Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উদ্যোক্তাদের সব দাবি পূরণের প্রত্যয় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর


১৮ মার্চ ২০১৯ ২১:০২

ঢাকা: নিজেদের দাবি-দাওয়া আদায়ে পাট খাতের উদ্যোক্তাদের আরও বেশি সরব হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।

উদ্যোক্তাদের জন্য নিজের দরজা খোলা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে বিরক্ত করবেন, আমি আপনাদের (উদ্যোক্তা) সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত। আপনারা মন্ত্রণালয়ে আসবেন। দাবি-দাওয়া নিয়ে আপনারা যত সরব থাকবেন, আমার জন্য তত ভালো হবে। আপনারা হৈ চৈ করলে সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায় আমার জন্য সহজ হবে।’

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৮ মার্চ) বিকেলে ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে ‘পাট শিল্পের উন্নয়নে এর বহুমুখীকরণ: সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এই সেমিনারের আয়োজন করে। চেম্বারের শীর্ষ নেতাসহ পাট শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।

পাটমন্ত্রী বলেন, বাজেটে যেন পাটের প্রতিটি সেক্টর উপকৃত হয়, সে লক্ষ্যে আমি চেষ্টা চালিয়ে যাব। পাটকে নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। পাটের উন্নয়নে সরকার সবকিছু করতে বদ্ধপরিকর।

বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক বর্জনের কারণে পাটের বাজার আবারও বড় হতে শুরু করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, পাটের ভবিষ্যত আছে। প্লাস্টিক বর্জনের কারণে বিশ্বব্যাপী বাজার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। যদি দ্রুত ওই মার্কেটে ঢুকতে না পারি, অন্যরা তাদের প্রাকৃতিক পণ্য দিয়ে ওই মার্কেট দখল করবে। এমন একদিন আসবে, কেউ আর কাঁচামাল রফতানি করবে না। আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারও ধরতে হবে।

‘প্লাস্টিক আসার পরই স্বর্ণ যুগ হারিয়ে ফেলতে থাকে পাট। আদমজী জুট মিল যদি বন্ধ হয়ে যেত, তাহলে দেশে পাট চাষও বন্ধ হয়ে যেত। মিলগুলোকে ভর্তুকি দেওয়া মানে পরোক্ষভাবে পাট চাষিকে ভর্তুকি দেওয়া,’- বলেন মন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

গোলাম দস্তগীর গাজী আরও বলেন, উদ্যোক্তাদের একটি বড় অংশ নারী। তাদের জন্য বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা চলছে। মতিঝিলে একটি বিক্রয়কেন্দ্র করা করা হবে। কেন্দ্রটি স্থাপন হলে সেখানে সারাবছর পাটপণ্যের মেলা করা যাবে। দেশের বিভিন্ন জেলায়ও পর্যায়েক্রমে এমন বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

ডিসিসিআই সভাপতি ওসামা তাসীরের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন সংগঠনটির পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না। এতে আরও বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মিজানুর রহমান, এসিআই অ্যাগ্রোবিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফ এইচ আনসারী, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) মহাপরিচালক ড. মো. আসাদুজ্জামান, জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারের (জেডিপিসি) নির্বাহী পরিচালক রীনা পারভীন, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের চেয়ারম্যান শাহ্ মোহাম্মদ নাছিমসহ অন্যরা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, পাটের মধ্যমেই কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ শুরু হয়। বর্তমানের পাটের যে ব্র্যান্ডিং ক্রাইসিস রয়েছে, তা দূর করতে হবে। পাটের চাহিদা তৈরি করতে হবে। পাল্প ও পেপার নিয়ে নীতি কাঠামো তৈরি করা দরকার। এর জন্য নতুন আইন তৈরি করতে হবে। প্রযুক্তি ও গবেষণার ক্ষেত্রে বাজেটে পাটের জন্য টোকেন বরাদ্দ হলেও রাখতে হবে।

ডিসিসিআই সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, পাটের বাজারকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং পাটের পাল্প থেকে ব্যাপক পরিসরে কাগজ উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে জুট পাল্প অ্যান্ড পেপার অ্যাক্ট প্রণয়ন জরুরি। বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনে সক্ষম একটি প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়ে তুলতে পারলে এই খাতের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। জুট জিও টেক্সটাইল দেশেই ৭১৬ কোটি টাকার বাজার তৈরি করতে পারে।

পাট খাতের উন্নয়নে দেশে ডিজাইন ইনস্টিটিউট স্থাপন, বিনিয়োগবন্ধব নীতিমালা ঘোষণা, পুরনো কারখানাগুলোর আধুনিকায়ন, ফেব্রিক উৎপাদনে স্পেশালাইজ জুট মিল স্থাপন, স্থানীয় বাজার সম্প্রসারণসহ বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন ডিসিসিআই পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না।

এফ এইচ আনসারী বলেন, দেশে উদ্ভাবিত পাটের জাত জনপ্রিয় হতে ১০ থেকে ১৫ বছর লেগে যায়। ততদিন ওই প্রযুক্তি পুরনো হয়ে যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরকে এ ক্ষেত্রে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

রীনা পারভীন বলেন, চারকোলে কিভাবে ভ্যালু অ্যাড করা যায় সে ব্যাপারে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটকে গবেষণা করতে হবে। পাটকে বিশেষ খাত হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে।

শাহ্ মোহাম্মদ নাছিম বলেন, ভিসকস উৎপাদন যদি শুরু করতে পারি, চূড়ান্ত ফলাফলে ইতিবাচক দেখতে পায়, তাহলে পাটের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে উদ্যোক্তার বিভন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে বলেন, বহুমুখী পাটপণ্যের ক্ষেত্রে উপকরণই প্রধান সমস্যা। এর প্রাপ্তি যেমন কম, তেমনি দামও বেশি। উদ্যোক্তার জন্য নেই কোনো ইটিপি। যদি সরকারি কোনো ইটিপি থাকত, তাহলে সেখান থেকে কালার করে নেওয়া যেত। কেবলমাত্র অফিস টাইমে সেলস সেন্টার খোলা রাখায় প্রতিবন্ধকতার কথাও তুলে ধরেন উদ্যোক্তারা।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর