সেরা বসন্ত নিয়েই আবরারের বিদায়
২১ মার্চ ২০১৯ ০২:৪৭
ঢাকা: চোখে চশমা, কাঁধে ব্যাগ। হলুদ পাঞ্জাবি পরা আববারের হাতে হলুদ-বেগুনি রঙের মিশেলের ঘুড়ি। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নিজের ফেসবুক ওয়ালে এ ছবি পোস্ট করে আবরার লিখেছিলেন, ‘সেরা বসন্ত’। কেবল এই ছবিই নয়, ‘সেরা বসন্ত’ ক্যাপশন দিয়ে ওই পোস্টে তিনি আরও ছয়টি ছবি যোগ করেছিলেন। তাতে আরেকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হলুদ গাঁদা ফুলের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন হাসিমুখে আবরার। তার ওই পোস্টে এখন কেবলি মাতম। মেহেদী হাসান নামের এক বন্ধু আবরারের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘সেরা বসন্ত নিয়েই তুমি বিদায় নিলে, ওপারে ভালো থেকো’।
সামি আহমেদ নামের আরেক বন্ধু লিখেছেন, কেউ ভাবেনি এটাই জীবনের শেষ বসন্ত! ওপারে ভালো থেকো।
আর্জুমান্দ আরা বকুল নামের একজন অভিভাবক লিখেছেন, ‘সেরা বসন্ত-ই শেষ বসন্ত। আহারে সোনা বাচ্চা, এভাবেই চলে গেলি? ওপারে শান্তিতে থাকিস।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল ৭টার দিকে জেব্র ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় বসুন্ধরা গেট এলাকায় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বিইউপি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। এ খবর জানার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
রাজধানীর প্রধান একটি সড়কে বাস চাপায় নিহত আবরার গত জুলাই মাসে দেশজুড়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনকে সমর্থন করে গত ২ আগস্ট নিজের একটি ছবির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন নিরাপদ সড়ক চাই। কেবল তাই নয়, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় নিজেও প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছিলেন অন্য সবার সঙ্গে। আর তাতে লেখা ছিল, ‘হ্যালো হানি-বানি, চলো আইন মানি’।
আবরারের বন্ধুরা বলছেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে সমর্থন করলেন যিনি, তিনি নিজেই কিনা মারা গেলেন সড়কে বাসের চাপায়! মাহিন নামে আবরারের এক বন্ধু বলেন, ‘গত জুলাই মাসে নিরাপদ সড়ক করার যে আশ্বাস আমাদের দেওয়া হয়েছিল, তা যদি বাস্তবায়ন করা হতো, তাহলে আবরার এভাবে বাসের চাপায় মারা যেতেন না।’
আবরারের মৃত্যুতে আটদফা দাবি নিয়ে আবারও রাস্তায় নেমেছেন তার বন্ধুরা, পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই সময় তারা রাস্তা অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। তাদের স্লোগানের মধ্যে ছিল—‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আবিরের বুকে রক্ত কেন’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘ভাইয়ের বুকে রক্ত কেন’, ‘প্রশাসনের প্রহসন মানি না মানব না’, ‘জেগেছে রে জেগেছে ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ হোক’ ও ‘আমার ভাইয়ের বুকের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’।
এই প্রসঙ্গে বিইউপির শিক্ষার্থী মাশরুর রাব্বি ইনান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আটদফা দাবি দিয়েছি। দাবি না মানা পযর্ন্ত রাজপথ থেকে সরব না। সুন্দরভাবে আমাদের অবস্থান কমর্সূচি চলছে। সড়কে একের পর এক ঘটনা ঘটছে। কত মায়ের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হচ্ছে কিন্তু কারও টনক নড়ছে না। এভাবে চলতে পারে না।’
এদিকে, বুধবার (২০ মার্চ) আবরারকে চাপা দেওয়া বাসের চালক আসামি সিরাজুল ইসলামকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে তোলা হলে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে আবরারের বাবা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফ আহমেদ চৌধুরী গুলশান থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন।
এদিন সকালে বসুন্ধরা গেট এলাকায় যে স্থানটিতে বাসের চাপায় আবরার মারা যান, সেখানে তার নামে ফুটওভারব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
পরে বিকেলের দিকে প্রশাসনের সঙ্গে এক বৈঠকে অংশ নেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দল। এক সপ্তাহের জন্য নিরাপদ সড়কের আন্দোলন স্থগিতে সম্মত হয়ে এলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ তা মানতে নারাজ। দাবি বাস্তবায়নে নেওয়া পদক্ষেপ দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথেই থাকতে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। আন্দোলনে অনড়রা বলছেন, বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সকাল ১০টায় ফের তারা সড়ক অবরোধ করবেন।
** আবরারের আগে আরেক তরুণীকে ধাক্কা দেয় সুপ্রভাতের বাসটি!
সারাবাংলা/জেএ/এমএনএইচ