রামপুরা-কুড়িল সড়কে গণপরিবহন সংকট, যাত্রীদের দীর্ঘ অপেক্ষা
২১ মার্চ ২০১৯ ১৬:১১
ঢাকা: পল্টনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির ইন্টারভিউতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা রিজিয়া পারভীনের। দুপুর ১২টায় ইন্টারভিউ থাকায় ১১টার দিকে বাসা থেকে পল্টনের উদ্দেশে যাত্রা করে। বাস্তায় কোনো বাস না পেয়ে হেঁটে দুপুর একটার দিকে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় পৌঁছান। হাঁটছিলেন আর পিছে তাকাচ্ছিলেন যদি কোনো একটা গাড়ি পাওয়া যায়।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘উত্তর বাড্ডায় দুই ঘণ্টা বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাস না পেয়ে পেয়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছি। কারণ আর কোনো উপায় নেই। এখনো পড়াশুনা করছি আর চাকরি খুঁজছি। বেকার জীবনে রিকশায় আড়াইশ টাকা খরচ করে যাওয়া সম্ভব নয়। ভাবলাম বাস পেলে তো ২০ টাকায় চলে যেতে পারতাম। তাই এখনো হাঁটছি আর বাসের অপেক্ষা করছি। দেখি আরেকটু সামনে গিয়ে হয়তো পাবো। দুএকটি বাস হঠাৎ হঠাৎ আসলেও তাতে ওঠার কোনো সুযোগ নেই। যাত্রীতে ঠাঁসা।’
একই অবস্থা আমিনুল ইসলাম (৪৮) নামে অপর এক যাত্রীর। যাবেন সদরঘাট। বিকেল তিনটায় লঞ্চ। রাস্তায় বাস সংকট এমন ধারণা থেকেই সকাল দশটায় বের হলেন বাসা থেকে। কিন্তু তিন ঘণ্টা ধরেই রামপুরার বিটিভির সামনে বাসের অপেক্ষায় এদিক ওদিক হাঁটছিলেন।
পাঁয়চারি করার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, গত তিন ঘণ্টায় মনে হয় ১০টার মতো বাস চোখের সামনে দিয়ে গেছে। কিন্তু একটাও সদরঘাটের না। সবগুলো যাত্রাবাড়ি-পোস্তাগোলা ওদিকের। সেগুলোতেও ওঠার কোনো সুযোগ নেই। সবগুলো বাসই গেইট লক সার্ভিস। এই সুযগো রিকশা ভাড়াও বেড়ে গেছে। আগে রিকশায় দেড়শ টাকায় যাওয়া যেতো। এখন রিকশা ভাড়াও চারশ টাকা চায়।
গত ১৯ মার্চ সকাল ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাওয়ার পথে সদরঘাট-রামপুরা-গাজীপুরা রুটে চলাচল করা গণপরিবহন সুপ্রভাতের একটি বাসের চাপায় নিহত হয় বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। এ ঘটনায় ওই বাস সার্ভিস বন্ধের নির্দেশ দেয় ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
কুড়িল-রামপুরা-গুলিস্তান সড়কে প্রধান গণপরিবহণ হিসেবে পরিচিত সুপ্রভাত পরিবহনের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কুড়িল-মিরপুরগামী গণপরিবহন জাবালে নূর। এতে এসব সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিড়ম্বনায়। রামপুরা-সদরঘাট সড়কে সুপ্রভাত ছাড়া বাকি বিকল্প কোনো পরিবহন না থাকায় চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে নাকাল হচ্ছেন যাত্রীরা। গন্তব্যগামী যাত্রীরা বাধ্য হয়ে কেউ কেউ পায়ে হেঁটে কিংবা বাড়তি অর্থ ব্যয় করে রিকশা-সিএনজি করে যাতায়াত করছেন।
রামপুরা থানার দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. সাজ্জাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড় লেগে আছে। কিন্তু পর্যাপ্ত বাস নেই। তার ওপর সুপ্রভাত বাস তো পুরাই বন্ধ। এতে অনেকে পায়ে হেঁটেই চলে যাচ্ছে গন্তব্যে। এতে বেশি সমস্যার শিকার হচ্ছে মহিলা ওশিশু এবং স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। সঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারছে না, আবার কেউ কেউ অসুস্থ হওয়ায় প্রচণ্ড রোদে হাঁটতেও পারছে না। এটার সমাধান প্রয়োজন। এভাবে তো হয় না।’
এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্যাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে সুপ্রভাত পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ওই সড়কে বিকল্প কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে যাত্রীদের জন্য সেটি সরকারের বিবেচ্য বিষয়।’
জানতে চাইলে সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গঠিত টার্স্কফোর্স ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন’-এর প্রধান সমন্বয়ক ডিএনসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওই সড়কে যেহেতু সুপ্রভাত পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই এর বিকল্প কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা চলছে। গতকালকে আমাদের টাস্কফোর্সের চতুর্থ সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সমন্বয় আবুল কালাম আজাদও এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেজন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।’ এছাড়া তিনি বিআরটিএকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে নাগরিক সমস্যার দ্রুত সমাধানে তাদের কমিটি কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
সারাবাংলা/এসএইচ