নজরুল হত্যা মামলায় ১৫ জনের ফাঁসি
২০ মার্চ ২০১৯ ১২:৫৩
ঢাকা: দোহারে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে কাপড় ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম হত্যা মামলায় ১৫ জনের ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত। এছাড়া এ মামলায় আরও দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২০ মার্চ) প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক প্রদীপ কুমার এ রায় দেন। এসময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫ আসামিকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন তিনি। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত দুই নারীকেও ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— সিরাজ ওরফে সেরু কারিগর, মিনহাজ ওরফে মিনু, মো. খলিল কারিগর, দিদার (পলাতক), এরশাদ (পলাতক), কালু ওরফে কুটি কারিগর, আজাহার কারিগর, মিয়াজ উদ্দিন, মোজাম্মেল ওরফে সুজা, আ. জলিল কারিগর (পলাতক), জালাল, বিল্লাল, ইব্রাহিম (পলাতক) ও আ. লতিফ। এছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন— চায়না বেগম ও মজিদল ওরফে মাজেদা। পলাতক দিদার, এরশাদ, জলিল ও ইব্রাহিম ছাড়া বাকি ১৫ জনকে রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির করা হয়।
আদালত পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও সাজা পরোয়ানা ইস্যুর আদেশ দেন। রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়।
রায় ঘোষণার আগে বিচারক বলেন, জমি-জমা নিয়ে বিরোধের কারণে নজরুল ইসলামকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার প্রত্যক্ষদর্শীরা জবানবন্দি দেওয়ার সময় বলেন, বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আসামিরা তাকে হত্যা করে। যখন তাকে হত্যা করা হচ্ছিল, সেই সময় তার স্ত্রী ও মা ঠেকাতে এলে তাদেরও আঘাত করে আসামিরা। হত্যা করার সময় আসামিদের হাতে কী কী অস্ত্র ছিল, তা সাক্ষীরা উল্লেখ করেন। এরপর বিচারক মূল রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী ডা. নাজিম উদ্দিন আহম্মেদ। তবে রায় ঘোষণার পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সংক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, এ রায় সঠিকভাবে হয়নি। আমরা সঠিক বিচার পাইনি। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানান তারা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৮ সালের ৩ এপ্রিল সকালে ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার মামা মামলার বাদী ডা. নাজিম উদ্দিন আহম্মেদের মোবাইল ফোনে কথা হয়। সে সময় তারা মামলার বিষয়ে কথা বলছিলেন। কথা বলার একপর্যায়ে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এর ১৫ মিনিট পরে নাজিম উদ্দিনের বড় বোন চন্দ্রবান ফোন দিয়ে তাকে জানান, নজরুল ও তার স্ত্রী-পুত্রকে মারধর করেছে আসামি সিরাজ। তাৎক্ষণিকভাবে নজরুলকে প্রথমে জয়পাড়া হাসপাতালে ও পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পথে নজরুল তার মামাকে জানান, আসামিরা তাকে লোহার রড, লাঠি, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত হয়েছে। তার স্ত্রী সূর্যবানুকেও মারধর করা হয়েছে বলে জানান নজরুল। ঢামেক হাসপাতালে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নজরুলকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনায় দিনই ডা. নাজিম উদ্দিন আহম্মেদ দোহার থানায় ১৫ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে একই বছরের ২৬ জুলাই জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এসআই আনোয়ারুল করিম এজাহারে উল্লেখ ১৫ আসামিসহ ইব্রাহিম, লতিফ ও চায়না বেগমকে সম্পূরক আসামি করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলার বিচার চলাকালে ফৈমুদ্দিন নামে এক আসামি মারা যান। তাকে বাদ দিয়ে চূড়ান্ত আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭ জনে।
এদিকে, চার্জশিটে বিভিন্ন ত্রুটি পরিলক্ষিত হওয়ায় ফের তদন্ত করে ৪ আগস্ট সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়। পরের বছর ২৫ মে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। মামলাটিতে আদালত ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন কাজী শাহানারা ইয়াসমিন।
সারাবাংলা/এআই/জেএএম