংলা/এসএ/জেডএফ/টিএস

বিআরটিসি স্কুলবাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর