ক্রাইস্টচার্চের সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ গেল যাদের
১৮ মার্চ ২০১৯ ১৮:০৪
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি পার্কের আল নূর ও শহরতলী লিনউডের মসজিদে চালানো এই নৃশংস হামলা থেকে রক্ষা পায়নি নারী কিংবা শিশু কেউই।
হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট (২৮) অস্ট্রেয়িলার নাগরিক। ইউরোপে মুসলিম অভিবাসীদের ওপর ঘৃণার বশবর্তী হয়েই তিনি এই হামলা চালিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
মসজিদে বন্দুক হামলায় নিহতদের অনেকের পরিচয় ও ছবি প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল:
বৈমানিক হওয়ার ইচ্ছায় নিউজিল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশন একাডেমিতে পড়তেন ২৪ বছরের যুবক ওজির কাদির। ক্রাইস্টচার্চে এসেছিলেন গত বছরেই। হামলায় মৃত্যু হয় তার।
ছেলেকে দেখতে ক্রাইস্টচার্চ এসেছিলেন মেহবুব আল্লারখা খোকের (৬৫)। নিজ দেশ ভারতে আর ফেরা হয়নি এই বাবার।
গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়, মসজিদে গুলির শব্দ শুনে হুইল চেয়ারে থাকা স্বামীর খোঁজ নিতে আসেন হুসনে আরা পারভিন। বুন্দকধারীর গুলিতে মুখ থুবড়ে পড়েন তিনি। অনেক বছর থেকেই সুইজারল্যান্ডে বসবাস করতেন পারভিন। তিনি এসেছেন বাংলাদেশ থেকে।
মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি ইনি হামলার শিকার হওয়া মসজিদ আল-নূরের ইমাম আশরাফ আলী। তার জন্মস্থান ফিজিতে।
সৈয়দ আরিব আহমেদ (২৬)। এই অভিবাসী এসেছেন পাকিস্তানের করাচি থেকে। নিহত হয়েছেন ক্রাইস্টচার্চ হামলায়।
সৈয়দ জাহানন্দ আলী (৪৩), পাকিস্তানের নাগরিক। নিহতদের মধ্যে তিনিও একজন।
মসজিদে সন্ত্রসী হামলায় আরও মারা গেছেন লিন্ডা আর্মস্ট্রং (৬৫)।
তারিক ওমরেরও (২৪) রক্ত ঝরেছে সেদিন।
আব্দুল্লাহ কোশেম (৬০) মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যানটাবরির সাবেক সেক্রেটারি। ফিলিস্তিনের এই অভিবাসীও মারা যান আল-নূর মসজিদে বন্দুক হামলায় ।
সোহাইল শহিদ পাকিস্তানের নাগরিক। তারও মৃত্যু হয় বন্দুক হামলায়।
আলি এলমাদানি (৬৫) নিউজিল্যান্ডে আসেন ১৯৯৮ সালে। অবসরপ্রাপ্ত এই প্রকৌশলীরও মৃত্যু হয় সেদিন।
কামেল দারউইশ (৩৮) মাত্র ৬ মাস আগে জর্ডান থেকে নিউজিল্যান্ড আসেন। প্রকৃতির অপার মুগ্ধতার এই দেশে এমন ঘটনা ঘটবে তা হয়তো তিনি ভাবতেও পারেননি।
নির্বিচারে গোলাগুলিতে মৃত বাবা ও ছেলে। মোহাম্মদালি ভোরা (৫৮) ও তার ছেলে আরিফভাই ভোরা (২৮)।
মোহাম্মদ ওমর ফারুক (৩৬), বাংলাদেশের এই যুবক নিহত হয়েছেন শুক্রবারের সন্ত্রাসী হামলায়।
লিংকন ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স অব এগ্রিবিজনেস-এ পড়ছিলেন আনিস আলিভাবা। হামলায় মৃত্যু হয় এই শিক্ষার্থীর।
ইন্দোনেশিয়ার লিলিক আব্দুল হামিদও (৫৮) মারা যান সন্ত্রাসী হামলায় । পরিবারে তার দুই সন্তান রয়েছে।
মৃত বাবা আমজাদ হামিদের বাহুডোরে খুঁজে পাওয়া যায় তিন বছর বয়সী মুকাদ ইব্রাহিমের লাশ। চিকিৎসক আমজাদ হামিদ ২৩ বছর আগে নিউজিল্যান্ডে এসেছিলেন উন্নত জীবনের আশায়।
প্রকৌশলী ও পাঁচ সন্তানের জনক হাজি দাউদ নবীকে (৭১) ভাবা হয় নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমানো প্রথম মুসলিম অভিবাসীদের একজন। ১৯৭৭ সালে তিনি নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান। তারও মৃত্যু হয় ক্রাইস্টচার্চ হামলায়।
সিরিয়া থেকে নিউজিল্যান্ডে আসেন খালেদ মোস্তফা। তার ১৬ বছরের ছেলে হামজাও এই হামলায় মারা যায়।
ওসামা আদনান আবু (৩৭) এসেছিলেন ফিলিস্তিন থেকে। নিউজিল্যান্ডে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি। এর মাঝেই হামলায় মৃত্যু হয় তার।
সন্ত্রাসী হামলায় মৃত মোজাম্মেল হক (৩০), তিনি বাংলাদেশ থেকে নিউজিল্যান্ড এসেছেন।
নাম তার মুসা ভালি সুলেমান প্যাটেল (৬০), এসেছিলেন ফিজি থেকে।
হুসাইন আল-উমারি (৩৫) ছিলেন আল-নূর মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি। ক্রাইস্টচার্চ হামলায় তারও মৃত্যু হয়।
মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ (৬৬) লেকচারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন লিংকন ইউনিভার্সিটিতে। কখনো কখনো ছিলেন আল-নূর মসজিদে ইমামের দায়িত্বে। তাকেও হত্যা করা হয়। তিনি এসেছেন বাংলাদেশ থেকে।
হামলাকারী ব্রেন্টন ট্যারেন্টের কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নিতে চেষ্টা করেছিলেন পাকিস্তানে অ্যাবেটাবাদ থেকে আসা নাঈম রাশিদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবার দোয়া ও প্রশংসায় ভেসেছেন তিনি। তবে আহত অবস্থায় হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। হামলায় মারা গেছে তার ছেলে তালহা।
তালহা নাঈম (২১), আল-নূর মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় সে ও তার বাবা নাঈম রশিদের মৃত্যু হয়েছে।
ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ডক্টর হারুন মাহমুদ।
আতা এলাইয়ানের (৩৩) জন্ম কুয়েতে। ক্রাইস্টচার্চের টেক ইনডাস্ট্রিতে তিনি অল্প কদিনে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। মসজিদে হামলায় তারও মৃত্যু হয়। পরিবারে এক সন্তান রেখে গিয়েছেন আতা।
সারাবাংলা/এনএইচ